বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চিকিৎসক ও নার্স সহ চিকিৎসা কর্মী সংকটে স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় বিপর্যয়ের মধ্যেই করেনা সংক্রমনে দক্ষিণাঞ্চলের পুরো স্বাস্থ্য সেবাখাত ভেঙে পড়ার উপক্রম। ফলে এ অঞ্চলের কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় সরকারী ভ’মিকা ক্রমশ গৌন হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে ৩১২ জন চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা কর্মী করেনা সংক্রমনের শিকার।
চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীদের পদ সৃষ্টি না করেই জেলাÑউপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করে বাহবা নেয়া হলেও পুরনো জনবল কাঠামোরই অর্ধেক পদ শূণ্য থাকায় গোটা দক্ষিণাঞ্চলের স্বাস্থ্য সেবা দীর্ঘদিন ধরেই সংকটের মধ্যে দিয়ে চলছিল। এরই মধ্যে সাম্প্রতিক করোনা সংক্রমনে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা কর্মী ‘কোভিড-১৯’এ আক্রান্ত হওয়ায় পরিস্থিতি আরো নাজুক আকার ধারন করেছে। ফলে অনেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা হাসপাতাল সহ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থা যথেষ্ঠ বিপর্যয়ের মুখে।
তবে এরপরেও কতৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার আপ্রান চেষ্টার কথা জানিয়েছেন। করোনা আক্রান্ত অনেক চিকিৎসক ও নার্স সহ চিকিৎসা কর্মী ইতোমধ্যে সুস্থ্য হয়ে উঠতে শুরু করলেও কাজে যোগ দিতে আরো কিছুদিন সময় লাগছে। পাশাপাশি প্রতিদিনই ডাক্তার-নার্স সহ অন্য চিকিৎসা কর্মীদের আক্রান্ত হবার সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। ফলে অনেক চিকিৎসকের মধ্যে দায়িত্ব পালনে এক ধরনের অনিহাও কাজ করছে বলে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের নির্ভরযোগ্য সূত্রের মতে, বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলা সদর ছাড়াও ৩৬টি উপজেলায় সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হাসপাতালগুলোতে মোট ১ হাজার ৮৭টি চিকিৎসকের পদের মধ্যে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৪শ পদই শূণ্য। তবে পুরনো এ জনবল কাঠামোর প্রায় ৪০% শূণ্য থাকার মধ্যেই পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠীর জেলা সদরের হাসপাতালগুলোর শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের ৩১ শয্যার বেশীরভাগ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হলেও জনবল শঞ্জুরী মেলেনি এখনো। পটুয়াখাালী ও ভোলা হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১শ থেকে আড়াইশ করা হলেও চিকিৎসক সহ অন্যসব জনবল মঞ্জুরী আগের অবস্থানেই রয়েছে। ঝালকাঠী, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলা সদর হাসপাতালগুলোও ৫০ শয্যা থেকে ১শ শয্যায় উন্নীত করা হলেও চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি হয়নি।
ফলে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীর ব্যপক সংকট অব্যাহত থাকার মধ্যেই করোনা সংক্রমনে নতুন দূর্যোগ নেমে এসেছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত হিসেব অনুযায়ী দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতালের অন্তত ৭০জন চিকিৎসক করেনা সংক্রমনের শিকার হয়েছেন। প্রতদিনই এসংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এমনকি বরিশালে দুজন সিনিয়র চিকিৎসক করেনা সংক্রমনে মৃত্যুবরনও করেছেন। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের জেলা-উপজেলা হাসপাতালগুলোতে কর্মরত ১১৮ জন নার্স ছড়াও ১৩২ জন স্বাস্থ্য কর্মী করোনা সংক্রমনের শিকার হয়েছেন ইতোমধ্যে। ফলে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতোমধ্যে চরম সংকটকাল অতিক্রম করতে শুরু করেছে। যদিও আক্রান্ত নার্সদের ৩৬ জন ও ৪৭ জন স্বাস্থ্য কর্মী সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন। কিন্তু প্রতিদিনই গড়ে আরো ১০জন নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ জেলা-উপজেলাতেই চিকিৎসকগন প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখা পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছেন অনেক আগেই।
অভিযোগ রয়েছে, মানসম্মত পিপিই সরবারহ না করায় প্রতিদিনই নতুন করে চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে রবিবার পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন চিকিৎসক সুস্থ্য হয়েছেন বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। এর পরেও প্রতিদিন নুতন করে আক্রান্তের তালিকায় চিকিৎসা কর্মীদের নাম যূক্ত হওয়ায় পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না।
বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরনে অবিলম্বে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের সব সরকারী হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীদের মানসম্মত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী-পিপিই সরবারহ সহ তার ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি দায়িত্ব বন্টনে নিয়মÑশৃংখলা ফিরিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
একইসাথে অবিলম্বে দক্ষিণাঞ্চলে সব জেলা-উপজেলা হাসপাতালগুলোতে বর্তমামান মঞ্জুরীকৃত চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মী পদে জনবল নিয়োগ সহ মান উন্নীত হাসপাতালগুলোর জন্যও নতুন জনবল কাঠামো মঞ্জুরীর পাশাপাশি পদায়নের দাবী জানান হয়েছে। অন্যথায় দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় সরকারী ভ’মিকা ও কর্মকান্ডের প্রতি জনগনের আস্থা আরো তলানীতে নেমে যেতে পারে বলেও শংকা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।