নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বর্তমান সময়েও অনেকের কাছেই হয়ত নামটি অপরচিত। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটে বাঁহাতি স্পিনের অগ্রপথিক বলতে যা বোঝায় সেই রামচাঁদ গোয়ালা আর নেই। গতকাল ভোরে ময়মনসিংহেরনিজ বাসায় মারা গেছেন এক সময়ের জনপ্রিয় এই ক্রিকেটার। অনেকদিন থেকেই বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
আন্তর্জাতিক ম্যাচ তো বহুদূর, কখনও আইসিসি ট্রফির ম্যাচ খেলার সুযোগও হয়নি। তার পরও গোয়ালা কিংবদন্তি আপন কীর্তিতেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটে বাঁহাতি স্পিনের যে জোয়ার, সেটির শুরু ছিল তার হাত ধরে। দারুণ পারফরম্যান্সে বছরের পর বছর রাঙিয়েছেন দেশের ক্রিকেট। লম্বা বাবরি চুল ও পুরু গোঁফের গোয়ালা ছিলেন দারুণ দর্শকপ্রিয় ক্রিকেটার। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে খেলেছেন ভিক্টোরিয়া, জিএমসিসি, মোহামেডান ও আবাহনীর মতো ক্লাবে। আশির দশক থেকে নব্বই দশকের শুরু পর্যন্ত আবাহনীতে খেলে একরকম হয়ে উঠেছিলেন ক্লাবের প্রতীক। জাতীয় দলেও খেলেছেন অনেক ম্যাচ।
গোয়ালার জন্ম ১৯৪১ সালে। ময়মনসিংহের বিখ্যাত সার্কিট হাউস মাঠে তার ক্রিকেটের শুরু। শৈশবে ছিলেন পেসার। স্কুল ক্রিকেটে খেলার সময় একজনের পরামর্শে থিতু হন স্পিনে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ময়মনসিংহ লিগে খেলার সুযোগ পান পন্ডিতপাড়া ক্লাবের হয়ে। ১৯৬২ সালে ভিক্টোরিয়ার হয়ে অভিষেক ঢাকা লিগে।
বাবার মৃত্যুর পর ১৯৬৭ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ব্যক্তিগত কারণে ক্রিকেট থেকে দ‚রে ছিলেন। পরে আবার শুরু করেন। ১৯৭৫ সালে নাম লেখান মোহামেডানে। পরে ১৯৮১-৮২ মৌসুম থেকে ১৯৯২-৯৩ পর্যন্ত টানা খেলেছেন আবাহনীতে। জাতীয় দলের হয়ে ভারত সফরে গেছেন গোয়ালা, দেশের মাটিতে খেলেছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ঢাকা লিগে আবাহনীর হয়ে ম্যাচে আউট করেছেন মোহামেডানে খেলতে আসা লঙ্কান কিংবদন্তি অর্জুনা রানাতুঙ্গা, অরবিন্দ ডি সিলভাকে। ঢাকার ক্রিকেটে জিএমসিসির হয়ে শেষবার খেলেছেন ৫৩ বছর বয়সে!
কোচ ও সংগঠক হিসেবেও কাজ করেন ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ রামচাঁদ। স্থানীয় খেলোয়াড়দের জন্য ১৯৮১ সালে ময়মনসিংহ আবাহনী ক্রীড়া চক্র ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। প্রায় এক দশক স্থানীয় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কোচের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। স্পিনার তৈরীর এই কারিগরের শেষ জীবনটা খুব ভালো কাটেনি। ক্রিকেট ক্রিকেট করে বিয়েই করেননি। খেলা ছাড়ার পর ময়মনসিংহেই থাকতেন। সার্কিট হাউস মাঠে বাচ্চাদের সঙ্গে ক্রিকেট আনন্দে মেতে সময় কাটত। পরে দুই দফা স্ট্রোক করায় শেষ কয়েকবছর তার জীবন ছিল অনেকটাই ঘরবন্দি। অনাদর, অবহেলায় ময়মনসিংহের ব্রাহ্মপল্লীতে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে থেকেই কাটিয়েছেন জীবনের শেষ দিনগুলো। অকৃতদার এই মানুষটি ভুগেছেন নানা শারীরিক জটিলতায়। ২০১৫ সালে স্ট্রোকের পর একেবারেই ভেঙে যায় তার শরীর। অনেকটা নিরবেই নিভে গেল দেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল এক তারা।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরপরই খবরটি পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মনটা ভারাক্রান্ত তখন থেকেই। চোখে ভেসে উঠছে টুকরো টুকরো অনেক ছবি। ‘গোয়ালাদা’র প্রয়াণের শোক প্রবলভাবে স্পর্শ করেছে অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারকে। জাগছে আক্ষেপ, আরেকটিবার যদি দেখা হতো কিংবদন্তির সঙ্গে, ‘উনাকে ছোটবেলা থেকেই দেখেছি। উনার গল্প শুনেছি অনেক। আমাদের ময়মনসিংহের গর্ব। সবসময় বাচ্চাদের শেখাতেন অনেক কিছু। একদিনের কথা মনে পড়ে, আমাকে অনেকক্ষণ থেকে দেখছিলেন। পরে কাছে এসে বললেন, ব্যাটিং-বোলিংয়ে যেন সমান জোর দেই। কোনো একটিকে অবহেলা না করি। তার সেই কথা আমার খুব মনে পড়ে। অনেক আদর করতেন আমাকে। যখনই দেখা হতো, ভালো ভালো কথাই বলতেন। ময়মনসিংহের ক্রিকেট নিয়ে অনেক টান ছিল তার। আমি জাতীয় দলে ব্যস্ত হওয়ার পর আর সেভাবে দেখা হতো না।’
এই দেখা না হওয়ার আক্ষেপই পোড়াচ্ছে মাহমুদউল্লাহকে, ‘সেদিনও সাইফুল ভাইয়ের (ময়মনসিংহ থেকে আসা আরেক জাতীয় ক্রিকেটার) সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি বলছিলেন যে গোয়ালাদার শরীর বেশি ভালো না। এখন তো ময়মনসিংহে খুব বেশি যাওয়া হয় না। শরীর খারাপ শুনে মনে হয়েছিল, আবার গেলে দেখা করব। সেই সুযোগটা হলো না, খুব খারাপ লাগছে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।