Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সৈয়দপুরে করোনাযোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মী আবু তাহের সিদ্দিকী দিনরাত নিরলস ছুটছেন

সৈয়দপুর (নীলফামারী) জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০২০, ৮:২৭ পিএম

করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই কি কর্মদিবস, কি ছুটি। দিনরাত সমানে নিরলস ছুঁটছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের চার সদস্যের একটি টিম। আর এ টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. আরমান হোসন রনি। টিমের অন্য সদস্যরা হচ্ছেন সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) আবু তাহের সিদ্দিকী, মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব) মামুনুর রশীদ এবং মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট মো. আল-আমিন। তারা প্রতিনিয়ত করোনা সংক্রমণ রোগীর নমুনা সংগ্রহ, সংগৃহিত নমুনা নীলফামারী সিভিল সার্জন অফিসে পৌঁছানো, আক্রান্তদের আইসোলেশন ও লকডাউন নিশ্চিত করছেন। আজ সোমবার (২৯ জুন) বিকেলে সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস কক্ষে বসে এ উপজেলা সংবাদদাতার সঙ্গে কথা হয় মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) আবু তাহের সিদ্দিকীর সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন “ভাই কি আর বলব, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই একদিনের জন্যও নিজ বাসায় গিয়ে দুপুরের খাবার খেতে পারিনি। সকালে বাসা থেকে খেয়ে বের হয়েছি; তো একেবারে রাতে বাসায় গিয়ে রাতের খাবার খেতে হয়েছে। গত শুক্রবার (২৬ জুন) বৃষ্টিপাতের কারণে করোনার নমুনা সংগ্রহ করতে যেতে হয়নি। তাই দীর্ঘদিন পর বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে বসে অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে দুপুরের খাবার খেতে পেলাম।” এভাবে চলমান করোনাকালে নিজের পেশাগত কর্মব্যস্ততার কথা ব্যক্ত করলেন মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) মো. আবু তাহের সিদ্দিকী। তিনি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) পদে কর্মরত।
মো. আবু তাহের সিদ্দিকী স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে ১৯৮৯ সালে ১১ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগদান করেন। আর গত ২০১০ সালে ২৫ অক্টোবর মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট পদে যোগদান করেন। এরপর তিনি ২০১৫ সালে ঢাকাস্থ ইন্সটিটিউট অব হেলথ্ টেকনোলজি থেকে তিন বছরমেয়াদী মেডিক্যাল টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা অর্জন করেন। সেই থেকে সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) হিসেবে অত্যন্ত ন্যায়, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে তাঁর দায়িত্ব কর্তব্য পালন করে আসছেন তিনি। বর্তমান বৈশ্বিক জীবনঘাতী করোনার সংক্রমণ শুরু থেকে তাঁর দায়িত্ব কর্তব্য আরো কয়েকগুন বেড়ে গেছে। নিয়মিত নিজের দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে আবু তাহের সিদ্দিকীকে স্বাস্থ্য বিভাগের টিমে থেকে করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করতে হচ্ছে। প্রতিদিন সকালে বাসা থেকে অফিসে যান। এরপর আগের দিনের পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজণীয় পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইক্যুমেন্ট (ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম) পরিধান করে নমুনা সংগ্রহে বেরিয়ে পড়েন। এ সময় সঙ্গে থাকে নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজণীয় সব উপকরণ। এরপর নমুনা সংগ্রহের পর অফিসে এসে কাগজপত্র তৈরি করে নমুনা নিয়ে আবার ছুঁটতে হয় নীলফামারী সিভিল সার্জন দপ্তরে। সেখানে যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে নমুনা জমা করে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। তবে বাসা ফিরে তিনি প্রথম ঢুকে পড়েন বার্থরুমে। সেখানে প্রথমে নিজের পরিধেয় পোষাক খুলে পরিস্কারের ব্যবস্থা করেন। এরপর গোসল সেরে তবেই নিজ কক্ষে প্রবেশ করেন। এরপর রাতের খাবার খান তিনি। এ রকম রুটিনে তাঁর গত ৩/৪ মাস যাবৎ জীবনযাপন চলছে।
আবু তাহের সিদ্দিকী আরো বলেন, গত ৩ এপ্রিল থেকে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে তাঁর। আর ৭ এপ্রিল সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের খালিশা বেলপুকুর বক্শীপাড়া গ্রামের অসুস্থ মো. হাফিজুল হক বিটুলের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গত ৯ এপ্রিল তাঁর (বিটুল) করোনা ভাইরাস পজিটিভ ফলাফল আসে। এ কারণে নমুনা সংগ্রহকারী হিসেবে তিনি (আবু তাহের সিদ্দিকী) একটানা ১৮ দিন বাসায় যাওয়া হয়নি। অফিসের একটি কক্ষে রাত যাপন করেছি। বাসা থকে শুধুমাত্র তিন বেলা খাবারটুকু আসতো। তাঁর ছেলে বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসে অফিসে পৌঁছে দিয়ে যেতে প্রতিদিন। নমুনা সংগ্রহ করতে কখনও অসুস্থ আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়িতে আবার কখনো হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে গিয়ে ভর্তি থাকা রোগীদের কাছে যেতে হচ্ছে। আজ ২৯ জুন পর্যন্ত ৪৭১টি নমুনা সংগ্রহ করেছেন তিনি ও তাঁর সহকর্মী। একদিনে সর্বোচ্চ ২৪টি পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করেছেন তিনি। শুধু রোগীর নমুনা সংগ্রহই নয়। নমুনা সংগ্রহের পর তা যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে গত এপ্রিল এবং মে মাসে নীলফামারী সিভিল সার্জন অফিসে পৌঁছে দিতে হয় তাকেই। তবে চলতি জুন মাস থেকে নমুনা পৌঁছে দেওয়ার কাজে তাঁর সঙ্গে সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অন্য দুইজন কর্মচারী সংযুক্ত হয়েছেন। এখন তারা তিনজনমিলে পালাক্রমে তাঁদের সংগৃহিত নমুনা নীলফামারী সিভিল সার্জন অফিসে পৌঁছে দিচ্ছেন। এছাড়াও করোনা ভাইরাস পজিটিভ আসার পর সংক্রমিত ব্যক্তিকে উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে নিয়ে গিয়ে ভর্তি এবং তাদের বাড়ি লকডাউনে সহযোগিতা করতে হচ্ছে।
মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) মো. আবু তাহের সিদ্দিকী তাঁর চাকরির পাশাপাশি অবসরে বিভিন্ন বিষয়ের লেখালেখির সঙ্গেও ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। বিশেষ করে স্থানীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রপত্রিকা নিয়মিত কবিতা, গল্প ছাড়াও স্বাস্থ্য ও সাম্প্রতিক নানা বিষয়াদির ওপর লেখালেখি করেন তিনি। সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য বিষয় যে, চলমান করোনাকালে তিনি নমুনা সংগ্রহ ওপৌঁছানোর মধ্যদিয়েই তাঁর দায়িত্ব কর্তব্য শেষ করেননি। তিনি বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর ফেসবুকে আইডি থেকে সৈয়দপুর উপজেলার করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আপডেট তথ্য উপাত্ত দিয়ে চলেছেন। আর এ সব দেখে সৈয়দপুর উপজেলাবাসীসহ দেশ-বিদেশের মানুষ সৈয়দপুরের করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবগত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাসার জানান, মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. আরমান হোসেন রনির নেতৃত্বে মেডিক্যাল টিমের সকল সদস্যই তাদের কাজে অত্যন্ত দায়িত্বশীল। মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) আবু তাহের সিদ্দিকীসহ সবাই ন্যায় নিষ্ঠার সঙ্গে নিরলসভাবে দিন রাত কাজ করে চলেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ