মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গত ৩ মে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকার ঘোষণা করলো, তাদের সামরিক বাহিনী একটি সশস্ত্র আগ্রাসন প্রতিহত করেছে। অপারেশন গিডিওন নামের এ আক্রমণ ছিল সরকার উৎখাতের খুব আনাড়ি এক প্রচেষ্টা। শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল এটি আসলে ব্যর্থ হতে চলেছে, এ অভিযানে যাওয়া মানে অনেকটা আত্মহত্যার সামিল। কিন্তু তারপরও কেন ভেনেজুয়েলার নির্বাসিত কিছু লোক এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্সেসের সাবেক কিছু সৈন্য এরকম এক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল? বিবিসির লিন্ডা প্রেসলির ৬ পর্বের প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্ব প্রকাশিত হ’ল ঃ
বিগত শতকে লাতিন আমেরিকার দেশে দেশে রাষ্ট্রনায়কদের হত্যা, অপহরণের নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। গত মে মাসের ঘটনা যেন অবিকল সেরকমই আরেক ষড়যন্ত্র। ১৯৬১ সালে কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সরকারকে উৎখাতের জন্য যে ব্যর্থ অভিযান চালানো হয়, সেটি ‘বে অব পিগস অভিযান’ নামে পরিচিত। পুরোপুরি মার্কিন অর্থ সহায়তায় এবং মদদে সেই অভিযানটি চালানো হয়েছিল। একজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন, গত মে মাসে অপারেশন গিডিওন নামের অভিযানটি এতটাই কাঁচা ছিল যে, তার তুলনায় কিউবায় বে অপ পিগস অপারেশনকে মনে হবে যেন ‘ডি ডে অভিযান’ (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের বাহিনীর বিরুদ্ধে মিত্র বাহিনীর সম্মিলিত আচমকা আক্রমণের অংশ হিসেবে হাজার হাজার সৈন্যের ফ্রান্সের নর্মান্ডি উপকূলে অবতরণ)।
অপারেশন গিডিওন হচ্ছে ঔদ্ধত্য, আনাড়িপনা আর বিশ্বাসঘাতকতার এক বিস্ময়কর কাহিনী। ভেনেজুয়েলার সশস্ত্র বাহিনী উপকূলীয় শহর মাকাটোতে আট জনকে গুলি করে হত্যা করে। আটক করে আরও কয়েক ডজন লোক। এরা এখন কারাকাসে জেলখানায় বন্দি। অল্প কজন পালিয়ে যেতে পেরেছিল। তখন সারা পৃথিবী ব্যস্ত ছিল করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে। তাই এ ঘটনা যতটা গুরুত্ব পাওয়ার কথা ছিল, গণমাধ্যমের ততটা মনোযোগ পায়নি লাতিন আমেরিকার বাইরে। এ ব্যর্থ অভিযানের কেন্দ্রে ছিলেন মার্কিন স্পেশাল ফোর্সেসের এক সাবেক সৈনিক জর্ডান গাউড্রু।
জর্ডান গাউড্রু তিনবার ব্রোঞ্জ পদকজয়ী মার্কিন সেনা। যুদ্ধ করেছেন আফগানিস্তান এবং ইরাকে। দক্ষ শ্যুটার। একই সঙ্গে প্রাথমিক জরুরি চিকিৎসা দেয়ার প্রশিক্ষণও তার আছে।
অপারেশন গিডিওন শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রকাশ করা এক ভিডিওতে তাকে গর্বের সঙ্গে বলতে শোনা যায়, ‘কলম্বিয়ার সীমান্ত থেকে আমরা এক দুঃসাহসিক উভচর অভিযান শুরু করেছি। আমাদের লোকজন ক্রমাগত লড়াই করে চলেছে। ভেনেজুয়েলার দক্ষিণ, পশ্চিম এবং পূর্বে আমাদের ইউনিটগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে।’
এ দাবির মধ্যে কোন সত্যতা ছিল না। ভেনেজুয়েলায় তাদের কিছু সমর্থককে হয়তো আভাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের এ অভিযানে আসলে ছিল ষাট জনেরও কম পুরুষ আর একজন মাত্র নারী। তাদের অস্ত্রশস্ত্র ছিল খুবই কম। আর যখন এ দাবি তিনি করছেন, ততক্ষণে তাদের অভিযানে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে, শুরু হয়ে গেছে রক্তারক্তি।
জর্ডান গাউড্রু ২০১৮ সালে ‘সিলভারকর্প ইউএসএ’ নামে একটি বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানি গড়ে তোলেন। এটির ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গেলে দেখা যায় দুর্ধর্ষ সব সামরিক তৎপরতার ছবি। রানিং মেশিনের ওপর জর্ডান গাউড্রুর দৌড়ানোর ছবিও সেখানে আছে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার কোম্পানিটিকে একটি কনসার্টের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এ কনসার্টটি হচ্ছিল কলম্বিয়ার ভেনেজুয়েলা সীমান্তে। কনসার্টটির স্পন্সর ছিল রিচার্ড ব্র্যানসন। ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি তখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। দেশটিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। খাদ্য সঙ্কটে মানুষ দিশেহারা। মৌলিক সেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে কলম্বিয়া চলে যাচ্ছে। কনসার্টটির উদ্দেশ্য ছিল ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের ওপর চাপ তৈরি করা, যাতে সেদেশে মানবিক ত্রাণ পাঠানো যায়।
জর্ডান গাউড্রু তখন তার কোম্পানির ইনস্টাগ্রাম একাউন্টে একটি ভিডিও আপলোড করে লেখেন, ‘ভেনেজুয়েলার সীমান্তে আমরা বিশৃঙ্খলা সামাল দিচ্ছি যখন কীনা এক স্বৈরশাসক শঙ্কা নিয়ে তাকিয়ে আছে।’ স্বৈরশাসক বলতে এখানে তিনি ইঙ্গিত করছিলেন নিকোলাস মাদুরোকে। ভেনেজুয়েলার বহুধা বিভক্ত বিরোধী রাজনৈতিক শিবির তখন এক ভালো সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।