গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
হাসান সোহেল : বিশ্ব ক্যান্সার দিবস আজ। ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে ‘আমরাই পারি, আমিও পারি’ শীর্ষক স্লোগানে বিশ্বব্যাপী দিবসটি উদ্যাপিত হচ্ছে। মারণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৮০ লাখেরও বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে, যার অর্ধেকেরই মৃত্যু হয় অপরিণত বয়সে। বাংলাদেশেও এই রোগের চিত্র আশঙ্কাজনক। দেশে এখনও ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার সুব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। দক্ষ চিকিৎসক, নার্স ও টেকনোলজিস্টের অভাব রয়েছে। আর এ কারণেই দেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের ১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে অসংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রোগী মৃত্যুবরণ করে, যার সিংহভাগই ক্যান্সারজনিত কারণে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে ক্যান্সারের চিকিৎসা অপ্রতুল। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ১৫টি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিবছর ৫০ হাজার রোগীকে চিকিৎসা সেবার আওতায় আনা সম্ভব। বাকি ২ লাখ রোগীর অধিকাংশই অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের মধ্যে পড়ে অপচিকিৎসা বা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত।
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। এসব রোগীদের মধ্যে ফুসফুস, মুখগহ্বর, রক্তনালি, জরায়ু ও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। মহিলা রোগীদের মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগ জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত। সারাদেশে এই রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদের সংখ্যা মাত্র ৮৫ জন। একই সঙ্গে ৩ হাজার রোগীর জন্য একটি মাত্র শয্যা বিদ্যমান।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক এবং ইউএনআইসিআরএইচ প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ডা. মো. মোয়াররফ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, দেশে ক্যান্সার চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ রয়েছেন ১১০ জন। বিশেষজ্ঞ নার্সের পাশপাশি এ রোগ থেকে উত্তরণে এবং চিকিৎসকদের সহায়তায় ফিজিসিস্ট দরকার। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সরকারিভাবে কোনো ফিজিসিস্ট নেই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিছু পদ সৃষ্টি করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে কিছু পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এখনো ওই পদে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্ভব হলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে তারাও কিছুটা সহযোগিতা করতে পারবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর দেশে ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং ১ লাখ ৫০ হাজার রোগী মৃত্যুবরণ করে। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের (আইএআরসি) সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর হার শতকরা ৭ দশমিক ৫ ভাগ। বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ এই হার ১৩ শতাংশে ছাড়িয়ে যাবে। ডব্লিউএইচও’র তথ্যমতে, প্রতি ১০ লাখ জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজন একটি রেডিওথেরাপী চিকিৎসা কেন্দ্র। সে অনুযায়ী ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজন রেডিওথেরাপি মেশিন ও প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল সম্বলিত ১৬০টি ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র। অথচ মহাখালীর ক্যান্সার ইনষ্টিটিউট ও ঢাকা মেডিকেলসহ মাত্র কয়েকটি বিভাগীয় শহড় ছাড়া রেডিওথেরাপি চিকিৎসার মেশিনই নেই।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ রয়েছেন মাত্র ১১০ জন। যাদের বেশিরভাগই রাজধানীতে বসবাস করছেন। চিকিৎসক অপ্রতুলতায় সারাদেশের জেলা হাসপাতালগুলোতে নেই ক্যান্সার চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা। মেডিকেল কলেজগুলোতেও চিকিৎসক ও শয্যার সংখ্যাও অপ্রতুল। এমনকি ক্যান্সার রোগীদের সেবা করার জন্য নেই প্রশিক্ষিত অনকোলজিস্ট নার্স এবং বিশেষজ্ঞ ফিজিসিস্ট।
বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীদের ৬৬ শতাংশের বয়স ৩০ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে, এ বিষয়টি উল্লেখ করে জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার সনাক্ত করে দ্রুত নিরাময় সম্ভব না হলে এ রোগের কারণে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ কারণে ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা ও সেবা বৃদ্ধির ওপরও জোর দেওয়া হয় ওই কর্মপরিকল্পনায়। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও কয়েকটি বিষয়ে নীতিনির্ধারণ ছাড়া সামগ্রিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. মো. মফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান বিশ্বে দ্বিতীয় মারণব্যাধি ক্যান্সার। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্বে ক্যান্সার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী মরণব্যাধি এই রোগে আক্রান্ত। যাদের অধিকাংশই চিকিৎসার বাইরে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্যান্সার চিকিৎসার আধুনিকায়ন ও মানসম্পন্ন দক্ষ বিশেষজ্ঞ তৈরি, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রতিরোধে গুরুত্বারোপ না করলে এটা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি প্রফেসর ডা. মোল্লা ওবায়দুল্লাহ বাকী বলেন, বাংলাদেশে বছরে প্রায় তিন লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে প্রায় ২ লাখ লোকের মৃত্যু হয়। এই রোগীদের মধ্যে ফুসফুস, মুখগহ্বর, রক্তনালি, জরায়ু ও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। প্রাথমিকভাবে এ ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে প্রায় ৫০ ভাগ রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। একই সঙ্গে শুধু প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক এবং পর্যাপ্ত রোগনির্ণয় ব্যবস্থা না থাকায় ক্যান্সার আক্রমণ ও মৃত্যুর হাত থেকে এসব রোগীকে জীবনের নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, দেশে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা একবারেই অপ্রতুল। তাছাড়া চিকিৎসা বা রোগ নির্ণয়ের জন্য নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ সম্পর্কে তিনি বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ রয়েছেন ১১০ থেকে ১২০জন। তবে কোনো প্রশিক্ষিত নার্স নেই বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য, প্রতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বে ক্যান্সার দিবস পালিত হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষ্যে আজ জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ইউনাইটেড হসপিটালসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।