Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশ্ন : অধিনস্তদের ওপর সদয় হওয়ার শিক্ষা কি দেয় ইসলাম?

| প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০২০, ১২:০৩ এএম

উত্তর : বৈচিত্রময় এ পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে বিভিন্নভাবে সৃষ্টি করেছেন। কাউকে ধনবান বানিয়েছেন, আবার কাউকে করেছেন একদম নি:স্ব। একেকজনকে একেক রুচি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এভাবে সৃষ্টি করার মূল হেতু মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অধিক ভালো জানেন। তবে ধনি গরীবের বিভেদ এজন্য করেন নি যে, সে তার সম্পদ দ্বারা অহংকার প্রদর্শন করবে। আবার গরিব এ জন্য বানাননি যে আল্লাহর অভিযোগের প্রতি আঙ্গুল উঠাবে। বরং ধনাঢ্য ব্যক্তি তার এ সম্পদ দ্বারা কি করে, আর অসহায় ব্যাক্তিটি কি পরিমান ধৈর্যধারণ করে সে বিষয় যাচাই করার জন্য। আর্থাৎ ধনীর জন্য আল্লাহর নির্দেশ পালন ও মানুষের অধিকার আদায়ের পরীক্ষা আর গরিবের জন্য সবরের পরীক্ষা। মহান আল্লাহ তাআলা সূরা যুখরুফের ৩২ নম্বর আয়াতে বলেন: তারা কি তোমার পালনকর্তার অনুগ্রহ বণ্টন করে?( না, বরং) আমিই তাদের মধ্যে রিজিক বণ্টন করি পার্থিব জীবনে এবং তাদের একজনের মর্যাদা অপরজনের ওপরে উন্নত করেছি, যেন তারা একে অন্যকে সেবক রূপে গ্রহণ করতে পারে।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন: ইরশাদ হয়েছে, তুমি তোমার চক্ষুদ্বয় কখনো প্রসারিত কোরো না তার প্রতি, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি এর মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা করার জন্য। তোমার রবের রিজিক উতকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী। (সুরা : ত্বহা : ১৩১) তাই রিজিকের এই হ্রাস-বৃদ্ধি বান্দার জন্য পরীক্ষাস্বরূপ।

তা ছাড়া দুনিয়ার জীবনকে সুন্দরভাবে সম্পাদন করতে হলে সব শ্রেণী পেশার মানুষের প্রয়োজন রয়েছে। সবাই একে অপরের প্রতি মুখাপেক্ষি। কেউ এ দাবী করতে পারবেনা আমি সয়ংসম্পূর্ণ।

কিন্তু অফসোসের বিষয় এই শ্রেণী বিভেদকে কাজে লাগিয়ে একে অন্যের প্রতি জুলুমের স্টিম রোলার চালায়। একটু মনের বিপরিত হলেই তার উপর নেমে আসে নির্যাতনের যাঁতাকল। আমার রাসূল ছিলেন উত্তম চরিত্রের সর্বোচ্চ অসনে অধিষ্ঠিত । তাঁকে প্রেরণ করা হয়েছে মহান চরিত্র দিয়ে। কারো প্রতি তিনি কোন বিদ্বেষ রাখতেন না। ভুল হলে পরম যত্নের সাথে বুঝিয়ে দিতেন প্রিয় সাহাবীকে। এক হাদীসে এসেছে তিনি তার প্রিয় সাহাবী হযরত আনাস বিন মালিক রা. কে বলেছেন, হে আমার বৎস! তোমার পক্ষে যদি সম্ভব হয় তুমি সকাল সন্ধ্যা এমন অবস্থায় অতিবাহিত করবে যে, তোমার অন্তরে কারো প্রতি বিদ্বেষ নেই, তাহলে তাই কর। কারণ এটি আমার সুন্নাহ। আর যে আমার সুন্নাহকে যিন্দা করে সে আমাকে ভালবাসে। যে আমাকে ভালবাসে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। (তিরমিযী : ২৬৭৮)

আপনি আপনার অধীনস্ত ব্যক্তির সাথে এমন আচরণ করুন যে আচরণ করলে আপনি খুশি হতেন।

সহীহ মুসলিমে একটি হাদীস আছে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন ‘যে চায় তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করা হোক এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক তার মৃত্যু যেন এমন অবস্থায় আসে যে, সে আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে। আর মানুষের সাথে তেমন আচরণ করে যেমন আচরণ পেতে সে পসন্দ করে। (সহীহ মুসলীম, হাদীস :১৮৪৪) এক কথায় রাসূল সা: চমৎকার মূলনীতি বলে দিয়েছেন। মানুষের সাথে সুন্দর আচরণের যত পদ্ধতি হতে পারে এবং যত রূপ হতে পারে, তেমনি অসুন্দরের যত ক্ষেত্র ও রূপ হতে পারে সবকিছু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই ছোট্ট একটি কথায় আমাদের বাতলে দিয়েছেন। কোন ক্ষেত্রে কি আচরণ করবে এর জন্য এর চেয়ে সহজ কোন মূলনীতি (যা সকলেই মনে রাখতে পারে) হতে পারেনা। তাই এই চোট্ট এক বাক্যে রাসূল আমাদের জন্য উপহার দিয়েছেন।

রাসুলুল্লাহ সা. অধীনস্থদের নিজেদের ভাই হিসেবে উল্লেখ করে তাদের অধিকারের ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদের উপর অতিরিক্ত কাজের বোঝা চাপিয়ে দিতেও নিষেধ করেছেন। অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, মারূর ইবনু সুওয়াদা রহ. বলেন, একবার আমি আবূ যর গিফারী রা. এর দেখা পেলাম। তার গায়ে তখন এক জোড়া কাপড় আর তার ক্রীতদাসের গায়েও(অনুরূপ) এক জোড়া কাপড় ছিল। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, একবার এক ব্যক্তিকে আমি গালি দিয়েছিলাম। সে নবী সা. এর কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করল। তখন নাবী সা. আমাকে বললেন, তুমি তার মার প্রতি কটাক্ষ করে লজ্জা দিলে ? তারপর তিনি বললেন: তোমাদের গোলামেরা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করেছেন, কাজেই কারো ভাই যদি তার অধীনে থাকে তবে সে যা খায়, তা হতে যেন তাকে খেতে দেয় এবং সে যা পরিধান করে, তা হতে যেন পরিধান করায় এবং তাদের সাধ্যাতীত কোন কাজে বাধ্য না করে। তোমরা যদি তাদের শক্তির ঊর্ধ্বে কোন কাজ তাদের দাও তবে তাদের সহযোগিতা কর।(বুখারী, ৬০৫০)
উত্তর দিচ্ছেন : মুফতি জাওয়াদ তাহের



 

Show all comments
  • শাকিল ১৪ আগস্ট, ২০২০, ৭:৪৭ পিএম says : 0
    খুব ভাল লাগলো।।।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ