Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কলম্বিয়া-ভেনেজুয়েলার মধ্যে কোনো যুদ্ধ তারা চায়নি

অপারেশন গিডিওন- শেষ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০২০, ১২:০৩ এএম

কিছু কিছু ভাষ্যকার অপারেশন গিডিওনের নাম দিয়েছেন ‘বে অব পিগলেটস’। অন্যরা একে স্রেফ ‘পাগলামি’ বা ‘উদ্ভট’ বলে বর্ণনা করেছেন। হাভিয়ের নিয়েতো, যিনি কীনা একজন সাবেক সৈনিক, কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন এরকম একটি উদ্ভট পরিকল্পনা, যেখানে মৃত্যু বা ধরা পড়ার সম্ভাবনা একেবারে নিশ্চিত? ‘ওরা হয়তো কিছু একটা করার চেষ্টা করে মরতে চেয়েছিল। ওরা যদি কলম্বিয়ায় থাকতো, সেখানে কোন কাজ পেত না, তাদের বাঁচার জন্য কোন টাকা ছিল না। কাজেই তাদের হয় কোন গেরিলা গোষ্ঠীতে যোগ দিতে হতো বা কোন মাদক পাচারকারীর দলে’, বলছেন তিনি। ‘এটা শুনতে পাগলামি মনে হবে। কিন্তু এরকম একটা হতাশাজনক পরিস্থিতিতে বেশিরভাগই হয়তো ভেবেছে আমি কলম্বিয়ায় এরকম কোন দলে যোগ দেয়ার চাইতে বরং ভেনেজুয়েলার জেল থাকবো।’ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্সেসের দুজন উচ্চ প্রশিক্ষিত সৈনিক কেন এই একই কাজ করবেন, যে দেশটি তাদের নয়, সেরকম একটি দেশ ‘মুক্ত’ করতে নৌকায় উঠবেন, সেটার ব্যাখ্যা কী? এরকম একটি বেপরোয়া অভিযানে এদেরকে যে লোক ঠেলে দিয়েছিল, সেই জর্ডান গাউড্রুর কী হলো? তেসরা মে অভিযান সম্পর্কে এক রেকর্ড করা ভিডিওতে জর্ডান গাউড্রু জানিয়েছিলেন, ভেনেজুয়েলা জুড়ে বিদ্রোহ শুরু হতে যাচ্ছে। অথচ তখন কিন্তু পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে তাদের অভিযান বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কিন্তু তারপরও এক ডিজিটাল টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে গিয়ে গাউড্রু দাবি করেন, তিনি ভেনেজুয়েলার স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট হুয়ান গুয়াইদোর প্রেসিডেনশিয়াল কমিশনের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিলেন এবং সেই চুক্তি এখনো বৈধ, হুয়ান গুয়াইদো নিজে এতে সই করেছেন। ‘আমার কাছে এর অডিও পর্যন্ত আছে- আমার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট গুয়াইদোর কথাবার্তার রেকর্ড আছে’, দাবি করেছিলেন তিনি। হুয়ান গুয়াইদো অবশ্য দাবি করেন রেকর্ড করা কথা তার নয় এবং তিনি কোনদিন জর্ডান গাউড্রুর সঙ্গে কথা বলেননি, বা চুক্তি করেননি। অপারেশন গিডিওন ব্যর্থ হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অবশ্য ভেনেজুয়েলার বিরোধীদল দাবি করলো এটা ছিল একটা ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’, অর্থাৎ বিরোধী দলকে দোষ দেয়ার জন্য নিকোলাস মাদুরোর সরকারই এই অভিযান সাজিয়েছে। তবে নিকোলাস মাদুরোর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হোর্হে আরিয়াজা বলেন, ‘এটা একটা কৌতুক। নিজেদের দায়িত্ব এড়ানোর একটা চাল। গত ২০ বছরে তারা যে কত কী করেছে- সব ধরনের আগ্রাসন, কিন্তু তারা কখনোই নিজেদের কাজের দায়িত্ব নেয় না। তারা সবসময় বলবে এটা সরকারের দোষ, এটা স্বৈরতন্ত্র, এটা স্বৈরাচারের কাজ।’ তাহলে এই ঢাল-তলোয়ারবিহীন বিদ্রোহীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল কে? আন্তনিও সেকুইকে নিয়ে অনেক গুজব ভেসে বেড়ায়। যিনি জেনারেল ক্লাইভার আলকালার পর অভিযানের নেতৃত্ব পান। তবে কলম্বিয়ায় নির্বাসিত এক এক বিদ্রোহী এ নিয়ে সন্দিহান। ‘আমরা জানি যে আন্তনিও সেকুইর সঙ্গে একসময় ভেনেজুয়েলার সরকারের ভালো সম্পর্ক ছিল। কাজেই তাকে সন্দেহ করা হয়। কিন্তু সেই অভিযানে প্রথম নৌকাতে থাকা তার চাচাতো ভাইও কিন্তু নিহত হয়েছিলেন। তিনি কি তার পরিবারের একজনকে উৎসর্গ করবেন? সেটা নিশ্চয়ই খুব খারাপ হবে।’ হোর্হে আরিয়াজাও একথা অস্বীকার করলেন যে আন্তনিও সেকুই মাদুরো সরকারের হয়ে কাজ করছিলেন। ‘এসব মিথ্যে কথা’, বলছেন তিনি। ‘এটা ভেনেজুয়েলার অনুচরদের কাজ নয়। এটা আসলে কলম্বিয়ার সামরিক বাহিনীর কিছু লোকের কাজ। তারা চায়নি কলম্বিয়া আর ভেনেজুয়েলার মধ্যে কোন যুদ্ধ হোক।’ ভেনেজুয়েলার রাজনীতি খুব জটিল। এখানে অর্থ দিয়ে আনুগত্য কেনা যায়। এই রাজনীতি খুবই সহিংস। এখানে রাজনীতিতে মেরুকরণ খুবই তীব্র। বিরোধী শিবিরের কিছু লোক মনে করে, এটা হতে পারে, জর্ডান গাউড্রু হয়তো নিকোলাস মাদুরোর সরকারের কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। তবে হোর্হে আরিয়াজা একথা শুনে বিরক্ত হলেন। ‘একজন মার্কিন ভাড়াটে সেনা, যাকে কিনা টাকা দেয়া হয়েছে মাদুরোকে খুন করার জন্য, তিনি কিভাবে আবার প্রেসিডেন্ট মাদুরোর সঙ্গে হাত মেলাবেন?’ অপারেশন গিডিওনের অনেক হিসেবই আসলে মিলে না। ৬০ বছর আগে বে অব পিগস অভিযান নিয়ে যেমন এখনো জল্পনার শেষ নেই, তেমনি এটি নিয়েও অনেক গল্প শোনা যাবে। জর্ডান গাউড্রুর কী হয়েছিল? তার খবর আর পাওয়া যায়নি। তার বিরুদ্ধে কোন তদন্ত চলছে কীনা- সেটা এফবিআই স্বীকার বা অস্বীকার, কোনটাই করছে না। সূত্র : বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গিডিওন- শেষ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ