Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মীরসরাইয়ে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গাছ চুরির মহোৎসব

মীরসরাই (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২০, ২:১০ পিএম

বৈশ্বিক মহামারী করোনাও যেন হার মেনে যাচ্ছে গাছ চোরদের হাতে। দেশে দেড় লাখ ছাড়িয়েছে করোনা সংক্রমণ। মানুষের মরণ যেখানে দুয়ারে কড়া নাড়ছে সেই পরিস্থিতির মুখেও একদল দুর্বৃত্ত মরণপণ গাছ চুরির মহোৎসবে নেমেছে। একটি সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্ত চক্র প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টির মধ্যেও গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ এলাকার জোরারগঞ্জ টু বাংলাবাজার সড়কের দেওয়ানপুর গ্রামের অংশে, জোরারগঞ্জ টু মুহুরী প্রজেক্ট সড়কের নন্দনপুর অংশে, ঢাকা-”ট্টগ্রাম পুরাতন মহা সড়কের চৈতণ্যের হাট থেকে বারইয়ারহাটের অংশের দু’ধারের প্রায় দেড় শতাধিক গাছ। রাতের আঁধারে গাছ কেটে কাদামাটি বা আবর্জনা দিয়ে ঢেকে রাখা হচ্ছে গুঁড়িগুলো। স্থানীয় প্রভাবশালীদের যোগসাজশে গাছগুলো কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। জোরারগঞ্জ টু বাংলাবাজার সড়কের দেওয়ানপুর গ্রামের অংশে শনিবার রাতে ১০টি গাছ কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।

উল্লেখিত সড়কগুলোর দু’পাশে বন বিভাগের সামাজিক বনায়নে প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৬ সালে একটি কমিটির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করে। এর মধ্যে মেহগনি, রেইনট্রি, আকাশমনি, বাবলা ও শিশুগাছ সহ নানান প্রজাতির গাছ রয়েছে। গত ২৪ বছরে গাছগুলো ২২ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত বেড়ে উঠেছে। জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের এসব মহাসড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার জুড়ে সরকারি এই গাছগুলোর প্রতি কু-নজর পড়েছে স্থানীয় ‘গাছখেকো’ একটি চক্রের। গত এক বছরে রাতের আঁধারে তারা অনেক গাছ করাত দিয়ে কেটে বিক্রি করে পকেট ভারি করেছে। মাঝেমধ্যে স্থানীয়রা আঁচ করতে পারলেও চক্রটির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে স্থানে সড়কের পাশের বেশ কিছু মেহগনি, ইউক্যালিপটাস, আকাশ মনি উপড়ে নেওয়া হয়েছে। আবার কেটে নেওয়ার পর কিছু গাছের গোড়া চুরির সাক্ষী হয়ে রয়ে গেছে।
জোরারগঞ্জ-বাংলাবাজার সড়কের সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী সমিতির সভাপতি খাবির ইবনে আমিন জানান, রাত বাড়ার সাথে সাথে সড়কগুলোতে মাঝে মধ্যে দু-একটা মাছবাহী ট্রাক ছাড়া অন্য কোন যান চলচল একেবারেই থাকে না, জোরারগঞ্জ টু বাংলাবাজার সড়কটি রাতের বেলা একেবারেই যানবাহন ও জনমানব শূণ্য থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগায় গাছ চোরেরা। গত এক বছরে দেড় শতাধিক গাছ চুরি হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে রাস্তার পাশে কোন গাছ দেখা যাবে না। চোরেরা প্রায়ই সময় রাস্তার গাছ কেটে নিয়ে যায়। দিনের পর দিন রাস্তার দুপাশের গাছগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে রাস্তায় দিনে দিনে গাছের সংখ্যা কমছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকাবাসী জানান, এসব সড়কের দুপাশ থেকে দিনের পর দিন রাতের অন্ধকারে গাছ চুরি হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যপারে বনবিভাগের কোন মাথা ব্যাথা নেই। এ চুরির সাথে এ এলাকার কাঠ ব্যবসায়ীরা জড়িত থাকতে পারে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী। কাঠ ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই চুরির বিষয়টি বেরিয়ে পড়বে বলেও তারা জানান। তবে নিয়মিত ভাবে তাজা গাছ চুরি গেলেও খোঁজ নেয় না কেউ।
এ ব্যাপারে মীরসরাই উপকূলীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা এরফান উদ্দিন সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানান, সরকারীভাবে সামাজিক বনায়নের আওতায় রোপনকৃত উপকারভোগীদের গাছ চুরির ঘটনা দুঃখজনক। আমরা অতি শীঘ্রই এব্যপারে ব্যাবস্থা নেব।
এ ব্যাপারে মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, মানুষের এই সংকটকালে নিয়মিত গাছ চুরির ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এই ব্যাপারে উপকারভোগী, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও উপকূলীয় বনবিভাগের কর্মকর্তার সাথে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ