Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

করোনায়ও চাঙ্গা দক্ষিণ-পশ্চিমের গ্রামীণ অর্থনীতি

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০২০, ৪:৫৬ পিএম

স্মরণকালের মহাদুর্যোগ ও সংকটেও গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণশক্তি কৃষিখাত এগিয়ে চলেছে খাদ্যে উদ্বৃত্ত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। নীরব বিপ্লব ঘটছে গ্রামে গ্রামে। মাঠের আবাদী জমিই কৃষকদের বড় সম্পদ। স্বাচ্ছন্দ্য, অনায়াস উদ্দীপনা, উদ্যম ও শক্তি নিয়ে দিনরাত মাঠে পরিশ্রম করে অর্থনীতির চাকা ঘুরাচ্ছেন কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে জানা যায়, করোনার ধাক্কায় কৃষি উৎপাদন বেড়ে গেছে। বহু অনাবাদী জমি এসেছে আবাদের আওতায়। শুধু কৃষক নয়, এর সাথে জড়িতরাও আর্থিকভাবে হচ্ছেন লাভবান। বর্তমানে গ্রামীণ অর্থনীতি বহুলাংশে চাঙ্গা হয়েছে। লক্ষনীয়, ভিন্ন পেশার লোকজনও এখন কৃষিতে ঝুঁকে পড়েছেন।
সূত্র জানায়, করোনার আগে যেসব অনাবাদী জমি পড়ে ছিল তা আবাদের আওতায় এনে কৃষিজাত আয় আরো বেড়েছে। তাছাড়া কৃষিক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন, আধুনিকায়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তোলার উদ্যোগ বাস্তবে রূপ দেয়া হচ্ছে। মাটি ওলোট-পালট করে সোনার ফসল ফলানোর সাথে জড়িত কৃষকরা চলতি মেূৗসুমে ধানসহ কৃষিজাত পণ্যের উপযুক্ত মূল্য পেয়ে আশান্বিত হয়ে উঠেছেন। সৃষ্টি হয়েছে কৃষিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেয়ার আস্থা ও বিশ্বাস।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী সারাদেশেরর মধ্যে সবজি, ফুল, রেণুপোনা, খেজুরের গুড়, সাদা সোনা চিংড়ি, মসুর, মরিচ, মটরসহ বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে অঞ্চলটি। ধান, ভুট্রা উৎপাদনে রয়েছে দ্বিতীয় ও তৃতীয়পর্যায়ে। শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা চলছে সবজি উৎপাদনে। কর্মবীর কৃষকদের কোন পেনশন নেই, নেই অবসর কিংবা ছুটিছাটা। দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন কৃষাণ ও কিষাণীরা। করোনার ভয় তাদের স্পর্শ করেনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, সবজি (দু’টি মৌসুমে) ১ লাখ ২৩হাজার ৯শ’৫০ হেক্টর, বোরো ৫লাখ ৭৯হাজার ৫শ’৭৬ হেক্টর, মসুর ১লাখ ১০হাজার ২শ’৯০হেক্টর, মরিচ ১০হাজার ৭শ’২৪ হেক্টর জমি আবাদ ও উৎপাদন হয়ে দেশের মধ্যে রয়েছে শীর্ষে। এছাড়া দেশের মোট চাহিদার সিংহভাগ অবস্থান রয়েছে সাদা সোনা চিংড়ি, রজনীগন্ধা, মাছের রেণু পোনা ও খেজুরের গুড়। কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতি বিশারদরা বলেছেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ গোটা অঞ্চলের কৃষিনির্ভর তৃণমূল অর্থনীতির কাঠামো মজবুত করার যথেষ্ট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন এটির ধারাবাহিকতা রক্ষার পরিকল্পনা দরকার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি গবেষণা ইন্টটিটিউট ও বিএডিসি সুত্র জানায়, কৃষি ভান্ডার হিসেবে খ্যাত অঞ্চলটি বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বরাবরই। যশোর, খুলনা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের (বর্তমানে যশোরের ৬টি জেলা ও খুলনার ৪টি জেলা নিয়ে গঠিত দু’টি কৃষি অঞ্চল) এই ১০ জেলায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১৩ লাখ ১৪ হাজার ৬৫ হেক্টর। প্রায় ৩ কোটি জনসংখ্যার এই অঞ্চলটিতে ৭ হাজার ৮শ’৩০ গ্রাম রয়েছে। প্রতিটি গ্রামেই গড়ে শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। ভূমিহীন, প্রান্তিক, ক্ষুদ্র, মধ্যম ও বড় চাষীর সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। এ অঞ্চলে খাদ্য চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৬০৯ মেট্রিক টন। গড় হিসাবে ধান ও গমসহ খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় ৪১ লাখ ৮ হাজার ২৯০ মেট্রিক টন। খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে ১০ লাখ ৩২ হাজার ৬৮১ মেট্রিক টন। কোনক্রমেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খাদ্য ঘাটতি স্পর্শ করে না। অঞ্চলটির সিংহভাগ ভূমি উচু ও বন্যামুক্ত। বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের জন্য মাটি সমৃদ্ধ।
সুত্র আরো জানায়, এ অঞ্চলে সাময়িক পতিত ও স্থায়ী পতিতসহ অনাবাদী জমি ছিল ১ লাখ হেক্টরেরও বেশী জমি। যার পুরোটা আবাদের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে পুরোদমে। গ্রামে গ্রামে বাড়ীর আঙিনায় পরিকল্পিতভাবে সবিজসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য আবাদের চেষ্টাও চলছে। যশোর এম এম কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর নাসিম রেজা জানান, করোনার ধাক্কায় অনেক কিছুরই নতুন শিক্ষা দিয়েছে। কৃষি জমিই গ্রামীণ অর্থনীতির একমাত্র ভরসা। কৃষক শুধু নয়, কৃষি সংশি¬ষ্টসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের কোন ভয়-ভীতি পিছু টানছে না। কৃষির উন্নয়ন দরিদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, কৃষি সংশ্লিষ্ট স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষের চেহারা বলে দিচ্ছে করোনার মধ্যেও তারা ভালো আছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ