পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত
পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রকল্পগুলো দ্রæত শেষ করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে মনিটরিং কমিটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এ কমিটির প্রধান। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে মনিটরিং করা হচ্ছে চলমান মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি। গতকাল বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত পর্যালোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেগা প্রকল্প দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পর্যালোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, সভায় প্রকল্পগুলোর অগ্রগতির সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরা হয়। সভায় প্রকাল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে ব্যাপক কর্মযজ্ঞের সিদ্ধান্ত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই কর্মযজ্ঞের নির্দেশনা দিয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এসব প্রকল্পের কাজে কোনো প্রকার দুর্নীতি, অনিয়ম, ঢিলেমি বরদাশত করা হবে না। তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যারা দুর্নীতি-অনিয়ম করবে তাদেরকে এক চুলও ছাড় দেয়া হবে না। সভায় করোনা সংক্রমণের মধ্যে যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানানো হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে অংগ্রহণ করেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস ইনকিলাবকে বলেন, মেগা প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। কোনো কারণে যেন প্রকল্পের কাজ থেমে না যায় সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অর্থের অভাব হবে না। সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো হচ্ছে- পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং দোহাজারী-ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং কাজের অগ্রগতি নিয়ে মনিটরিং কমিটি প্রতি তিন মাস অন্তর পর্যালোচনা সভা করে। এতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রকল্প পরিচালকরা উপস্থিত থাকেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে নিবিড়ভাবে প্রকল্পের অগ্রগতি তদারকি করেন। সর্বশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত জানুয়ারী মাসে।
পর্যালোচনা সভায় জানানো হয়, সরকারের অগ্রাধিকারমূলক ১০ প্রকল্পের ৩টি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের। এগুলো হচ্ছে- পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল ও মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প। করোনার মধ্যেও প্রথমটির কাজ পুরোদমে চলছে। কর্ণফুলী টানেল বন্ধ থাকলেও মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প কাজ চলছে সীমিত আকারে। আরও তিনটি বড় প্রকল্প রয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের। এগুলো হচ্ছে- পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে রেললাইন নির্মাণ, চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার নতুন রেললাইন নির্মাণ এবং আখাউড়া-লাকসাম মিটাগেজ ডবল লাইন নির্মাণ। প্রথমটির কাজ পুরোদমে চলছে, বাকি দুটির কাজ সীমিত আকারে চলছে। ১০ বড় প্রকল্পের বাকি চারটি বিদ্যুত খাতের। এগুলো হচ্ছে- পায়রা, রামপাল, মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক এবং রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প। প্রথম দুটির প্রকল্পের কাজ রিসিডিউল করার কথা ভাবছে সরকার। অর্থাৎ প্রকল্পগুলো নতুন করে সাজানো হচ্ছে। মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক এবং রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের কাজ পুরোদমে চলছে।
দেশের সবচেয়ে বড় পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ চলছে দ্রæততগতিতে। গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটির মধ্যেও পিয়ারের (খুঁটি) ওপর বসানো হয়েছে ৪টি স্প্যান। সব মিলিয়ে ৩১তম স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর সাড়ে ৪ কিলোমিটারেরও বেশি অর্থাৎ ৪ হাজার ৬৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ৮০ শতাংশ অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভায় জানানো হয়, করোনার মধ্যেও এগিয়ে চলছে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পের কাজ। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রতিদিন প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক সেখানে কর্মরত রয়েছেন। এই মহামারীর মধ্যেও গত মাসের মাঝামাঝি ১৯৩ জন নির্মাণ প্রকৌশলী, বিশেষজ্ঞ আর শ্রমিক রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্পের কাজে এসেছেন রাশিয়া থেকে। সব মিলে এ প্রকল্পে কর্মরত দেশী-বিদেশী ৮ হাজার জন। সভায় জানানো হয়, গত মার্চ থেকে জুন, চার মাসে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়েছে চুল্লির কাজ। নিউক্লিয়ার আইল্যান্ডে দুটি ইউনিটের একটিতে মাটি থেকে ৩৮ মিটারের বেশি অবকাঠামো এখন দৃশ্যমান।
অন্যদিকে রামপাল ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের কাজও চলছে ধীরগতিতে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব প্রকল্প উৎপাদনে আসতে পারছে না বলে জানানো হয়। এ ছাড়া বলা হয়, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট চলতি মে মাসে উৎপাদনে আসার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সেই প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট এবং রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্রের নির্মাণ কাজও চলছে ধীর গতিতে। এর মধ্যে রামপাল বিদ্যুত প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ডিসেম্বরে উৎপাদনে আসার কথা।
দেশে প্রথম মেট্রোরেল হচ্ছে ঢাকার উত্তরা তৃতীয় পর্ব-মতিঝিল পথে। ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ প্রকল্পের কাজ কোথাও সীমিত পরিসরে, কোথাও ব্যাপকভাবে চলছে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) আওতায় প্রকল্পের কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। সভায় ডিএমটিসিএলের তথ্যানুসারে জানানো হয়, এ পর্যন্ত সার্বিক কাজ এগিয়েছে ৪৫ শতাংশ।
ঢাকার ভেতরে প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে বনানী অংশটি আগামী অক্টোবরে গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে। একই প্রকল্পের মগবাজার লেভেলক্রসিং পর্যন্ত অংশ ২০২১ সালের জুলাইয়ে এবং ২০২২ সালের অক্টোবরের মধ্যে কমলাপুর হয়ে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী অংশের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। করোনার মধ্যেও সীমিত পরিসরে বিমানবন্দর-বনানী অংশে শ্রমিকরা কাজ করেছেন।
সূত্র জানায়, পর্যালোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী সবগুলোর প্রকল্পের অগ্রগতি, সুবিধা-অসুবিধা সব কিছু মনোযোগ দিয়ে শোনেন। তিনি দ্রæত প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, টাকার জন্য ভাবতে হবে না। প্রকল্প বাস্তবায়নে টাকার কোনো সমস্যা হবে না। একই সাথে তিনি দক্ষতা ও সততা-নিষ্ঠার সাথে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।