Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পূর্ব তুর্কিস্তান দখলসহ ২০ দেশের সঙ্গে ভূখণ্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব চীনের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২০, ১২:০৮ পিএম

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব তুর্কিস্তান এক সময় সৌভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিলো। সেটিকে চীন দখল করে নিজেদের করে নেয়। সৌভিয়েত ইউনিয়নের অংশ থাকলে আজ একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে আর্ভিভূত হত। এছাড়াও কিরগিজিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাই, ভারত, রাশিয়া, জাপানসহ ২০টি দেশের বিভিন্ন অংশকে নিজেদের বলে দাবি করে চীন. কোথাও সমুদ্র, কোথাও নদী, কোথাও বা জমি। চল্লিশের দশকে প্রতিবেশী পূর্ব তুর্কিস্তান দখল করে শিনজিয়াং প্রদেশ বানিয়েছিল চীন।
আন্তর্জাতিক আইন (ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অব দ্য ল’জ অব দ্য সি) না মেনে দক্ষিণ চীন সাগরের একাধিক ছোট-বড় দ্বীপ দখল এবং সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অভিযোগ রয়েছে চীনের বিরুদ্ধে। এমনকি, দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের একাধিপত্য কায়েমের চেষ্টা বানচাল করতে আমেরিকাও সক্রিয়।
কুয়োমিনতাং দলের নেতা চিংয়া কাই শেক প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন চীন (তৎকালীন রিপাবলিক অফ চায়না) সরকার প্রকাশিত এক ম্যাপে দক্ষিণ চীন সাগরে ছোট ছোট ১১টি রেখা দিয়ে ঘেরা একটি মানচিত্র প্রকাশ করে। চীনের বক্তব্য ছিল, এই রেখা দিয়ে ঘেরা অংশটা তাদের।

এই ‘ইলেভন ড্যাশ লাইন’-এর মধ্যের ডুবো-পাহাড়ের মাথা, প্রবাল প্রাচীর আর দ্বীপগুলোর একসঙ্গে নাম দেওয়া হয় ‘ম্যাপ অব সাউথ চায়না সি আইল্যান্ডস’। এর মধ্যে ছিল প্যারাসেল আইল্যান্ডস, স্প্র্যাটলি আইল্যান্ডস, ম্যাকক্লেসফিল্ড ব্যাঙ্ক এবং স্কারবরো শোল।

দু’বছর পরে চিনে ক্ষমতায় আসে কমিউনিস্ট পার্টি। কিন্তু মাও জে দংয়ের ‘পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না’ও এই একই ম্যাপ অনুসরণ করতে থাকে। পঞ্চাশের দশকে চিন ‘গাল‌্ফ অব টংকিন’কে ভিয়েতনামের হাতে তুলে দেওয়ার ফলে দু’টি বিন্দু বাদ পড়ে হয় ‘নাইন ড্যাশ লাইন’।

১৯৭৪ সালে পিপলস লিবারেশন আর্মি ঝটিতি অভিযান চালিয়ে প্যারাসেল আইল্যান্ডস হটিয়ে দেয় ভিয়েতনামের বাহিনীকে। কয়েক বছর পরেই স্প্র্যাটলি আইল্যান্ডসের একাধিক দ্বীপ দখল করে। ২০০৯ সালে চিন রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে ম্যাপটি পেশ করে নিজের দাবি প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। দেখে নেওয়া যাক কোন কোন দেশের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা রয়েছে চীনের।

ব্রুনেই: স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে চীনা দখলদারির প্রতিবাদ জানিয়েছে ব্রুনেই। এই অঞ্চলে ব্রুনেইয়ে নিয়ন্ত্রণে থাকা লুইসা রিফ-সহ দু’টি দ্বীপে বেইজিংয়ের ‘নজর’ দীর্ঘ দিনের।

ফিলিপাইন: স্প্র্যাটলির কালায়ান দ্বীপ সংলগ্ন সমুদ্রগর্ভ থেকে সত্তর দশকে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন শুরু করে ফিলিপাইন। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এই দ্বীপ ফিলিপিন্সের অংশ। কিন্তু বেইজিংয়ের হুমকিতে একাধিক বার কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে ম্যানিলা।

মালয়েশিয়া: দক্ষিণ চিন সাগরের পাঁচটি দ্বীপ মালয়েশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। এগুলির অধিকার নিয়ে বেজিংয়ের সঙ্গে মতভেদ রয়েছে কুয়ালা লমপুরের।

সিঙ্গাপুর: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম সম্পদশালী এই রাষ্ট্রে মার্কিন নৌসেনার ঘাঁটি চীনের উষ্মার কারণ।

কম্বোডিয়া: চীন-পন্থী খমের রুজ দল ১৯৭৫ সালে ক্ষমতা দখলের পরে কম্বোডিয়ায় বেজিংয়ের প্রভাব শুরু। যদিও তিন বছরের বেশি স্থায়ী হয়নি কুখ্যাত পল পটের জমানা। সরাসরি চিনের সঙ্গে সীমান্ত না থাকলেও থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্ত সমস্যায় একাধিক বার নাক গলিয়েছে বেইজিং।

থাইল্যান্ড: মেকং (ল্যাংসাং) নদীতে চীনা বাঁধ আন্তর্জাতিক জলবণ্টন নীতির পরিপন্থী বলে থাইল্যান্ডের অভিযোগ। দক্ষিণ চীন সাগরের কয়েকটি দ্বীপ নিয়েও বিরোধ রয়েছে।

জাপান: দীর্ঘ দিন ধরেই পূর্ব চীন সাগরে জাপানের সেনকাকু এবং দিয়েউ দ্বীপের মালিকানা দাবি করছে বেইজিং।

ইন্দোনেশিয়া: দক্ষিণ চীন সাগরের কিছু অংশ এবং নাতুনা দ্বীপে আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইন্দোনেশিয়ার জাহাজের মাছ এবং অন্য জৈব সম্পদ সংগ্রহ নিয়ে আপত্তি চীনের।

লাওস: দেশটির উত্তর অংশের লাওতিয়ান অঞ্চলসহ বেশ কিছু এলাকাকে চীন তার উনান প্রদেশের অংশ বলে দাবি করে।

ভিয়েতনাম: দক্ষিণ চীন সাগরসহ বিভিন্ন এলাকা নিয়ে বিরোধ সত্তরের দশক থেকে। ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনাম আক্রমণ করেছিল চীনা সেনাবাহিনী। প্রায় সাড়ে তিন মাসের যুদ্ধে প্রায় ৩০ হাজার ভিয়েতনাম যোদ্ধা এবং সমসংখ্যক চীনা সেনার মৃত্যু হয়েছিল।

নেপাল: সম্প্রতি ফাঁস হওয়া নেপাল সরকারের একটি রিপোর্টে অভিযোগ, উত্তর এবং মধ্য সীমান্তে অন্তত ১২টি জায়গায় চীন সে দেশের জমি জবরদখল করেছে। রাস্তা বানানোর পাশাপাশি ছোট বাঁধ বানিয়ে নদীর গতিপথ ঘুরিয়েছে।

তাইওয়ান: চীনের বিরোধিতায় জেরেই এখনও জাতিসংঘের সদস্যপদ এবং ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি তাইওয়ান। চাইনিজ তাইপে নামে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক্স সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রটির পুরো অংশটাই দাবি করে বেইজিং।

উত্তর কোরিয়া: পাকতু পাহাড়, ইয়ালু ও তুমান নদী নিয়ে পুরনো বিবাদ থাকলেও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে থাকা কিম জং উন সরকার প্রকাশ্যে চীনের বিরোধিতা করে না।

দক্ষিণ কোরিয়া: খারাপ সম্পর্কের সূচনা পঞ্চাশের দশকে কোয়িয়ার গৃহযুদ্ধে চীনের অংশগ্রহণের সময় থেকেই। পূর্ব চীন সাগরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে দু’দেশের টানাপড়েন চলছে এখনও।

মঙ্গোলিয়া: রাশিয়া এবং চীনের মধ্যবর্তী ‘বাফার দেশ’টিতে বেজিং তারই অংশ বলে মনে করে। এক্ষেত্রে তাদের উদাহরণ, ত্রয়োদশ শতকের ইয়ান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি।

ভুটান: আশির দশকেই ভুটানের সর্বোচ্চ শিখর কুলা কাংরি ও সন্নিহত এলাকা দখন নিয়েছে চীন। গাংখর ফুয়েনসাম শিখর এবং ডোকলামের অদূরে জিপমোচি এলাকাতেও ‘নজর’ রয়েছে বেইজিংয়ের।

তাজিকিস্তান: প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো সীমান্ত বিরোধ বজায় ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন জমানাতেও। একাধিকবার সীমান্তে সেনাদের অনুপ্রবেশেরও অভিযোগ উঠেছে।

কাজাখস্তান: সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আরেক মুসলিম প্রজাতন্ত্র কাজাখস্তানের প্রায় ৩৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার দাবি করে চীন।

কিরগিজিস্তান: চীনের দাবি, ঐতিহাসিকভাবে সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অন্তর্গত এই মুসলিম প্রজাতন্ত্রের পুরোটাই তাদের অংশ।

রাশিয়া: প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল নিয়ে দুই পরাক্রমশালী দেশের দ্বন্দ্ব। ১৯২৯ এবং ১৯৫৯ সালে দু’দেশের সামরিক সংঘাতও হয়েছে। সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভ এবং চীনা চেয়ারম্যান মাওয়ের জামানার সীমান্ত সংঘর্ষে পিপলস লিবারেশন আর্মির প্রায় ৮০০ এবং রুশ সেনা বাহিনীর ১০০ সদস্য নিহত হয়েছিল। সূত্র: আনন্দবাজার

 

 

 



 

Show all comments
  • biplob ৬ জুলাই, ২০২০, ১:৪৬ পিএম says : 0
    China is a threat for humanity.
    Total Reply(0) Reply
  • Utpal kanti muhuri ৭ জুলাই, ২০২০, ৬:২৪ পিএম says : 0
    China anti humanity, wicked. She to feel bad result.
    Total Reply(0) Reply
  • Mustafizur Rahman Ansari ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:৪০ এএম says : 0
    Soon be destroy this policy
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ