Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

তিন দফায় ভারতের আকাশে হানা দিয়েছে চীনা বিমান

প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৬ পিএম, ১ আগস্ট, ২০১৬

ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতের বারাহোতি তৃণভূমিতে ঢোকার পেছনে চীনের কোনও বড় ধরনের লক্ষ্য কাজ করছে কি-না তা তদন্ত করে দেখছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। গত জুলাই মাসের শুরুর দিকে সীমান্ত পেরিয়ে উত্তরখ-ের চামোলি জেলায় ঢুকে পড়েছিল চিনা সৈন্যরা। তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যথেষ্ট উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে ভারতীয় গেয়েন্দারা বুঝতে পারছে, চামোলির বারাহোতি তৃণভূমিতে লাল ফৌজের ওই অনুপ্রবেশ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পুরো প্রস্তুতি নিয়ে এবং ছক কষেই বারাহোতিতে সৈন্য পাঠিয়েছিল বেইজিং।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করে উত্তরাখ-ে ঢোকার আগে বেশ কয়েকবার ওই এলাকায় গোপনে নজরদারি চালিয়েছিলো চিনা যুদ্ধবিমান। ভারতের আকাশসীমায় ঢুকে এলাকার ম্যাপিং করেছে চীনা সৈন্যরা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত তিন মাসে অন্তত তিনবার হিমাচল প্রদেশ, উত্তরখ- এবং উত্তর প্রদেশের আকাশে ঢুকেছিল চীনের ‘তুপোলভ-তু ১৫৩এম’ নজরদারি বিমান। সোভিয়েত আমলে তৈরি একটি বিমানের প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে চীন এই নজরদারি বিমান বানিয়েছে। বিমানটি ৪০ হাজার থেকে ৬০ হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত উড়তে পারে। অতো উচ্চতার কারণে রাডারে তার উপস্থিতি ধরা পড়ে না। ফলে ভারতের আকাশসীমায় তিনবার ঢুকে নজরদারি চালিয়ে গেলেও ভারতীয় রাডারে তা ধরা পড়েনি।
‘তুপোলভ-তু ১৫৩এম’ বিমানে সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার থাকায় অনেক উঁচু থেকেই এটি ভূপৃষ্ঠের খুব স্পষ্ট ছবি তুলতে সক্ষম। খারাপ আবহাওয়ায় বা রাতের অন্ধকারেও হাই রেজোলিউশন ছবি তুলতে ওই বিমানের কোনও অসুবিধা হয় না। তিন মাস ধরে বেশ কয়েকবার নজরদারি বিমান পাঠিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর টহলদারি, সেনা চৌকির অবস্থান এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতের সামরিক পরিকাঠামোর বিস্তারিত বিবরণ সংগ্রহ করেছিল চিন। তারপর হঠাৎ বারাহোতি তৃণভূমিতে ২০-২৫ জন সৈন্য ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল।
বারাহোতিতে চিনের পিপল’স লিবারেশন আর্মি ঢুকে পড়ার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ভারতীয় বাহিনী। চিনা সৈন্যদের চ্যালেঞ্জ করা হয়। প্রথমে লাল ফৌজ এলাকা ছেড়ে যেতে রাজি হয়নি। কিন্তু প্রায় এক ঘণ্টা ভারতীয় বাহিনী মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে থাকার পর চিনা সৈন্যরা এলাকা ছাড়ে। ফিরে আসে ভারতীয় বাহিনীও। যে এলাকায় চিন সৈন্য ঢুকিয়েছিল, সেই এলাকা নিয়ে বিতর্ক বহু দিনের। ভারত বারাহোতিকে নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে। কিন্তু চিনের দাবি, ওই এলাকার নাম বারাহোতি নয়। ওই এলাকা আসলে তাদের এবং এলাকার নাম উ-জে। এ ধরনের বিতর্ক থাকায়, বারাহোতির বিশাল তৃণভূমি অঞ্চলকে ‘ডিমিলিটারাইজড জোন’ বা ‘বাহিনী বর্জিত এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ভারত ওই অঞ্চলে নজরদারি চালায়। কিন্তু ভারতীয় বাহিনী সেখানে অস্ত্র নিয়ে যায় না। এমনকি সামরিক পোশাক পরেও যায় না। চিনা সেনা ঢুকে পড়ার খবর পেয়ে অবশ্য পুরোদস্তুর রণসাজে সজ্জিত হয়েই ভারতীয় বাহিনী পৌঁছেছিল সেখানে। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি চরম মোড় নেয়নি। তবে ভারত বিষয়টির তদন্ত করতে শুরু করেছে।
চিন যে আকাশপথে ভারতের এলাকায় নজরদারি চালিয়ে গেছে, তা ভারতকে জানানো হয়েছে অন্য কোনও একটি দেশের মাধ্যমে। যেসব দেশের সঙ্গে ভারত গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করে, সেই দেশগুলোর মধ্যেই কোনও একটির কাছ থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চিনা বাহিনী বারাহোতিতে যখন ঢোকে, তখন সেখানে স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতি ছিল। চিনা সৈন্যরা তাদের ওই এলাকা থেকে সরে যেতে বলে। তারা আরও বলে, ওই এলাকা চিনের এবং ভারতীয়দের সেখান থেকে সরে যেতে হবে। স্থানীয় লোকজন তখন ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে গেলেও দ্রুত খবর চলে যায় ভারতীয় বাহিনীর দফতরে। অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে বারাহোতি তৃণভূমিতে সৈন্য পাঠায় ভারত। ভারতীয় সৈন্যরা সেখানে পৌঁছনোর আগে চিনের একটি হেলিকপ্টারও বারাহোতিতে ঢুকেছিল বলে জানা গেছে। কিন্তু মিনিট পাঁচেক বারাহোতি তৃণভূমির উপর ঘোরাফেরা করেই সেটি নিজেদের সীমান্তে ফিরে যায়। ভারতীয় বাহিনী যখন বারাহোতি পৌঁছয়, তার অনেক আগেই চিনের কপ্টার ফিরে যায়। জানা গেছে, কপ্টারটি ছিলো ঝিবা সিরিজের একটি অ্যাটাক হেলিকপ্টার। টাইমস অব ইন্ডিয়া।



 

Show all comments
  • abdullah ২ আগস্ট, ২০১৬, ৮:০৩ এএম says : 3
    আমরা ভারতের পক্ষে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তিন দফায় ভারতের আকাশে হানা দিয়েছে চীনা বিমান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ