পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে অস্ত্রসহ গতকাল বুধবার ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটার শাকরা সীমান্তবর্তী কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদীর তীর থেকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব। তারপর সকাল সাড়ে ৮টায় সাতক্ষীরা থেকে তাকে নিয়ে র্যাবের হেলিকপ্টারে ঢাকার পুরাতন বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ঢাকায় আনার পর পরই তাকে নেয়া হয় উত্তরায় র্যাব সদর দপ্তরে। এর পর র্যাব তাকে নিয়ে উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা মূল্যের জাল নোট উদ্ধার করে। রিজেন্ট হাসপাতালের কেলেঙ্কারির ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন সাহেদ।
র্যাব জানায়, গত ৯ দিনে তাকে ধরতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায় র্যাব। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভোর সাড়ে ৫ টার দিকে দেবহাটার শাকরা বাজার সীমান্তে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় অবৈধ অস্ত্র। তাকে গতকাল ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ডিবি কার্যালয়ের উদ্দেশে রওয়ানা হন র্যাবের সদস্যরা। বিকেল ৫টার দিকে তাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। র্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্ণেল সারোয়ার বিন কাশেম গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দেন। তিনি জানান, সাহেদ চুলে রঙ করে গোঁফ কেটে বোরকা পরে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢোকার চেষ্টায় ছিলেন। চেহারা পরিবর্তন করার জন্য সে তার চুলও কালো করে ফেলেছিল। দালালের মাধ্যমে লবঙ্গবতী নদীর ইছামতিখাল দিয়ে সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করছিলো।
সাহেদের প্রতারণায় ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিচ্ছে র্যাব- ডিজি
সাহেদের মাধ্যমে যারা ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগীদের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। বুধবার রাজধানীর উত্তরায় র্যাবের হেডকোয়ার্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ভুক্তভোগী যারা আমাদের কাছে আসছেন তাদেরকে আমরা আইনানুগ পরামর্শ দিচ্ছি। সহায়তা করছি, কীভাবে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানায় যাবেন বা আমাদের কাছে যদি আসতে চান আমরা সে সহায়তা প্রদান করছি। পালিয়ে থাকার সসয় আমরা তাকে ফলো করেছি, সব পয়েন্ট যদি আমরা জানতে পারতাম তাহলে তখনই তাকে ধরতে পারতাম। আমরা যখনই জানতে পেরেছি এবং তাকে পিনপয়েন্ট করতে পেরেছি তখনই তাকে আমরা অ্যারেস্ট করেছি।
ছয় মাস পরেই আবার বেরিয়ে আসবে এ ধরনের কথা সাহেদ বলেছেন কি না- সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা আমার ঠিক জানা নেই। অনেক কথা বলেছেন, যেটা আমরা তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে বলতে চাচ্ছি না। তদন্তের স্বার্থে কথাগুলো আমরা না বলাই শ্রেয় মনে করছি। র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, কিছুদিন আগে গত ১২ জুলাই আমরা এস এস এ হসপিটালে অভিযান পরিচালনা করেছি। এই হাসপাতালের মালিকের বিরুদ্ধে এবং যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। যেখানে আমরা তথ্য পাচ্ছি, সেখানেই আমরা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে হোক বা বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য থেকে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তৎপর আছি।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, মামলার যিনি তদন্ত কর্মকর্তা আমরা তাকে হ্যান্ডওভার করব, পরবর্তী ব্যবস্থা মামলার তদন্তকারী অফিসার নিশ্চশই যিনি তদন্ত করবেন তিনি একজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা তার মেধা, দক্ষতার আলোকে এবং আইনের আলোকে উনি তার ব্যবস্থা নেবেন। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এটা মন্ত্রণালয়ের আভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে আমরা দেখছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাদের যেটা দরকার, তাদের যে ট্রার্মস অফ রেফারেন্স আছে সে অনুযায়ী তারা দায়িত্ব পালন করছেন।
সাহেদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রেখে এরকম একটা ছবি তোলার মধ্য দিয়ে র্যাব কতটুকু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে-এর জবাবে সংস্থাটির ডিজি বলেন, এটা আমি দেখিনি, এটা পরে দেখে আমরা বলতে পারব। র্যাবের ডিজি বলেন, আপনারা দেখেছেন, তাকে গ্রেফতারের পর আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি তারপর ঢাকায় এসেছি। ঢাকাতেও তাকে নিয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। আমরা উল্লেখ করেছি যে, আমরা জাল টাকা উদ্ধার করেছি। আমরা যে তথ্য পাই এই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করে থাকি। আর যদি আমরা বিব্রত বোধ করতাম, তাহলে তো তাকে অ্যারেস্ট করে আনতাম না। বিব্রত বোধ করার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমাদের কাছে মামলার তদন্ত গ্রহণের জন্য যে প্রক্রিয়া আছে, তা অনুসরণ করে আমরা আমাদের কার্যক্রম গ্রহণ করছি।
আত্মগোপনে থাকার মধ্যেই ঢাকায় এসেছিলেন সাহেদ
র্যাবের মহাপরিচালক বলেছেন, মামলা হওয়ার পরপরই সাহেদ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় আত্মগোপনের চেষ্টা চালান। ঢাকা থেকে তিনি কুমিল্লা, কক্সবাজার ও সাতক্ষীরা গিয়েছেন। গত সাত/আট দিনের মধ্যে সাহেদ একাধিকবার ঢাকাতেও এসেছেন। কখনো নিজস্ব গাড়িতে যাতায়াত করেছেন, কখনো ভাড়া গাড়ি, কখনো ট্রাকে আবার কখনো পায়ে হেঁটেও এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করেছেন।
মো. সাহেদ ভারতে চলে গিয়েছিলেন বলে আলোচনা আছে। এই আলোচনা কতটুকু সত্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে র্যাব সাহেদকে খুঁজছিল। যে জায়গায় তার অবস্থান শনাক্ত করা গেছে, সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মহাপরিচালকের কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, সাহেদের সঙ্গে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির ছবি ও অন্তরঙ্গতার বিষয় সা¤প্রতিক সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। পলাতক অবস্থায় তিনি কার কার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন? আলোচনা ছিল তিনি পুলিশের সাবেক একজন শীর্ষ কর্মকর্তার বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই কর্মকর্তা কে? সাহেদের সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এক অনুষ্ঠানে দেখা েেগছে। অস্ত্রসহ উদ্ধার এমন একজন প্রতারক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেলেন কী করে? এমন সব প্রশ্নের জবাবে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ এখনো শেষ হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।
গোঁফ কামিয়ে বোরকা পরে পালাচ্ছিলেন সাহেদ :
মো. সাহেদ সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। শেষ মুহূর্তে সীমান্তবর্তী ইছামতী নদীতে নৌকায় ওঠার সময় তাকে ধরে ফেলে র্যাব। এ সময় সাহেদ কালো বোরকা পরা অবস্থায় ছিলেন। তার কোমরে তিন রাউন্ড গুলি ভর্তি অবস্থায় একটি অবৈধ পিস্তাল বলে র্যাব জানিয়েছে।
র্যাবের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারেন যে, তারা সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে সাহেদ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে তারা ওই এলাকায় ওত পেতে থাকে। এক পর্যায়ে ভোর ৫টা ১০মিনিটের দিকে তাকে সাতক্ষীরার দেবহাটার সীমান্তবর্তী ইছামতী নদীতে কাদামাটি পেরিয়ে একটি নৌকায় উঠার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে তাদের কাছে খবর ছিল যে, সাহেদ গোঁফ কেটে বোরকা পড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। আর ওই তথ্যের ভিত্তিতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ঘন ঘন জায়গা পরিবর্তন করছিলেন সাহেদ :
ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তনের কারণে মোহাম্মদ সাহেদের কাছাকাছি কয়েকবার পৌঁছানো সম্ভব হলেও তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি র্যাব। র্যাবের এডিজি অপারেশন কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার হেলিকপ্টার যোগে সাহেদকে ঢাকার আনার তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত ৯ দিন ধরে আমরা তাকে ফলো করেছি। কিন্তু সে ঘন ঘন জায়গা পরিবর্তন করছিল। এজন্য কয়েকবার আমরা তার খুব কাছাকাছি যাওয়ার পরও ধরতে পারিনি। এছাড়া সে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও ফেলে দিয়েছিল। অবশেষে বুধবার ভোররাতে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আমাকে ৬ মাসের বেশি আটকে রাখা যাবে না- সাহেদের দম্ভোক্তি
সাহেদকে প্রথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র্যাব। ঢাকায় আনার পর সাহেদকে প্রথমে র্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদের সময় বেশ কয়েকবার দম্ভোক্তি করেন তিনি। র্যাব কর্মকর্তাদের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে সাহেদ বলেন, আমাকে ছয় মাসের বেশি সময় আটকে রাখা যাবে না। নিজের পত্রিকার লাইসেন্স আছে উল্লেখ করে যেসব সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদকর্মীরা তার ছবি তুলছে এবং সংবাদ প্রকাশ করছে তাদেরও দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় প্রতারক সাহেদ।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, সাহেদ একজন ঠান্ডা মাথার প্রতারক। তিনি আগেও জেলে গেছেন। ফলে আইনি বিষয়গুলো তার ভালোভাবেই জানা। সে নানা সময় নানা কথা বলছে। বিভ্রান্তিকর তথ্যও দিচ্ছে। তাতে সহায়তাকারী কয়েজন দালালের সন্ধান র্যাব পেয়েছে। তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে বলে র্যাবের গণমাধ্যম পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেছেন।
সীমান্ত পার করতে ৫০ লাখে রফা হয়েছিল আলফার
সাহেদকে ভারতে পাড় করে দিতে ৫০ লাখ টাকায় রফা করেছিলেন আশ্রয়দাতা আল ফেরদৌস আলফা। এজন্য নিজের মাছের ঘেরে সুসজ্জিত এসি ঘরে চার দিন সাহেদকে রেখেছিলেন তিনি। এর মধ্যেই আলফা ব্যবস্থা করেছেন নৌকা ও মাঝি। র্যাবের হাতে সাহেদ গ্রেফতার হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রের মাধ্যমে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ৫৬ মাললার আসামি প্রতারক সাহেদ করিম ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ভারতে পার করে দিতে আল ফেরদৌস আলফার সঙ্গে ৫০ লাখ টাকায় চুক্তি করেন প্রতারক সাহেদ। সে হিসেবে সাহেদকে আলফা সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা শাকরা কোমরপুরে তার মাছের ঘেরে আশ্রয় দেয় আলফা। সেখানে এসি ঘরে চার দিনের মতো ছিলেন রিজেন্টের চেয়ারম্যান। এই সময়ের মধ্যে সাহেদকে ভারতে পালিয়ে যেতে নৌকা ও মাঝির ব্যবস্থা করেন আলফা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র মতে, ওই অঞ্চলে তিনি একজন কুখ্যাত চোরাকারবারি বলে পরিচিত। কিছুদিন আগেও তিনি চোরাচালান মামলায় জেলে ছিলেন। কুলি থেকে বর্তমানে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক আলফা। রয়েছে একাধিক বিলাশবহুল বাড়ি, দামি গাড়ি এবং দেহরক্ষী। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাবের মুখপাত্র, গণমাধ্যম ও আইন শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, আল ফেরদৌস আলফার আশ্রয়ে তার আত্মগোপনের বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছিলাম। সে র্যাবের নজরদারির মধ্যেই ছিল। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা আরও তদন্ত করব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।