Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাকিস্তান তার জনগণ ও আঞ্চলিক অখন্ডতা রক্ষায় সক্ষম

যে কোনও মূল্যে সম্পন্ন করা হবে সিপিইসি : ইমরান খান নিরাপত্তা সংক্রান্ত শীর্ষ বৈঠকে ঘোষণা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত শুক্রবার তার শীর্ষ সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তাকারীদের সাথে পরামর্শ করার সাথে সাথে পাকিস্তানের সুরক্ষা এজেন্ডা নিয়ে ভারতের সাথে আসন্ন দ্ব›েদ্বর সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানায়, প্রধানমন্ত্রী খান ‘অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের সভাপতিত্ব করেছেন। বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারভেজ খট্টক, জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল নাদিম রাজা, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, নৌ বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল জাফর মাহমুদ আব্বাসী, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মুজাহিদ আনোয়ার খান, আইএসআই মহাপরিচালক লে. জেনারেল ফয়েজ হামিদ এবং সামরিক অভিযান-এর মহাপরিচালক নওমান জিকরিয়া উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির অধিবেশনটির মতো অনেকটা দেখতে বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের তালিকায় দেখা যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মহমুদ কুরেশি, অর্থ উপদেষ্টা হাফিজ শেখ এবং জাতীয় নিরাপত্তার বিশেষ সহকারী উপস্থিত ছিলেন না যদিও তারা রুটিন অনুযায়ী এনএসসি সভার অংশ হতেন।

এদিন এফএম কুরেশি তার চীনা প্রতিপক্ষ ওয়াং ইয়ির সাথে টেলিফোনে কথোপকথনে আঞ্চলিক নিরাপত্তার পরিবেশকে দ্রুত ‘অবনতিশীল’ বলে আখ্যায়িত করার পটভ‚মিতে এই বৈঠক হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ অঞ্চলের শান্তি বিপন্ন করার জন্য ‘ভারতের যুদ্ধংদেহি মনোভাব ও স¤প্রসারণবাদী নীতি’কে দোষারোপ করেছেন। বৈঠকের পর গণমাধ্যমের জন্য ইস্যু করা বিবৃতিতে অধিবেশনটির মূল এজেন্ডা পয়েন্ট হিসেবে স্পষ্টত ইঙ্গিত করা হয় লাইন অব কন্ট্রোল বা এলএসি নিয়ে ভারত মনোনিবেশিত ভাষার প্রতি। ‘বৈঠক সিদ্ধান্তে এসেছে যে, পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব যে কোনও মূল্যে রক্ষা করা হবে। এটাও সমাধান করা হয় যে, পাকিস্তান তার প্রতিবেশীদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী, তবে আমাদের জনগণ এবং আঞ্চলিক অখন্ডতাকে রক্ষার ইচ্ছাশক্তি এবং ক্ষমতা উভয়ই আমাদের রয়েছে’। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বৈঠকে অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কেও এ বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে’।

পাকিস্তানি কৌশলবিদরা আশঙ্কা করছেন যে, গত আগস্টে অবৈধ সংযোজনের পর থেকে অধিকৃত কাশ্মীরে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ ভারতকে সামরিক, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের মাধ্যমে পাকিস্তানের সাথে সঙ্ঘাতের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, যা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিজ দেশেই খারাপভাবে তিরস্কারের মুখোমুখি করেছে। ভারতীয় সেনারা স¤প্রতি ৪৫ বছরের মধ্যে এটি প্রথম চীনা সেনাদের সাথে মারাত্মক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে যেখানে কমপক্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়।
ভারত-নেপাল সীমান্ত সঙ্ঘাতের ঝলকানি এবং কোভিড-১৯ এর কারণে অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ভারতীয় নেতাদের মধ্যে হতাশা জাগাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, পাকিস্তানকে আক্রমণ করা বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের পক্ষে একটি স্পষ্ট পছন্দ, কারণ তার সরকার ভালভাবেই জানে যে, পাকিস্তানবিরোধী মনোভাব তার নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ভাল বিক্রি হয়। ভারত সরকার গত বছর দুটি যুদ্ধবিমান খুইয়ে এবং একজন পাইলটকে বন্দি করার পরে রক্তাক্ত নাক নিয়ে সামরিক অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসেছিল। তবুও ভারতীয় জনতা পার্টি এটিকে জনসাধারণের কাছে একটি সাফল্য হিসাবে উপস্থাপন করে নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল।

গত মাসে চীনের সাথে দ্ব›েদ্ব ২০ সেনা নিহত হওয়ার পরে তারা আবার একই পাকিস্তান চাল ব্যবহার করেছিল। দিল্লিতে পাকিস্তানের মিশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এনে দিল্লিতে ক‚টনৈতিক উপস্থিতি অর্ধেক করা এবং একই সাথে ইসলামাবাদে তার হাই কমিশনের শক্তি হ্রাস করতে বলে।

ইতোমধ্যে ভারত বেশ কয়েকমাস ধরে পাকিস্তানের সাথে বিরোধের পরিবেশ তৈরি করে চলেছে। তারা নিয়মিতভাবে এলওসি জুড়ে পাকিস্তানকে অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনে এবং বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার জন্য কাশ্মীরি যোদ্ধাদের সাথে কার্যত প্রতিদিনের সংঘর্ষের কথা প্রচার করে যে, তারা সন্ত্রাসবাদের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে।
ভারতে একটি বিপজ্জনক অস্ত্র তৈরির ঘটনাও ঘটেছে, সুরক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন যে, তারা একটি সঙ্ঘাতের তীব্র হুমকির দিকে লক্ষ্য রেখেছিল। ভারত তার দেশের কোভিড -১৯ পরিস্থিতি সত্তে¡ও ইদানীং বড় প্রতিরক্ষা অধিগ্রহণের আদেশ দিয়েছে। মি. কুরেশি মি. ইয়িকে কথোপকথনের সময় বলেন যে, ভারতীয় উস্কানির পরেও পাকিস্তান সংযম প্রদর্শন করছে।

পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘উভয় দেশের নেতৃত্বে সর্বস্তরের কৌশলগত পরামর্শ ও সমন্বয়কে আরও দৃঢ় করার জন্য সম্মতি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যাতে সম্মিলিতভাবে শান্তি ও স্থিতিশীলতার যৌথ লক্ষ্য অর্জন করতে পারে’। বিবৃতিতে আরে বলা হয়, দু’জন এ অঞ্চলটির মুখোমুখি চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য মুখোমুখি বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

যে কোনও মূল্যে সিপিইসি সম্পন্নের প্রতিশ্রুতি
ভারতের সঙ্গে সীমান্ত ইস্যুতে যখন চীনের বিবাদ তুঙ্গে, ঠিক সেই সময়েই চীনের সঙ্গে সুসম্পর্কের সেতু মজবুত করতে এককদম এগোলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। যে কোনও মূল্যে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইমরান।

শুক্রবার সিপিইসি প্রকল্প নিয়ে অপর এক বৈঠক করেন ইমরান খান। সে বৈঠকের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এটা দারুণ প্রকল্প। সরকার এই প্রকল্প যে কোনও মূল্যে সম্পন্ন করবে। উল্লেখ্য, স¤প্রতি সিপিইসি প্রকল্প নিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশির সঙ্গে আলোচনা করেছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।

ইমরান খান বলেছেন, এ করিডোর ‘পাকিস্তান-চীন বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ’ এবং পাকিস্তান সরকার ‘যে কোনও মূল্যে এর কাজ সম্পন্ন করবে’। আর একবার সিপিইসির পুরোপুরি তৈরি হয়ে গেলে তার ফল প্রত্যেক পাকিস্তানি পাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সিপিইসিকে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য একটি দুর্দান্ত প্রকল্প হিসাবে অভিহিত করে তিনি বলেন, এই বিশাল-বহুমুখী উদ্যোগ পাকিস্তানের জন্য নিশ্চিতভাবে উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ে দেবে।

সিপিইসি হল চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি প্রকল্প, যার মধ্যে রয়েছে হাইওয়ে বা মহাসড়ক, রেললাইন, বিমানবন্দর এবং সামুদ্রিক বন্দরের মতো পরিকাঠামোগত প্রকল্প। এটি চীনের মাল্টি বিলিয়ন ডলারের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর একটি অংশ। ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ হল স্থল ও পানিপথের একটি বিস্তৃত ব্যবসায়িক সরবরাহের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপকে চীনের সংযুক্ত করার বিশাল এক প্রকল্প। সিপিইসি করিডোর চীনা শহর কাশগড়-কে আরব সাগরের বুকে অবস্থিত পাকিস্তানের গোয়েদার বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। ২০১৬ সালে সিপিইসি আংশিকভাবে চালু হয়েছিল। গোয়েদার বন্দরের মাধ্যমে চীনা পণ্যসম্ভার সামুদ্রিক পথে আফ্রিকা এবং পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে রফতানি শুরু হয়েছিল। ২০১৭ সালের শেষদিকে চালু হয়েছিল বেশ কিছু বড় বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প। সূত্র : ডন অনলাইন।



 

Show all comments
  • Shafiq Rahman ৬ জুলাই, ২০২০, ১:০৩ এএম says : 0
    তোমরা ভাল থাকো - এটাই আমার প্রত্যাশা
    Total Reply(0) Reply
  • সজল মোল্লা ৬ জুলাই, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    পাকিস্তানকে এই মুহূর্তে একটা স্ট্রং সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভারতকে লাই দিলেই পেয়ে বসবে।
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ খান ৬ জুলাই, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    পাকিস্তানের চীনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আত্মনির্ভরতা আরও বাড়ানো দরকার। ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়।
    Total Reply(0) Reply
  • মেহেদী ৬ জুলাই, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
    ইমরান খানের জন্য শুভ কামনা রইলো। এগিয়ে যাও পাকিস্তান।
    Total Reply(0) Reply
  • কামাল ৬ জুলাই, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
    কাশ্মীরের মুসলিমদের জন্য কিছু একটা করা এখন সময়ের বড় দাবি। ভারতীয় বাহিণীর বর্বরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Salah Uddin ৬ জুলাই, ২০২০, ৬:১৬ এএম says : 0
    ভারতে চিকিৎসা সেবা নিতে গত বছর গিয়েছিলাম। চেন্নাই বিমান বন্দরে যখন যাই, তখন জানতে পারে আমি বাংলাদেশের মুসলিম। ...........রা খুবই খারাপ আচরণ করে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ