Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীন ছাড়া ভারতের ক্রীড়াঙ্গন অচল

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

গালওয়ান সীমান্তে চীনের সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জন সৈনিক হারিয়েছে ভারত। এরপর থেকেই দু’দেশের সম্পর্ক এখন সাপে-নেউলে। সেই থেকেই ভারতে এখন চলছে চীনা পণ্য বয়কটের হিড়িক। তবে কাজটা কি এতই সহজ? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতীয়দের ভিডিও দেখলে অবশ্য সহজ বলেই মনে হয়। ঘরের চাইনিজ টিভি এবং অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র ধ্বংস করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে ভারতের ক্রীড়াঙ্গনে? যেখানে চলছে অন্য হিসেব নিকেশ। ভারতীয় খেলাধুলার বাজারে চীনা পণ্য বয়কট করা এত সোজা না। অন্তত হুট করে তো অসম্ভব-ই। টেবিল টেনিস বল, শাটলকক, ব্যাডমিন্টন ও টেনিসের র‌্যাকেট, কুস্তির মাদুর, বর্শা, উচ্চ লম্ফের থাম, বক্সিংয়ে শিরস্ত্রাণ, পর্বত আরোহণের জিনিসপত্র ও অন্যান্য খেলাধুলার সামগ্রী চীন থেকে আমদানি করে ভারত। তাদের খেলার বাজারে চীনের আধিপত্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন চলে না।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে, ২০১৮-১৯ চক্রে শতকরা ৫০ শতাংশের বেশি ক্রীড়াসামগ্রী চীন থেকে আমদানি করেছে ভারত। দেশটির অভ্যন্তরীণ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ভিএটিএস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকেশ ভাট বলেন, ‘খেলার বাজারে তাদের শেয়ার ৫০ শতাংশের বেশি। আমরা বলি স্থানীয়দের সঙ্গে থাকুন। কিন্তু সরকারের নীতি চীনের পণ্যকে বাজারে একচ্ছত্র আধিপত্যের সুযোগ করে দিয়েছে।’
আইটিএফ র‌্যাঙ্কিংয়ে ভারতের সেরা টেবিল টেনিস খেলোয়াড় সাথিয়ান গনসেকরান জানালেন র‌্যাকেট ও টেবিলে ভারত স্বয়ংসম্পুর্ণ। কিন্তু বলের বাজারে তা নয়, ‘সেখানে চীনের তৈরি বলের একাধিপত্য।’ তিনি জানান, সাংহাই ডাবল হ্যাপিনেস (ডিএইচএস) বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ ও এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ ছাড়া সব ওয়ার্ল্ড ট্যুরেই বল সরবরাহ করে থাকে। এটি চীনের ক্রীড়া সরঞ্জাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।
গনসেকরান চাইনিজ বলের আধিপত্যের কারণও ব্যাখ্যা করলেন, ‘স্পিন ও বাউন্সের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সব ভারতীয় খেলোয়াড় একই সেটের বল দিয়ে অনুশীলন করে। অন্যান্য পর্যায়ে আলাদা ব্র্যান্ডের আলাদা বল দেখবেন। এমনকি স্টিগা (সুইডেন) কিংবা ভারতের স্ট্যাগ কিনলেও দেখবেন এ বলগুলো সব চীনে তৈরি।’ অন্যান্য ব্র্যান্ডগুলোর গল্পও প্রায় একই রকম। ভারতের বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জয় কোওলি জানান, ‘অস্ট্রেলিয়ার স্টিং প্রতিষ্ঠাণের ক্রীড়াপণ্য ভারতীয় বক্সারদের মাঝে জনপ্রিয়। তবে এগুলো সব চীনে তৈরি হয়’।
ভারতের অভ্যন্তরীণ টুর্নামেন্টে অবশ্য দেশি বক্সিং ক্রীড়াসরঞ্জামের কদর আছে। ঘরোয়া টুর্নামেন্ট দিয়ে চাহিদা মেটায় এসব ক্রীড়াসরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আর সেভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পা বাড়ায়নি। এ কারণে ‘উঁচু মানের টুর্নামেন্ট ও ভালো বক্সারের জন্য বাইরে থেকে সরঞ্জাম আমদানি করতে হয়’। ২০১৮-১৯ চক্রে বক্সিংয়ে খরচ করা ৩ কোটি রুপির মধ্যে ১.৩৮ কোটি পেয়েছে চীন।
তবে ক্রীড়াপণ্যে ভারতের চীনের ওপর নির্ভরতার শেকড় আরও গভীরে প্রোথিত। হকিস্টিক, বল, ক্রিকেট ব্যাট ও বল এসব ম‚লত রপ্তানি করে থাকে ভারত। ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ -এর প্রতিবেদনে জানানো হয়, এসব সরঞ্জাম তৈরির কাঁচামালের জন্য ‘চীনের ওপর নির্ভর করতে হয় ভারতকে’। ভারতের ফুটবল, ভলিবল, বাস্কেটবল ব্র্যান্ড ভেক্টর-এর মুখপাত্র বিকাশ গুপ্ত জানান, বল তৈরিতে পলিইউরেথ্রিন এবং ইথিলিন-ভিনাইল তারা চীন থেকে আমদানি করেন। বিকাশ বলেন, ‘ভারতের কাঁচামাল তৈরির প্রক্রিয়া ভালো না। ইউরোপে এবং যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করতে কাঁচামালে যে মানের প্রয়োজন তা হয় না।’
শরীরচর্চায় জিমনেসিয়ামের নানা জিনিসপত্রেও রয়েছে চীনা পণ্যের আধিপত্য। লোকেশ ভাট বলেন, ‘জিমে লোহার রড, বেঞ্চ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র চীন থেকে আমদানি করা হয়। কারণ ওদেরগুলো স্বস্তা। ট্র্যাকস্যুটের সুতোও চীনের। স্বস্তা হওয়াই মূল কারণ।’ লোকেশ তাই মনে করেন, সবার আগে বাজার বিশ্লেষণ জরুরি। হুট করে চাইনিজ পণ্য বয়কট করল হিতে বিপরীত ঘটার সম্ভাবনাই বেশি, ‘বাজার গবেষণা, উন্নয়ন এবং দামের সমস্যাগুলো আগে ঠিক করতে হবে। হুট করেই আমরা চাইনিজ পণ্য বয়কট শুরু করতে পারি না।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্রীড়াঙ্গন-অচল
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ