গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
চট্টগ্রাম ব্যুরো : স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনার সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ করতে পারেননি সাংবাদিকরা। তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদার নির্দেশে মধ্যরাতে পত্রিকা অফিস ঘেরাও করে ওই ঘটনার সংবাদ ও ছবি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য করে পুলিশ। এজন্য সরকারি প্রেসনোটের বাইরে গণমাধ্যমে ওই ঘটনা নিয়ে কোনো সংবাদ ছিল না বলে সাক্ষ্যে জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অঞ্জন কুমার সেন।
২৮ বছর আগের ‘গণহত্যা’ মামলায় গতকাল (রোববার) বিভাগীয় বিশেষ জজ মীর রহুল আমিনের আদালতে সাক্ষ্য দেন দৈনিক পূর্বকোণের তৎকালীন সিনিয়র রিপোর্টার অঞ্জন কুমার সেন। একই দিন পুলিশের গুলিবর্ষণে নিহত অজিত সরকারের স্ত্রী শেফালি সরকারও আদালতে সাক্ষ্য দেন। বিভাগীয় বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, অঞ্জন সেন এবং শেফালি সরকারের সাক্ষ্যের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক এই মামলায় ৩৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে অঞ্জন কুমার সেন জানান, আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে যোগ দিতে সভানেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম এসেছিলেন। কর্মসূচির মধ্যে আদালতে আইনজীবী ও পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টিও ছিল। পতেঙ্গা বিমানবন্দর থেকে লালদিঘিতে আনার জন্য শেখ হাসিনাকে একটি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে তোলা হয়েছিল। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য অঞ্জন সেনও ওই ট্রাকে উঠেছিলেন। ট্রাকটি নিউমার্কেট মোড়ে আসার পর ব্যাপক জন¯্রােতের সৃষ্টি হয়। অঞ্জন সেনসহ কয়েকজন সাংবাদিক ট্রাক থেকে নেমে আগেভাগে বাংলাদেশ ব্যাংকের মোড়ে গিয়ে দাঁড়ান।
তিনি জানান, শেখ হাসিনার গাড়িবহর কোতয়ালির মোড়ে পৌঁছার পর পুলিশ জনতার উপর লাঠিচার্জ শুরু করে। সে সময় অঞ্জন সেন এবং আরও দুইজন সাংবাদিক বাংলাদেশ ব্যাংকের সীমানা দেয়ালের সঙ্গে লাগোয়া নালায় অবস্থান নেয়। ট্রাকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে আসার পর পুলিশ টিয়ার শেল এবং গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এসময় পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য আমি পুলিশ সদস্যদের জিজ্ঞাসা করি, আপানারা গুলি করছেন কেন? জবাবে তারা বলেন, পুলিশ কমিশনার স্যারের নির্দেশে আমরা গুলি করছি।
সাক্ষ্যে তিনি বলেন, আমি দ্রæত অফিসে গিয়ে একটি রিপোর্ট জমা দিয়ে আবারও আদালত ভবনে আসি। তখন শুনতে পাই কয়েজনের লাশ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে আছে। আমি সেখানে গিয়ে অনেকের লাশ দেখতে পাই। এরপর রাতে খবর পেয়ে বলুয়ার দিঘি মহাশ্মশানে গিয়ে দেখি, লাশ পুড়ে ফেলা হচ্ছে। আমি অফিসে গিয়ে শেখ হাসিনার গাড়িতে পুলিশের গুলিবর্ষণ, হতাহত এবং লাশ পুড়ে ফেলা নিয়ে রিপোর্ট জমা দিই। কিন্তু তখন জরুরি অবস্থা চলছিল। মধ্যরাতে পুলিশ কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদার নির্দেশে পত্রিকা অফিস ঘেরাও করে সেই সংবাদ ও ছবি নিয়ে যায় পুলিশ।
সাক্ষ্যগ্রহণের পর আদালতে অঞ্জন কুমার সেন ও শেফালি সরকারকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল হক হেনা।
স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় নগরীর লালদিঘি ময়দানে সমাবেশে যাবার পথে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে নিহত হন ২৪ জন। আহত হন কমপক্ষে দুই শতাধিক মানুষ। আদালত সূত্র জানায়, এরশাদ সরকারের পতন হলে ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে মরহুম আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় হত্যাকাÐের সময় পুলিশ কমিশনারের দায়িত্বে থাকা মীর্জা রকিবুল হুদাকে প্রধান আসামি করা হয়। আদালতে দুই দফায় আলোচিত এ মামলার চার্জ গঠন (দ্বিতীয় দফায় সংশোধিত আকারে) করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।