Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানুষের সঞ্চয় কমেছে

টাকা ব্যাংকে নয়, নিজের কাছে রাখছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০২০, ১২:১১ এএম

করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত বিশ্ব। শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো পৃথিবীতে এক অজানা শঙ্কা ভর করে চলেছে। এই মহামারি কবে নাগাদ পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে সেটিও একরকম অনিশ্চিত। যদিও বাংলাদেশ অর্থনীতি সচলে অনেক আগেই সবকিছু স্বাভাবিক করেছে। তারপরও সব মিলিয়ে চরমভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের মানুষের জীবনমান, ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাপন। ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে মন্দাবস্থা। কাজ নেই, বেকার হচ্ছে অনেক মানুষ। আবার অনেকের কাজ আছে কিন্তু নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না। ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা সংসারের খরচ মেটাতেই এখন হিমশিম খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে টাকা ব্যাংকে না জমিয়ে তুলে ফেলছে মানুষ। আবার অনেকে মহামারিতে নিজের হাতে টাকা রাখতেই পছন্দ করছেন। এর ফলে গত ছয় মাসে ব্যাংকবহির্ভ‚ত জনগণের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা কাছাকাছি হয়ে গেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছে, করোনায় ব্যবসা-বাণিজ্যের মন্দা, আর্থিক সংকট, আমানতের সুদহার কম হওয়ায় মানুষের সঞ্চয় কমে গেছে। আবার যাদের অর্থ আছে তারাও নিজের হাতে টাকা রাখতেই পছন্দ করছেন। তবে এটা অর্থনীতির জন্য খুব ভালো নয়। ব্যাংকে টাকা না রাখলে আমানত কমে যায়। এতে করে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেয়ার সক্ষমতা কমে যায়। ফলে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়। কর্মসংস্থান কমে যায়। পাশাপাশি অর্থের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জুন পর্যন্ত ব্যাংকবহির্ভ‚ত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৯২ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা। যা আগের বছর একই সময় ছিল এক লাখ ৫৪ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ব্যাংকবহির্ভ‚ত টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৩৮ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর মধ্যে দেশে মহামারি করোনা প্রার্দুভাবের সময়ে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন এ তিন মাসেই বেড়েছে ১৯ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মানুষের এখন আয় রোজগার নেই। জমানো টাকা ভেঙে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকবে পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত। তবে এটা খুব শিগগিরই স্বাভাবিক হবে তা বলা যাচ্ছে না। এ কারণে মানুষ আপতকালীন সময়ে নগদ টাকা হাতে রাখছেন। এছাড়া ব্যাংকের সুদ হার অনেক কমানো হয়েছে। এখন ৫ থেকে ৬ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। বিভিন্ন চার্জ কাটার পর আরো এক শতাংশ কমে যাচ্ছে। এখন মূল্যস্ফীতি চেয়ে যদি সুদ কম হয় তাহলে ব্যাংকে টাকা রাখা লোকসান। তাই মানুষ লাভজনক বিনিয়োগ খুঁজছেন। সব মিলিয়ে ব্যাংকে অর্থ জমানোর প্রবণতা কমেছে।
এদিকে করোনার অর্থ সংকটে মানুষ ব্যাংকগুলোতে আমানত আগের চেয়ে কম রাখছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে চলতি বছরের জুন শেষে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৯৪ শতাংশ। কিন্তু গত ডিসেম্বরে ও এই প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১২ শতাংশের উপরে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৮১ হাজার ২৫ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৬ কোটি। সেই হিসেবে আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের আমানত ছিল ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। যা আগের বছরের (২০১৮) একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানুষ

২৭ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ