Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কোটি মানুষের জন্য একটি মাত্র পিসিআর ল্যাব

দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সনাক্তেই সময় লাগছে ৮-১০ দিন

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০২০, ৬:২২ পিএম

দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার কোটি মানুষের করোনা ভাইরাস সনাক্তে মাত্র একটি পিসিআর ল্যাব ক্রমবনতিশীল পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজের এ ল্যাবে প্রতিদিন গড়ে ২শর বেশী রক্তের নমুনা পরিক্ষা সম্ভব না হওয়ায় যেকোন সন্দেহভাজন রোগীকে পরিক্ষার জন্য ৮-১০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ফলাফল পেতে সময় লাগছে আরো ৩-৫দিন। ফলে ঐ সময়ের মধ্যে চিকিৎসার বাইরে থাকা বা আইসোলেশনে না থাকা রোগী ও তার সংস্পর্শে আসা নিকটজনদের অবস্থা কি হচ্ছে, তা নিয়ে শংকিত চিকিৎসকগন। ভোলায় অনুরূপ একটি ল্যাব স্থাপন হলেও জনবল সংকটে তা এখনো চালু করা যায়নি বলে জানিয়েছে বিভাগীয় পরিচালক। তবে পটুয়াখালীতে আরো একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন আরো জরুরী হলেও সে ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ‘কোভিড-১৯’ রোগী সনাক্ত সহ চিকিৎসা ব্যবস্থায় চরম সংকট অব্যাহত রয়েছে।
মার্চের শেষভাগে পটুয়াখালীর দুমকিতে প্রথম করেনা ভাইরাস রোগী সনাক্ত হয়। গত ৭ এপ্রিল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র পিসিআর ল্যাবটি চালু হবার পর থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত প্রায় ১৬ হাজার রক্ত পরিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এ পর্যন্ত পরিক্ষার ফলাফলে দক্ষিণাঞ্চলে আক্রান্তের হার ১৩.২৫%-এর কমবেশী বলে জানা গেছে। সরকারী হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলায় ইতোমধ্যে প্রায় আড়াই হাজার কোভিড-১৯ রোগী সনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে অর্ধ শতাধীক। সুস্থ হয়েছেন ছয় শতাধীক।
দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার মধ্যে বরিশালের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। তারমধ্যে বরিশাল মহানগরীর অবস্থা আরো ঝুকিপূর্ণ। ইতোমধ্যে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৪শর মধ্যে মহানগরীতেই সাড়ে ১২শ। জেলায় মোট মৃত্যু ২০ জনের মধ্যে মহানগরীতেই দুই চিকিৎসক সহ ১১ জন মারা গেছেন। এছাড়া অন্য জেলাগুলোর অবস্থাও প্রতিনিয়ত খারাপের দিকে যাচ্ছে। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি জেলাতেই আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যু হার অনেক বেশী। সুস্থ্যতার হারও কম। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, এপর্যন্ত মোট সুস্থ্য হয়েছেন মাত্র ৬৬০ জন । যার মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছেন মাত্র ১০জন।
সার্বিক পরিস্থিতি এবং জনসংখ্যার হিসেব সহ ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনায় দক্ষিণাঞ্চলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পটুয়াখালী ও ভোলাতে দুটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন। পরবর্তিতে বরগুনা ও পিরোজপুরেও অনুরূপ ল্যাব স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞগন।
তবে বরিশালে স্থাপিত একমাত্র পিসিআর ল্যাবটিতে দৈনিক প্রায় ৩শ রক্তের নমুনা পরিক্ষা সম্ভব হলেও জনবল সংকটে ১৮০ থেকে ২শর বেশী সম্ভব হচ্ছেনা। মেডিকেল কলেজের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, এখানে কমপক্ষে ৩০ জন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট সহ কর্মী প্রয়োজন হলেও আছেন মাত্র ১০জন। এমনকি অন্য জেলা বা স্থাপনা থেকে টেকনোলজিষ্ট প্রেসনে এনেও কাজ চালান যাচ্ছেনা। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১২০টি টেকনোলজিষ্ট পদের বিপরিতে কর্মরত মাত্র ৫৯ জন। প্রায় অর্ধেক পদই শূণ্য।
ফলে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজের সামনে প্রতিদিন লম্বা লাইনে দাড়ান কোভিড-১৯’এর সন্দেহভাজন রোগীদের অর্ধেকেরও রক্তের নমুনা সংগ্রহই সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি পুুলিশ সহ আইনÑশৃংখলা বাহিনী, চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মী এবং সরকারীÑআধাসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রক্ত সংগ্রহ করতে হচ্ছে। বেশীরভাগ সাধারন মানুষকেই ৮-১০ দিন পরে রক্ত পরিক্ষার তারিখ সম্বলিত স্লিপ ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতেকরে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলেই করেনা ভাইরাস সনাক্তের বিষয়টি যথেষ্ঠ বিতর্কিত হয়ে পড়ছে। একাধীক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরর মতে, যত বেশী পরিক্ষা, তত বেশী রোগী সনাক্তের পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসা সহ আক্রান্তেদের আইসোলেশনে রাখা সম্ভব হবে। ফলে অদুর ভবিষ্যতেই এ প্রানঘাতি সংক্রমনকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হতে পরে। তাদের মতে অবিলম্বে প্রতিটি জেলা সদরে রক্ত পরিক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার কোন বিকল্প নেই।
কিন্তু পিসিআর ল্যাবের অভাবে দক্ষিণাঞ্চলে রক্ত পরিক্ষার বিষয়টি যেমনি দীর্ঘায়িত হচ্ছে, তেমনি চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়েও নানা বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। রক্ত পরিক্ষায় যাদের ‘কোভিড-১৯’ সনাক্ত হচ্ছে, তাদেরকে সময়মত তা অবহিত না করা সহ চিকিৎসার খোজ খবর না নেয়ারও অভিযোগ করছেন একাধীক রোগী ও তাদের আত্মীয় স্বজন।
এদিকে শণিবার দুপুরের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণাঞ্চলে আরো ১১০ জন কোরোনা ভাইরাস রোগী সনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল জেলায়ই ৩৯ জন। যার মধ্যে মহানগরীতে সংখ্যাটা ৩০-এর বেশী। যা শুক্রবারে ছিল ২১ ও বৃহস্পতিবারে ৩০। এখনো করোনার হটস্পট বরিশাল মহানগরীর পরিস্থিতির উন্নতি লক্ষনীয় নয়। এছাড়া পটুয়াখালীতে গত ২৪ ঘন্টায় আরো ২৬ আক্রান্ত হয়েছে। যা আগের দিন ছিল ৩০। ভোলাতে গত ২৪ ঘন্টায় আরো ২২জন আক্রান্ত হয়েছে। যা আগের দিন ছিল ২৫। পিরাজপুরে গতকাল নুতন কোন আক্রান্ত ছিল না। তবে আগের ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত ছিল ১০ জন। এছাড়া বরগুনাতে নুতন করে ৯জন আক্রান্ত হবার খবর পাওয়া গেছে। তবে আগের দিন এ জেলায় কোন কোভিড-১৯ রোগী ছিলনা। ঝালকাঠীতে গতকাল আরো ৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। যা আগেরদিন ছিল ২১। ফলে দক্ষিণাঞ্চলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজারে উন্নীত হয়েছে। এ অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা এখন ৫৩।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ