বিভিন্ন ধর্মে কোরবানি
পবিত্র ঈদুল আজহা। আমাদের দেশে কোরবানির ঈদ নামে পরিচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটা বিভিন্ন নামে
আমার ধলেশ্বরী
জাহানারা আরজু
আমার রহমান স্রোতধারায় অস্তিত্বের মর্মমূল নিয়ত ঢেউ তোলে ধলেশ্বরী-আমার ধলেশ্বরী সকলের সোনারোদে, সোনালী জলপরী হয়ে নাচে, হাজারো ঝাড়বাতি জ্বলে ঢেউয়ের মাথায় মাথায়। ওই তো ওখানেই পাড় ঘেঁষে ছিল আমার জন্মলগ্নে ছনের কুটির-বাঁশঝাড়-আম-জাম-ছায়াবীথি ছোট গ্রাম যেখানে টুকরো টুকরো, স্বপ্ন দিয়ে নকশীকাঁথায় .... করা আমার সোনালী শৈশব।
আমার শৈশব তো ওখানেই একদিন প্রথম দেখেছিল গর্বিত পাল তোলা নৌকার সারি-জারি-ভাটিয়ালী-মুর্শিদী দেখেছিল পুথির পাতা থেকে সুরে সুরে উঠে আসা মেয়র হামজা, হাতেমতাই। দেখেছিল জেলে ডিঙ্গি বেদের বহর কেমন করে .... করে .... ঢেউয়ের মাথায় মাথায়। দেখেছিল গুণ টানা ..... শ্রমকান্ত সবল পেশী, আবলুস কাঠের মতো শরীরটায় জমে ওঠা চিকচিকে লবণ- দেখেছিল ফুলে কেপে ফুঁসে ওঠা ভয়াল ধলেশ্বরী বদর বদর ধ্বনি দিয়ে পাড়ি জমায় পরম বিশ্বাসী মাঝিমাল্লার দল-
বুকের পাটায় খোদিত আল্লাহ রাসুল নামের।
দেখেছে পার ভাঙা চর ডাঙা-চর
দেখেছে লাঠিয়াল, ঘুঘু .... নিয়েছে কেড়ে প্রাপ্যের অধিকার দর্পের কবলে কতবার- বেঘোরে দিয়েছে প্রাণ কত ভারাটে লাঠিয়াল। দেখেছে কেমন করে গ্রাস করে ভিটেমাটি জনপদ।
বাগান-বাথান-মসজিদ-মন্দির-ফলবতী গাছ,
..... ঘোরা ধানক্ষেত, ঢেকিঘর-
ফুলজান, সোনাডানের সাজানো সংসার,
সখের লালশিকে ছিড়ে যায় সহস্র স্বপ্ন, বুকে নিয়ে নিষ্প্রাণ বস্তির ছই ঘর যেন হঠাৎ করেই ভেসে ওঠে চর ডাঙ্গা ধলেশ্বরীর জনতার চর।
সবকিছু নিয়েই তবুও আমার সত্তায় নিয়ত এই নদীতে ঢেউ তোলে-দিনে দিনে আমি বেড়ে উঠলাম, .......লাম ধাপে ধাপে, ........ চলে এলাম অনেক .... আঁকা বাঁকা পথ ধরে এই ........ ভিড়ে সেখানেও নিয়ত আছড়ে পড়েছে যেন সেই ধলেশ্বরী আমার জীবনের বহমান স্রোতধারায় নাচে সেই ধলেশ্বরী।
আমরা এগিয়ে চলেছি ধাবমান সময়ের উত্থান পতনের সাথে প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির সুখ-দুঃখের সাথে সেই জনতার সাথে ..... যে মিলেমিশে
একাকার হয়ে গেছে সেই ধলেশ্বরী আমার শৈশরের সেই জলপরী
আমার দুচোখে নাচে সেই পরী আমার ধলেশ্বরী।
ধানসিঁড়ি
সালাম তাসির
মেঘ বৃষ্টি জলে, অন্তর্বাস খুলে ফেলো নদী
ঢেউ বুকে জেগে উঠুক নিঝুম দ্বীপ
অন্ধ আবেগে প্রাণোচ্ছল মন মাঝি
হাওয়া অনুকুলে, যেতে হবে বহুদূর
শাড়ির আঁচল উড়ুক মাস্তুলে ; বাঁধা দিও না!
গতি মন্থর হলে জেলে নৌকায় ঘুমিয়ে যাবে চাঁদ।
গাঙচিল সন্ধ্যার মেঘে নামুক আঁধার
সাগর সঙ্গমে মিলনের আকুতি পূর্ণতা পাক ;বাঁধা দিও না।
লাজুক হাসিতে কাজল আঁখি মুদিও
চুম্বনে আনমনা হও; নিজেকে আড়াল করো
ঢেউ শিহরণে ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠুক চাঁদ
জল-জোছনার অনুরাগে অবগাহন অতঃপর
শিশির রাতের নোনাজলে ঘরবেঁধে নদী হও ধানসিঁড়ি।
তৃষ্ণাকাতর ঠোঁটে আছড়ে পড়ুক সমুদ্র ঢেউ।
এক তর্জনীতে স্বাধীনতা
আলম মাহবুব
এক তর্জনীতে কী যে হুলুস্থুল জনতার সমুদ্রে
সাত মার্চের রেসকোর্সে বিশাল ঢেউ
সবুজ উদ্যানে স্বপ্নের লহরী
সহসা পাল্টে যায় জীবন দর্শন
কি আশ্চর্য বজ্রকণ্ঠে মোহিত সক্ষমতার এলিজি,
মানুষের অগ্রযাত্রা তখন আর রুখবে কে
আগামী বসন্তেই পালাবদল দিনরাত্রির চিত্রকল্প।
এক তর্জনীতে উত্থান ‘বাংলা ছাড়ো’ কবিতার জয়
অন্ধতার উৎসভূমি হতে ক্রমাগত ভাঙচুর
সুশোভিত ব্যাকরণের উচ্চারণে মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতা
সাত মার্চের তর্জনী হতে গড়িয়ে যায় স্বপ্নাচ্ছন্ন দুপুর
উড়ে যায় নাগরিক দুঃখ, আশালতার সোনালী আগুন
দেয়াল ভাঙো
রক্তের ভিতরে কার কাজ তোমাকে যেতেই হবে
সেদিনের সেই এক তর্জনীতে
আগুন গানের ইতিহাস বাংলাদেশ।
তোমাকেই খুঁজছি
মিজানুর রহমান তোতা
আমাকে ইশারায় ডাকছো
বলছো কাছে এসো
প্রতিক্ষণে যাকে ম্বপ্ন দেখি
বাঁকা চোখে মধুর চাহনি
তুমি যেন সেই তুমি
আমার স্বপ্নের ছবি
মিষ্টি হেসে ভেলকিখেলা দেখাও
কাছে গেলে দুরে সরিয়ে দাও
বুঝি না মতিগতি
কখনো বলো,
অপূর্ণ সাধকে পূর্ণতা দিতে আদর করে দুষ্টু।
মনে জাগে ফুর্তি
মনের অজান্তে বিচিত্র সব আচার আচরণ
মনে হয় তৃঞ্চাকাতর
সুখানুভূতির তৃপ্ত বাসনা নিরন্তর তাড়িয়ে বেড়ায়
স্বান্তনা দাও
আসছি বলে চোখের পলকে মিলিয়ে যাও
হতাশ ভঙ্গিতে নিখোঁজ হাসি ব্যাথা দেয়
পড়ন্ত বিকেলে রঙের আকাশে তোমাকে খুঁজছি
তীব্র নিষ্ঠুরতার ছাপ দেখছি
বুকের ভেতরটা ব্যাথায় কাতর
এফোঁড় ওফোঁড় স্বপ্ন আকাঙ্খা
হৃদয়জুড়ে কল্পনার ছায়া ঘোরে
দু’চোখ তোমাকেই খুঁজে ফেরে
হৃদয়ে অনন্য প্রশান্তি স্বর্গীয় সুখ নিয়ে বেঁচে আছি।
মহাপ্রস্থান
আরফাত বিন আবু তাহের
কোথায় যাচ্ছে সবাই দল বেঁধে? ক্লান্ত শ্রান্ত হাতে খঞ্জর খড়গ। গতির উপর গতিতে-হামাগুড়ি, পদব্রজ। বেভুল পথিক, উরগ চলেছে অষ্টপ্রহর, কার পানে যাচ্ছে তো যাচ্ছে- কোন দিকে চলে যাওয়ার ইশারা পেয়ে ফেলে চৌদ্দ কুল পেছনে ফেলে কামরা-ঘর। উলম্ব ঘোরে মাথার উপরে প্রখর রশ্মি রবির প্রবল মায়াবি- জোছনার চৌদ্দটি রাতকে টেনে টেনে কোথায় নিয়ে যেতে ক্রমশ চিরদিন বাড়ছে লম্বা তাদের সারির বহর। সে দিকে। ওই দিকে- লোকেদের গায়ের ধাক্কা খেয়ে উত্তরের বাতাসও খাপ ছাড়া করে খরখর-ঝাঁপিয়ে পড়ছে প্রতিটা দেহের পেছনে পাছায়, পাছার উপর আছাদনগুলোকে চাপড়িয়ে লঙ্গির ভেতর ঢুকে হাওয়ারা লোকেরা আর আকাশের ছাদ ফেলছে নরম করে ছায়া কুয়াশার মশারিরা ঘিরে ধরে জোছনার ঝকমকে রূপোর ধারা। এরই মাঝে চোখ তুলে দেখা যায়, চলেছে কাতারে কাতারে, তাড়ায় তা সে যত বড়ই হোক লম্বা কুজো সে সারিগুলোকেও টেনে নিয়ে যাচ্ছে নিজের পেটের ভেতরে নওল মরগিটা দিশাহীন- বুড়ির বগল তলে করে করকর ডানে বামে নুয়ে নুয়ে তবুও বুড়া-বুড়ি, ছেলে-মেয়ে, যুবক-যুবতীরা যাচ্ছে, চলে যাচ্ছেই-সারি সারি, পা মাথা সব টেনে। এরকম ঝুলুনি এরকম পিটাপিটি হলে বাতাসের গন্ধ শুঁকে, জড়িয়েও পায় মানুষেরা শ্বাস ফেলে- পৃথিবীর চিরদিন উত্তর-দক্ষিণে লম্বা হয়ে শুয়ে যায়।
বে হবে বোধোদয়
আলী এরশাদ
ডানে-বামে প্রতিদিন প্রতিবেশী অথবা স্বজন
পরপারে দিচ্ছে পাড়ি ফেলে রেখে সাজানো বাগান,
লোভের সাগর থেকে ফিরে তবু আসছে ক’জন?
বাঁকা পথ ছাড়ছে না; হয়ে যাক পৃথিবী শ্মশান।
প্রিয় নারী, গাড়ি, বাড়ি শেষকালে কে হয়েছে সাথী?
প্রতিটি মানুষ জানে খালি হাতে চলে যেতে হয়,
প্রতারণা করে তবু ধনী হতে চায় রাতারাতি
অথচ এসব মিছে কবে হবে এই বোধোদয়।
ক্ষমতার মোহে মজে মানুষের মোলায়েম মন
সীমারের পথে হাঁটে; লোপ পায় ন্যায় নীতি নিষ্ঠা,
সমাজের প্রভু হবে এই ধ্যান শুধু সারাক্ষণ
জেনেবুঝে নরাধম ডুবে দিয়ে পান করে বিষ্ঠা।
পদবি ও প্রতিপত্তি মানুষকে করে দেয় অন্ধ
ভুলে যায় মৃত্যু সত্য ভুলে যায় কী ভালো কী মন্দ।
ক্ষমা করে দাও
শম্পা মনিমা
মুষলধারায় ভিজছে ঝাঁকড়া মাথার চাঁপাগাছ
ভর্তি হয়েছে পুকুর; কোথাও ডাকছে ডাহুক
তিন না তার অনেক বেশি বারু শান্তি লেগে আছে
ডাহুকীর বুকে, আগলে রাখে শরীর ইমন সন্ধ্যায়
স্মরণ করে কল্যান করে বিধাতার আশ্চর্য সৃষ্টি
জননী স্বামী সন্তান, ওগো আপনার পড়শী,
সলতে জ্বালায় আজানের শান্তি ,বলো মন্ত্রগান
সেপাই হাতে গলায় আঁচলে শান্তির গোছা কপালঠুকে চায় কল্যানের বিশ্বাস ক্ষমা করে দাও হে আকাশকল্যান
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।