রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংক কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কিনতে ৪৩৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে। মহামরির মধ্যে আর্থিক ক্ষতি মোকাবেলায় স্বল্পমেয়াদি এ ঋণ দেবে সরকারি সোনালী, জনতা, রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংক।
প্রতিবছর ঈদ-উল-আজহার আগে এ ঋণ দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী যারা আগের বছরের ঋণ পুরোপুরি শোধ করে শুধু তারাই এ ঋণ পায়। এছাড়াও ব্যাংক-গ্রহক সম্পর্কের বিবেচনায় অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণ দিয়ে থাকে। তবে এবার মহামরির ক্ষতি মোকাবেলায় এ খাতে ঋণ বিতরণে অগ্রাধিকার দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে চামড়া ক্রয়ের সুবিধার্থে বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ বাড়ানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চামড়া খাতে দেওয়া ঋণ সহজে আদায় হয় না, এ কারণে বেসরকারি ব্যাংকগুলো এই ঋণে তেমন আগ্রহী নয়। কিন্তু শিল্পের স্বার্থে প্রতিবারই কাঁচা চামড়া কিনতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। এর ধারাবাহিকায় এবারও কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কিনতে ঋণ দেবে। কাঁচা চামড়ার বড় সরবরাহ আসে এই কোরবানির ঈদে। ব্যবসায়ীরাও এ ঈদে বেশি চামড়া সংগ্রহ করে থাকেন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এ খাতের মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে আগের নেয়া ঋণ সিংহভাগই আদায় হয়নি। তারপরও এ খাতে ঋণ দেবে সরকারি ব্যাংকগুলো। অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেছেন, কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কেনার জন্য গতবার ১২৫ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়। তবে করোনার প্রভাব বৈশ্বিক সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে গত বছরের ঋণ আদায় কম হয়েছে। তিন ভাগের এক ভাগ ( প্রায় ৪০ কোটি টাকা) মত আদায় হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের ঋণ পুন:তফসিলেন জন্য কিছু শর্ত শিথিল করা হয়েছে। সব কিছু বিবেচনায় এবারও চামড়া কেনার জন্য ১২৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে-বলেন তিনি জানান।
জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুছ ছালাম আজাদ জানান, এবার কোরবানির কাঁচা চামড়া কেনার জন্য ব্যবসায়ীদের ১০০ কোটি টাকা দেয়া হবে। ইতোমধ্যে অনেকে আবেদন করেছে যাচাই-বাছাই করে তাদের ঋণ দেয়া হবে। করোনার কারণে গতবার যাদের ঋণ দেয়া হয়েছে তার আদায় খুবই কম বলে জানান তিনি।
রূপালী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রতিবারের মত এবারও কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কেনার জন্য ঋণ দেয়া হবে। গতবার পরিমাণ ঋণ দেয়া হয়েছে এবারও সমপরিমাণ অর্থ ঋণ দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আজকের বোর্ড সভায় এটি চূড়ান্ত হওয়ার কথা। গতবছর এ খাতে ১৩৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল রূপালী ব্যাংক। যার সিংহভাগই আদায় হয়নি বলে জানা গেছে।
রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান জাকির হোসেন খান বলেন, সোনালী ব্যাংক গত বছর কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কিনতে ৭৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। এবারও সমপরিমাণ টাকা ঋণ দেবে। তবে বৈশ্বিক মহামরির সংকট করণে এবার ঋণের চাহিদা কম। এখন পর্যন্ত ২৫ কোটি টাকার ঋণ আবেদন এসেছে। যা অনুমোদন ও ছাড়ের প্রক্রিয়াধীন আছে। এখনো সময় আছে নিয়মনীতি মেনে আবেদন করলে ঋণ দেয়া হবে।
ট্যানারি ব্যবসায়ী ও খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার বৈশ্বিক চাহিদা কম ও মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি কাঁচা চামড়া ট্যানারিগুলোতে মজুদ পড়ে আছে। এর মধ্যে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার রফতানিযোগ্য ফিনিশ লেদার রয়েছে। যা করোনাভাইরাসের কারণে রফতানি করতে পারেননি ট্যানারিগুলো । এতে করে ক্রায়আদেশ বাতিল হচ্ছে, নতুন করে আসছে না অর্ডার। এমন সংকটে কোরবানির চামড়া সংগ্রহের জন্য ঈদের আগে ব্যাংক ঋণের নিশ্চিয়তাসহ প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা চান ব্যবসায়ীরা।
এসব বিবেচনায় এ খাতের ঋণ দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নমনীয় ও আগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া ক্রয়ের সুবিধার্থে বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ আরোও ৩ মাস বাড়ানো হয়েছে। মাত্র ২ শতাংশ ডাউন দিয়ে নিয়মিত গ্রাহক হওয়ার জন্য চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত আবেদ করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। আগে এ সুযোগ ছিল ৩০ জুলাই পর্যন্ত।
এদিকে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চমড়ার দাম ২০ থেকে ২৯ শতাংশ কমিয়ে নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ২৮-৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে খাসির চামড়া ১৩-১৫ টাকা আর বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা।