পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহপাক কবুল করেন। আরাফার দিন রোজা রাখলে আল্লাহপাক পূর্ববর্তী ও পরবর্তী দু’বছরের গুনাহ মাফ করে দেন। যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনে একটি রোজা রাখলে এক বছরের গুনাহ মাফ করা হয়। আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য কোরবানি দিয়ে পশুর রক্ত ও বর্জ্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে অসহযোগিতা করে মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা যাবে না। কোরবানির পশু ক্রয়ের ক্ষেত্রে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবার এক হাট থেকে অন্য হাটে দল বেধে ঘুরাঘুরি করা যাবে না। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে। আজ শুক্রবার বিভিন্ন মসজিদে খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমামরা এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীর মসজিদগুলোতে জুমার নামাজে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় অধিকাংশ মসজিদের বাইরে রাস্তার ওপর মুসল্লিরা জুমার নামাজে অংশ নেন। নগরীর মহাখালিস্থ মসজিদে গাউছুল আজম কপ্লেক্সে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিববুল্লাহ হিল বাকি নদভী খুৎবার বয়ানে কোরবানির ফযিলতের গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শরীয়তের আহকাম মেনে কোরবানি দিতে হবে। করোনা মহামারীতে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবার কোরবানির পশু কিনতে এক হাট থেকে অন্য হাটে ঘুরাঘুরি বর্জন করতে হবে। কোরবানির পশু বাসার সামনে কয়েক দিন আগেই বেধে রাখার অভ্যাস পরিহার করতে হবে। তিনি বলেন, করোনার অযুহাতে কোরবানি দেয়া থেকে বিরত থাকা যাবে না। কোরবানির পশু জবাইয়ের রক্ত ও বর্জ্য নিজ নিজ উদ্যোগে দ্রæত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। পেশ ইমাম বলেন, আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোরবানি দিয়ে পশুর রক্ত ও বর্জ্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করে মানুষকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা যাবে না।
ঢাকার ডেমরার ঐতিহাসিক দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদে খুৎবার বয়ানে মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আ খ ম আবু বকর সিদ্দিক যিলহজ মাসের গুরুত্ব ও ফযিলত তুলে ধরে বলেন, রসূল (সা.) বলেছেন, আরাফার দিন (হজের দিন) রোজা রাখলে পূর্ববর্তী এক বছর ও পরবর্তী দুই বছরের গুনাহ আল্লাহপাক মাফ করে দেন। হজের আগের দশ দিনে একটি রোজা রাখলে এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। কোনো কোনো হাদীসে এসেছে, যিলহজ মাসে এক একটি আমলের দরুন ৬শ’, ৭শ’ এবং এক হাজার গুন বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, কোরবানির পশুর যত পশম তত নেকি দেয়া হবে। কোরবানির পশুর জবাইয়ের রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহপাক কবুল করেন। তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানির পশু জবাই এবং পশুর বর্জ্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানান। চকবাজার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস আল্লামা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি খুৎবার বয়ানে বলেন, কিছু কিছু সময় মহান রব্বুল আলামীনের নিকট অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি মূল্যবান। তন্মধ্যে যিলহজ মাসের প্রথম দশক অন্যতম। হাদীসের আলোকে এই দশকের এক দিনের রোজায় এক বছরের রোজার সমান সওয়াব। এ দশকের একটি রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা লাইলাতুল ক্বদরে জাগ্রত থাকার সমান সওয়াব। তাই আমাদেরকে এ সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। খতীব বলেন, পবিত্র কুরআনে এরশাদ করা হয়েছে, হে নবী আপনি বলে দিন আমার নামাজ, আমার কোরবানিসহ সমস্ত ইবাদত আমার জীবন ও মৃত্যু সবই একমাত্র আল্লাহর জন্য সমর্পিত। যিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের রব। তাই কোরবানি করতে হবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নিজের আর্থিক সক্ষমতা জানান দেয়ার কিংবা গোশত খাওয়ার জন্য নয়।
কারওয়ান বাজার আম্বরশাহ জামে মসজিদের খতিব ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরীয়ত মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী জুমার বয়ানে বলেছেন, হাদীসে বর্ণিত আছে যে রসূলুল্লাহ (সা). বলেছেন, যে ঈদের সালাতের পর কোরবানির পশু জবেহ করলো তার কোরবানি পরিপূর্ণ হলো এবং সে মুসলিমদের আদর্শ সঠিকভাবে পালন করলো। তাই মহামারী বা কোনো অযুহাতে পশু কোরবানির পরিবর্তে দান-সদকা বা অসহায়দের আর্থিক সহায়তা প্রদানে এই ওয়াজিব বিধান আদায় হবে না।
তিনি আরো বলেন,কোরবানির চামড়ায় গরিবের অধিকার রয়েছে। কিন্তু চামড়ার মূল্য কমিয়ে অসহায় গরিব দুঃখী এবং মাদরাসা ও এতিমখানার লাখ লাখ গরিব শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার নষ্ট করা হচ্ছে। ফলে চামড়া ব্যবসায়ীরা লাভবান এবং অন্যদিকে গরিবরা তাদের হক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে মাদরাসা ও এতিম খানাগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সরকারের উচিৎ কোরবানির চামড়ার ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করে গরিবের হক সংরক্ষণ করা। সেগুনবাগিচাস্থ মসজিদে নূর এর খতীব মুফতি আব্দুল কাইয়ূম সুবহানী খুৎবার বয়ানে বলেন, মহান আল্লাহপাক হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর আমলকে (কোরবানিকে) সারা দুনিয়ার মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব করে দিয়েছেন। সুনাম, যশ খ্যাতির জন্য কোরবানি নয়; একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যেই এ ওয়াজিব বিধান যথাযথভাবে আদায় করতে হবে। তিনি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কোরবানির পশু জবাই এবং বর্জ্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। খতীব মুফতি সুবহানী বলেন, কোরবানির ওপর গরিব মিসকিনের হক রয়েছে। এ হক আদায়েও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও কামরাঙ্গীরচর রহমতিয়া জামে মসজিদের খতিব মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন জুমার বয়ানে বলেছেন, কোরবানি ইসলাম ধর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। মহান আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভ করাই হলো কোরবানির মূল লক্ষ্য। আল্লাহ তা‘আলা পশু জবাই এর মাধ্যমে মূলত মানুষের ভেতরে যে পশুত্ব রয়েছে তা জবাই করার শিক্ষা দিয়েছেন। কোরবানি থেকে সঠিক শিক্ষা নিলে আমাদের সমাজে শান্তি ফিরে আসবে প্রতারক সাহেদ ও সাবরিনদের মত দুর্নীতিবাজ তৈরী হবে না এবং সকল অপরাধ নির্মূল হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।