ভারতের সাথে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশীদের সম্পর্ক অবনতি হওয়ার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইসলামাবাদ ও ঢাকার কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বস্তুত, সাম্প্রতিক কিছু কূটনৈতিক ঘটনা দীর্ঘ দিন ধরে জটিলতায় থাকা পাকিস্তান-বাংলাদেশ সমীকরণ সহজ করে দিতে পারে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
ইমরান খান চলতি মাসের প্রথম দিকে বিরল এক টেলিফোনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনাকে ইসলামাবাদ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। -সাউথ এশিয়ান মনিটর, আরব নিউজ
ফোনালাপের মাত্র কিছু দিন আগে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাই কমিশনার ইমরান আহমদ সিদ্দিকি ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের মধ্যে একটি নীরব সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর আর কখনো স্বাভাবিক হয়নি। ওই যুদ্ধের মাধ্যমেই ভারতের সহায়তায় পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরো অবনতি হয় ২০১৬ সালে। ওই সময় বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের জন্য জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন নেতার ফাঁসি কার্যকর করে। পাকিস্তান একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে অভিহিত করে।তবে এখন উভয় পক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, সম্পর্ক পুনঃবিন্যাসের সময় এখন। বৃহস্পতিবার পাকিস্তান পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র আয়েশা ফারুকি আরব নিউজকে বলেন, দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কিভাবে ইতিবাচক দিকে অগ্রসর হতে পারে সেজন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে টেকসই সংলাপ চাচ্ছি। আমরা একসাথে কাজ করতে চাই। আমরা বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক ও পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যেকোনো বিষয়ে আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে চাই। রাষ্ট্রদূত সিদ্দিকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সাথে তার বৈঠকের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করতে অস্বীকার করেছেন। তবে আরব নিউজকে তিনি বলেন, লক্ষ্য হলো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ইতিবাচক দিকে এগিয়ে নেয়া।
পাকিস্তানে বাংলাদেশের হাই কমিশনার-ডেজিগনেট মোহাম্মদ রুহুল আলম সিদ্দিকি বলেন, তরুণতর প্রজন্ম অর্থপূর্ণ সম্পর্কের ব্যাপারে খুবই আগ্রহী। দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনিও বলেন, তিনি তার মেয়াদে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানে দায়িত্ব পালনের সময় আমার একমাত্র মিশন হবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক যতটা সম্ভব ভালো করা। তিনি বলেন, আগামী দিনগুলোতে তার প্রধান দায়িত্ব হবে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা দূর করা। পাকিস্তান স্টেট ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানের রফতানি দাঁড়িয়েছে ৭৩৬ মিলিয়ন ডলার, আর পাকিস্তানে বাংলাদেশের রফতানি মাত্র ৪৪ মিলিয়ন ডলার। এই অঞ্চলে ভারত ও অন্য কয়েকটি দেশের মধ্যকার সম্পর্কে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হওয়ার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।
গত মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় চীনা সৈন্যদের সাথে হাতাহাতি লড়াইয়ে তাদের অন্তত ২০ সৈন্য মারা গেছে। ভারতের সাথে নেপালের সম্পর্কেও টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়েছে। এখানেও সীমান্ত বিরোধ রয়েছে। পাকিস্তানের সাথেও ভারতের সম্পর্ক খুবই উত্তেজনাকর অবস্থায় রয়েছে। ফারুকি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি ভারতের সাথে চীনের, নেপালের ও বাংলাদেশের সম্পর্কে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তানের সাথে বিরোধ তো আছেই। এসব ঘটনা এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে ভারতকে কার্যকর অবস্থায় রাখবে না।
তবে আরব নিউজের এক ইমেইলের জবাবে ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার বিপুল দেব
শেখ হাসিনাকে
ইমরান খানের টেলিফোন করা নিয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া বক্তব্যই তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও ঐতিহাসিক। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার টেকসই সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসলামাবাদকে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করার জন্য প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক দেলওয়ার হোসাইন বলেন, সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব এখন পাকিস্তানের। ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক হাই কমিশনার আবদুল বাসিত বলেন, এখন
ইমরান খানের উচিত হবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার টেলিফোনের ‘ফলো-আপ’ করা।