পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সন্ত্রাসী হামলায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন সাইফুদ্দিন (৪৮)। পাশের বাড়ির দরজার ফাঁক দিয়ে সেই দৃশ্য দেখছিলেন তার বড়ভাই মুকুল হোসেন। ভাইয়ের উপর চতুর্মুখী হামলার খবর পেয়ে তাকে রক্ষা করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু প্রতিবেশিরা জোর করে তাকে বাড়িতে ঢুকিয়ে নেন। গতকাল শনিবার সকালে ঠিক যে স্থানে খুন হয়েছেন সাইফুদ্দিন সেই স্থানে এসে নীরবে চোখের পানি ফেলেন স্ত্রী পারুল বেগম।
এর আগে গত মঙ্গলবার শিবগঞ্জ পৌরসভার মর্দানা-আইয়ূব বাজার এলাকায় নৃশংসভাবে খুন হন সাইফুদ্দিন। এ ঘটনায় এখনো চাপা আতঙ্কে থমথমে পুরো এলাকা। মুকুল হোসেন বলেন, এর আগে একই সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে খুন হয়েছেন তার অপর এক ভাই তাইফুর রহমান। চোখের সামনে আরেক ভাই সাইফুদ্দিনকে নৃশংসভাবে কোপাতে দেখেছেন। কিন্তু ভাইকে বাঁচাতে পারেননি। তিনিও সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের কোপে পড়বেন এ শঙ্কায় প্রতিবেশীরা তাকে আটকে রাখেন। ওই সময় তার বাড়ি, ভাই-ভাতিজাদের বাড়িতেও হামলা-লুটপাট হয়। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর খাইরুল আলম জেমের নির্দেশেই এ হামলা হয়েছে। এ নিয়ে জেমসহ ৩৪ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন তিনি। এর আগেও সাইফুদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে কয়েক দফা হামলা চালায় জেমের অনুসারীরা।
এলাকাবাসীর ভাষ্য, পুলিশ না থাকলে সন্তানদের নিয়ে বাড়ি থেকে বেরুতেই পারতেন না পারুল বেগম। স্বামীর উপর এমন নৃসংশতায় বাকরুদ্ধ তিনি। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনাসহ সংসার চলতো সাইফুদ্দিনের একার আয়ে। স্বামীকে হারিয়ে কীভাবে বাকি পথ পাড়ি দেবেন এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পারুল বেগম। সন্ত্রাসীদের তান্ডব চলাকালে মৃত্যু ভয় তুচ্ছ করে বেরিয়ে আসেন আয়েশা বেগম। ছুটে যান ভাইয়ের কাছে। তার ভাষ্য, ভাইকে রক্ষায় এগিয়ে যাবার পর তার গলায় ধারালো অস্ত্র ঠেঁকায় সন্ত্রাসীরা। কিন্তু শুধু নারী হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচেছেন। ওই সময় পরিবারের যে পুরুষ সদস্য আসতো, তাকেই হত্যা করতো হামলাকারীরা। আয়েশা বেগম জানান, তার ভাইয়ের পুরো শরীর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দেয় সন্ত্রাসীরা। দুই হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। ওই সময় মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন তার ভাই। পানি চাইলে সন্ত্রসীরা তার মুখে প্রসাব করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান, গ্রামীণ রাজনীতির বলি সাইফুদ্দিন। সাইফুদ্দিনসহ তার পুরো পরিবার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিরর আবদুস সালামের সমর্থক ছিলেন। আর এ কারণেই বর্তমান কাউন্সিলর খাইরুল ইসলাম জেমের রোষানলে পড়ে পরিবারটি। কেবল এই পরিবারই নয়- যারা কাউন্সিলর জেমের বিরোধিতা করেন তাদেরই সাইফুদ্দিনের মতো পরিণতি বরণ করতে হয়। গত ৫ বছরে এলাকায় অন্তত ৫টি হত্যাকান্ড ঘটেছে। এর প্রতিটিতেই রয়েছে কাউন্সিলর জেমের হাত।
ঘটনার পর থেকে মর্দানা-আইয়ূব বাজার এলাকায় দায়িত্বপালন করছেন শিবগঞ্জ থানার উপপরির্দক ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও কাউন্সিলর খাইরুল আলম জেমের মোবাইল সংযোগ পাওয়া যায়নি। ফলে এ নিয়ে তার মন্তব্য মেলেনি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শিবগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুবুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত ৮ আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে প্রধান আসামি কাউন্সিলর খাইরুল আলম জেম পলাতক। তাকেসহ মামলার পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে আইনত ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।