দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর : নিজের মালিকানা বাকি রেখে সহায় সম্পত্তি থেকে সবার উপকৃত হবার জন্য অথবা কোনো বিশেষ শ্রেণির উপকৃত হবার জন্য নির্ধারিত করে দেওয়া হয় যে সম্পদ, ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় এর নাম ওয়াকফ। যা বিক্রিও করা যায় না, পরিবর্তনও করা যায় না
ইসলামী বিধি-বিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখার নাম ওয়াকফ। মুসলমানদের সমাজজীবনের একটি উজ্জল দিক এটি। যুগে যুগে মুসলমানগণ এই কল্যাণমূলক সেক্টরটিকে প্রচলন দিয়েছে। ওয়াকফের রীতি বিভিন্নরূপে শুধুমাত্র মুসলমান দেশগুলোতে আছে এমনও নয়; বরং অগ্নিপূজক, ইহুদিবাদ, খ্রিস্টবাদসহ বিভিন্ন প্রাচীন ধর্মে কোনো না কোনোভাবে ওয়াকফের রীতি বিদ্যমান। তাই ওয়াকফ মানবের সফলতা ও কামিয়াবির একটি উত্তম মাধ্যম। ওয়াকফের অনেক গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। মানুষকে বিভিন্ন রাস্তা অবলম্বন করে সওয়াব অর্জন করার প্রতিযোগিতার প্রতি করেছে উদ্ধুদ্ধ। তাই ওয়াকফ হলো সহিহ দ্বীনের মাধ্যমে দেশ ও দশের সেবার একটি অন্যতম রাস্তা। এর মাধ্যমে সমাজ মুক্ত হতে পারে হিংসা-বিদ্বেষ, চুরি, লুণ্ঠণসহ জঘণ্য অপরাধ প্রবণতা থেকে। অসহায় মানুষের অভাবের কারণে যে অপরাধগুলো সংঘটিত হতো হবে না সেগুলো আর। বড় বড় প্রয়োজন পুরা হয় ওয়াকফের মাধ্যমে। অভাবী মানুষ পায় আশা। চরিত্র ও আমলের অধপতন থেকে রক্ষা পায় সমাজ। ওয়াকফ সমাজ রক্ষার জন্য। সমাজের মানুষের জন্য। হিংসা-বিদ্বেষ থেকে রক্ষার জন্য। ওয়াকফ জাকাতের মতো নয় যে, তা তাকেই দিতেই হবে, না দিয়ে উপায় নেই। বরং এমন কল্যাণমূলক কাজে নিজের আগ্রহ থেকেই ব্যয় দেওয়া হয়। এতে করে প্রয়োজনগ্রস্থ মানুষ উপকৃত হয়। উপকৃত হয় দরিদ্র অসহায়, জ্ঞান-বিদ্যা শিক্ষার্থী, বিধবা, এতিম এবং মুসাফির মানুষগুলো। তাদের উপকারের জন্য মসজিদ-মাদরাসা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ নির্মাণ করা, কূপ খনন করা, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া। এ সবগুলোই ওয়াকফ। ইসলামে সর্বপ্রথম ওয়াকফের রীতি চালু করেছেন আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি সাতটি বাগান ওয়াকফ করেছেন। এটাই ছিল ইসলামের প্রথম কল্যাণমূলক ওয়াকফ। দ্বিতীয় পর্যায়ে ওয়াকফ করেছেন দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)। তিনি গরিব-অসহায় মুসলমানদের জন্য একটি জমি ওয়াকফ করেছেন। হজরত ওসমান (রা.)ও রোমা নামে একটি কূপ খরিদ করে মানুষের পানি পান করার জন্য ওয়াকফ করে দেন। আল্লাহর রাসূল (সা.) ওয়াকফের এই নীতিকে বহাল রাখেন। সমর্থন যোগান। উৎসাহ দেন। এমনকি সরাসরি তিনি ওয়াকফের কাজে সমন্বয় করেন। মুসলমানদের সম্পদ দিয়ে নির্মাণ করেন তিনি পবিত্র কোবা মসজিদ। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসূলের সাহাবীদের মধ্যে যাদেরই আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল ছিল তারা সবাই ওয়াকফ-কল্যাণমূক কাজে খুব বেশি অংশগ্রহণ করেছেন।
পরবর্তীতে সাহাবায়ে কেরাম নবীজির জমানাতে বেশ কিছু ওয়াকফ করেছেন। নবীজির সামনে যখন কোনো সামাজিক সমস্যা উত্থাপন হতো তখন তিনি সাহাবাদেরকে উৎসাহ দিতেন। সাহাবায়ে কেরাম তৎক্ষণাৎ সেটা দিয়ে দিতেন। ইসলামের সম্পদবণ্টণ নীতিমালায় ওয়াকফ একটি মৌলিক বিষয়। ইসলামের সব যুগেই গরিব-অসহায় মানুষদের প্রয়োজন পুরা করা, তাদেরকে জীবন-যাপনে কেয়ার টেকার বানানো, মুসলমানদেরকে বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞানে পারদর্শী করা, অসুস্থ পেরেশান মানুষের প্রয়োজন সমাধা করা এবং যোগ্যতা ও মর্যাদায় পুণ্যবান ব্যক্তিদের দায়িত্বে ইসলামী ওয়াকফের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিধি-বিধান রয়েছে। ফিকহের (ইসলামী আইন শাস্ত্র) গ্রন্থগুলোতে এর বিস্তারিত বিধি-বিধান রয়েছে।
মানুষের স্থিরতা, মরেও মরবে না এমন নেক মাকসাদ অর্জনের জন্য উত্তম পন্থা হলো ওয়াকফ। এই জন্য এই নেক আমলটি ঈমান ও ইখলাসের সাথে হওয়া উচিত। মানুষের সফলতা ও কামিয়াবি এবং দ্বীন ও ধর্মীয় বিষয়ের উন্নতির জন্য সবচেয়ে পছন্দনীয় ধনসম্পত্তির একটি বিশেষ অংশ খোদার রাস্তায় ওয়াকফ করে সর্বদার জন্য মানুষের হৃদয়ে জীবিত থাকার সৌভাগ্য অর্জন করা যায়। সামাজিক দিক থেকে ওয়াকফের উৎকৃষ্ট খাত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি করা, তাদের প্রয়োজন পূর্ণ করা, ইসলাম বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে অর্থনৈতিক ও আর্থিক সহায়তা করা। ওয়াকফ শুধুমাত্র একটি সামগ্রিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের শিরোনামে ইসলামী সমাজের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করে এমন নয়; বরং সামগ্রিক জটিল ও কঠিন সামাজিক বিষয়াবলিতেও ওয়াকফেল গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের জন্য শান্তি, নিরাপত্তার আশ্রয়স্থল এবং তাৎপর্যপূর্ণ সহায়তা গণ্য করা হয় একে। হাদিসের গ্রন্থগুলোর অসংখ্য বর্ণনায় ওয়াকফকে সদকা বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ওমর (রা.) খায়বরে একখন্ড জমি পান। তখন তিনি নবী (সা.) এর নিকট এসে বলেন, আমি এমন এক খন্ড জমি পেয়েছি, যা থেকে উত্তম কোনো মাল ইতোপূর্বে আর পাইনি। আপনি এ ব্যাপারে আমাকে কি নির্দেশ দেন? তিনি (সা.) বলেন, যদি তুমি চাও, তবে আসল জমিটা রেখে দাও এবং এ থেকে উৎপন্ন ফসল দান করে দাও। তখন ওমর (রা.) তা থেকে উৎপন্ন ফসল দান করতে থাকেন এবং তিনি এরূপ সীদ্ধান্ত নেন যে, আসল জমি বিক্রি করবেন না, হিবা বা দানও করবেন না এবং উত্তরাধিকারীদেরও দেবেন না; বরং তা থেকে ফকির, নিকটাত্মীয়, গোলাম, মিসকিন এবং মুসাফিররা আল্লাহর ওয়াস্তে উপকৃত হতে থাকবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৮৭৮) আল্লাহপাক আমাদের স্বচ্ছলদেরকে এই মোবারক আমলটি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
উত্তর দিচ্ছেন : মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।