Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভিজ্ঞতা নিতে যাচ্ছেন শিরিন

প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জাহেদ খোকন : বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তারের ইচ্ছা রিও অলিম্পিকের অভিজ্ঞতা কাঠমান্ডু সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে কাজে লাগানো। ব্রাজিল থেকে তিনি এমন অভিজ্ঞতা নিয়েই ফিরতে চান, যা ২০১৯ সালে কাঠমান্ডু এসএ গেমসে স্বর্ণ জিততে সহায়ক হয়।
এবারের অলিম্পিক গেমসে বাংলাদেশের পাঁচ ডিসিপ্লিনের যে সাতজন ক্রীড়াবিদ অংশ নিচ্ছেন তাদের মধ্যে নৌ-বাহিনীর অ্যাথলেট শিরিন আক্তার অন্যতম। রিও অলিম্পিক গেমসে তিনি মহিলাদের ১০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নেবেন। তার লক্ষ্য নিজের সেরা টাইমিং অতিক্রম করা।
আকাশছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে ২০০৭ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন শিরিন। তখন থেকে তার প্রধান লক্ষ্যই ছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া আসর অলিম্পিক গেমসে অংশ নিয়ে দেশের মান বাড়ানো। গুটি গুটি পায়ে পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর। এরই মধ্যে বিকেএসপি থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের ¯œাতক শ্রেণীর ছাত্রী শিরিন। শৈশবে লালন করা স্বপ্নপূরণের সুযোগ পেলেন অবশেষে। ওয়াইল্ড কার্ডের মাধ্যমে রিও অলিম্পিক গেমসে অংশ নিচ্ছেন দেশসেরা এই নারী অ্যাথলেট। আগামী ৫ আগস্ট ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও শহরে শুরু হচ্ছে এবারের অলিম্পিক গেমস। শেষ হবে ২১ আগস্ট। আসরে অংশ নিতে ১ আগস্ট দেশের দ্রæততম মানব মেজবাহ আহমেদের সঙ্গে দেশ ছাড়বেন শিরিন।
শৈশবে লালন করা স্বপ্নপূরণের পথটি শিরিনের জন্য মোটেও মসৃণ ছিল না। চলতি বছরের শুরুতে গৌহাটি-শিলং এসএ গেমসের দু’ইভেন্টে ব্রোঞ্জপদক জিতলেও রিও অলিম্পিকের ওয়াইল্ড কার্ড পেতে প্রথম দফায় ব্যর্থ হন তিনি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম চেঙ্গিসের উদ্যোগের ফলে ব্রাজিলে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয় শিরিনের। তাই তো উচ্ছ¡সিত দেশের তিনবারের দ্রæততম মানবী অনুশীলনে ঘাম ঝরাচ্ছেন। অলিম্পিকে খেলতে যাওয়ার আগে নিজেকে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত রাখছেন। অনুশীলনের ফাকে কথা বলছেন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে।
রিওতে নিজের লক্ষ্য প্রসঙ্গে শিরিন ইনকিলাবকে বলেন, ‘অলিম্পিক আসর হচ্ছে বিশ্বসেরা অ্যাথলেটদের মিলন মেলা। সেখানে খেলার সুযোগ পাওয়াটা অনেক বড় ব্যাপার। বিশ্বসেরা তারকাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করাটাই আমার কাছে বড় কিছু। তাদের সান্নিধ্য নেয়া, তাদের খেলার ধরন খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা আমার পরবর্তী পথ চলায় অনুপ্রেরণা যোগাবে। এটাই ছিল আমার অ্যাথলেট জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন, যা পূরণ হবার পথে। রিও’র অভিজ্ঞতা আমি আসন্ন এসএ গেমসসহ এশিয়ান প্রতিযোগিতায় কাজে লাগাতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘যখন প্রথম দফায় আমার ওয়াইল্ড কার্ড আসেনি তখন কিন্তু আমি আশা ছেড়ে দেইনি। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম চেঙ্গিস স্যারের উপর আমার পুর্ন আস্থা ছিল। শেষ পর্যন্ত উনার চেষ্টাতেই আমি এবং মেজবাহ ব্রাজিল যেতে পারছি। তিনিই আমাকে অলিম্পিকে অংশগ্রহণের খবরটি প্রথম জানান।’
এ প্রসঙ্গে ইব্রাহিম চেঙ্গিস বলেন, ‘আসলে শুরুতে হয়তো কোনো জায়গায় একটি গ্যাপের সৃষ্টি হয়েছিল। যে কারণে শিরিন ও মেজবাহ’র অলিম্পিকে অংশ নেয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। তবে আমি দ্রæত বিষয়টি জানিয়ে অ্যালেটিকসের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএএএফকে জানাই। পরে প্রচেস্টার ভিত্তিতে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) এবং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কািমটি আইওসির সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ওয়াইল্ড কার্ড পাই।’
শিরিনের জন্ম সাতক্ষীরা জেলার দহকোলায়। তিনি দহকোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় থেকেই আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় সাফল্য পাওয়া শুরু করেন। প্রথমিক স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে যখন কারিমা মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হন তখন আশপাশের সব জায়গায় তার প্রতিভার কথা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিনের দৃষ্টিতে পড়েন শিরিন। উনার সহযোগিতায় ভর্তি হন বিকেএসপিতে। বাবা শেখ আবদুল মজিদ ও মা আঙ্গুরা বেগমের চার মেয়ে সন্তানের দ্বিতীয় শিরিন।
বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েই জাতীয় পর্যায়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে দেখা দেন এই কৃতী অ্যাথলেট। জাতীয় পর্যায়ে দ্রæততম বালিকা ও কিশোরীর পর ২০১৪ সালে জাতীয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতার ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের দ্রæততম মানবীর খেতাব দখলে নেন। দেশে পরপর তিনবার দ্রæততম মানবীর খেতাব জেতা সহ শিরিন ইতোমধ্যে লাভ করেন বিদেশে বেশ কটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের অভিজ্ঞতা। ২০১৩ সালে জুনিয়র সাফ গেমসের চার গুণিতক ১০০ ও চার গুণিতক ৪০০ মিটার রিলেতে তৃতীয় স্থান পান।
২০১৪ সালে তিনি স্কটল্যান্ডের গøাসগোতে অনুষ্ঠিত কমনওলেথ গেমস, একই বছর থাইল্যান্ডের ফুকেটে অনুষ্ঠিত এশিয়ান বিচ গেমস, ২০১৫ সালে চীনের গুয়াংজু শহরে অনুষ্ঠিত এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহনের সুযোগ লাভ করে নিজের অভিজ্ঞতার ভাÐারকে সমৃদ্ধ করেন।
এর আগে ২০১৩ সালে ভারতের পুনেতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশীপ, ২০১৩ সালে রাচিতে জুনিয়ার সাফ গেমস ও ২০০৯ সালে ইয়থ গেমসে অংশ নিয়ে ক্রীড়ার মাধ্যমে দেশকে বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দেয়ার দীক্ষা নেন শিরিন। তার একটাই দু:খ। আর তা হলো, দেশ বা বিদেশে কোন আসরে খেলার আগে প্রশিক্ষণের জন্য রাষ্ট্রীয় বা কর্পোরেট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কোন আর্থিক সহযোগিতা পান না ক্রীড়াবিদরা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তিনি। বাবা একজন গরিব কৃষক হবার কারণে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে শিরিনকে। নৌ-বাহিনী র ক্রীড়াবিদ হওয়ার সুবাদে সেখান থেকে প্রাপ্ত বেতনের সামান্য কিছু অর্থ ছাড়া আর কোন আয় নেই তার। খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান দেশের দ্রæততম এই মানবী। রিও অলিম্পিকে খেলতে যাওয়ার আগে শিরিন দেশবাসীর কাছে দোয়া চান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অভিজ্ঞতা নিতে যাচ্ছেন শিরিন
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ