মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দেশটির বিরোধ শেষ হলেই জ্বালানি ও নির্মাণ সংক্রান্ত নতুন চুক্তি নিয়ে লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের (জিএনএ) সাথে সহযোগিতা বাড়িয়ে তুলবে তুরস্ক, প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিনকে উদ্ধৃত করে এক সংবাদে গত রোববার একথা বলা হয়েছে। তুরস্ক ফায়েজ আল সাররাজের জিএনএকে সমর্থন করে এবং গত বছর একটি সহযোগিতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরে দেশটি সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। উভয়ে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে একটি সমুদ্রসীমা নির্ধারণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে যা গ্রিস এবং অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তিগুলো প্রত্যাখ্যান করে। বৃহস্পতিবার আঙ্কারায় সাররাজের সাথে আলোচনার পরে প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান খালিফা হাফতারের পূর্ব-ভিত্তিক লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির (এলএনএ) বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে সাম্প্রতিক লব্ধ এলাকা বন্ধ করতে জিএনএ-র প্রতি সমর্থন দেয়ার জন্য তুরস্কের সমর্থন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ত্রিপোলিতে জিএনএ’র বিরুদ্ধে ১৪ মাসের হামলা চালিয়েছে এলএনএ। ইব্রাহিম কালিন বলেছেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে জিএনএর সাথে তুরস্কের সহযোগিতা অন্যান্য অঞ্চলে প্রসারিত হতে পারে। তিনি মিল্লিয়াত ডেইলিকে বলেন, ‘রাস্তা থেকে সেতু, হাসপাতাল, হোটেল, আবাসন পর্যন্ত ক্ষেত্রে আমাদের ইতোমধ্যে একটি সহযোগিতার ইতিহাস রয়েছে। যুদ্ধের কারণে এগুলো বন্ধ হয়ে যায়। একই জাতীয় পরিস্থিতি জ্বালানির ক্ষেত্রেও সত্য। তুরস্ক যেমন বিশ্বের অনেক অংশ জুড়ে সহযোগিতা করছে পারে, তেমনি লিবিয়াতেও তা করতে পারে। তবে সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা’। তুরস্ক বারবার হাফতারের সমর্থক রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মিসরকে তাদের সমর্থন বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেছে। তুরস্কের হস্তক্ষেপে উত্তর-পশ্চিমের পাদদেশ থেকে এলএনএকে সরিয়ে দেয়ার পরে শনিবার মিসর যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব করেছিল। কালিন বলেন, হাফতারের সাম্প্রতিক যুদ্ধক্ষেত্রের ক্ষতিগুলো দেখিয়েছে যে, তিনি একটি অবিশ্বাস্য অভিনেতা এবং তার ‘সময় শেষ’ হয়েছে। তিনি আরও যোগ করেন যে, তার সহযোগীরা বিকল্প খুঁজছেন। বুধবার রাশিয়ার মস্কোতে জিএনএ’র সাথে আলোচনা হয়েছে। কালিন বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে, তারা হাফতারকে ছাড়াই সমাধান তৈরির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তারা সকলেই যুক্তরাষ্ট্রসহ আমাদের প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিভঙ্গির দিকে এগিয়ে চলেছে ... সাররাজের সরকারের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য মার্কিন প্রশাসনের একটি সাধারণ সুযোগ রয়েছে’।
ভূমধ্যসাগরে তুরস্কবিরোধী জোটের বিপদ
ভূমধ্যসাগর অঞ্চলে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত তুরস্কবিরোধী জোটের প্রত্যক্ষ আত্মপ্রকাশ হয়েছে গত ১১ মে। মিসর, ফ্রান্স, আরব আমিরাত, গ্রিস, গ্রিক সাইপ্রাস নতুন এই জোটের সদস্য। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে লিবিয়া এবং ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের সব কার্যক্রমকে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে নতুন এই জোট। বিজ্ঞপ্তিতে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ত্রিপোলির জাতীয় ঐকমত্যের সরকার ও তুরস্কের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমুদ্র চুক্তিকেও অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন এই জোটের আগে পূর্ব লিবিয়ার কিছু অঞ্চল নিয়ন্ত্রণকারী যুদ্ধবাজ নেতা হিসেবে পরিচিত খলিফা হাফতারও এই চুক্তিকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। ত্রিপোলির জাতীয় ঐকমত্যের সরকারের সঙ্গে তুরস্কের স্বাক্ষরিত এই চুক্তি ভ‚মধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশগুলোর ইউরোপে গ্যাস রপ্তানির পথ বন্ধ করে দিয়েছে। তাই পশ্চিমা দেশগুলো লিবিয়ায় হাফতারকে ক্ষমতায় বসিয়ে এই চুক্তি বাতিল করে পূর্ব ভূমধ্যসাগরের তেল-গ্যাস ইউরোপে নিতে চায়। সমালোচকেরা বলছেন, লিবিয়ার প্রায় এক দশকের গৃহযুদ্ধের আসল লক্ষ্য লিবিয়া ও ভূমধ্যসাগরের তেল-গ্যাস। পূর্ব ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশ না হওয়া সত্তে¡ও আরব আমিরাত ও ফ্রান্স এই জোটভুক্ত হয়েছে। নতুন এই জোটের প্রধান কারিগরেরা মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। প্রকাশ্যে রয়েছে ফ্রান্স ও মিসর এবং পর্দার আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ছে সউদী আরব। সিসির নেতৃত্বে মুরসি সরকারের উৎখাতের সাত বছর পেরিয়ে গেলেও আঙ্কারা-কায়রো দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি। জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমের সব দেশ সিসিকে লালগালিচা সংবর্ধনা দিলেও আঙ্কারা সিসির অবৈধতা নিয়ে সব সময় সোচ্চার ছিল এবং সিসিকে স্বৈরাচার হিসেবে সব আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরেছে। তথাকথিত ‘আরব বসন্তের’ পর ইরান-ভীতির মতো করেই আরব বিশ্বে তুর্কি-ভীতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। একে ব্যবহার করে রাজনৈতিকভাবে আসাদ, হাফতার আর সিসির সব সন্ত্রাসের বৈধতা দেয়া হয়েছে। আর অর্থনৈতিকভাবে তুর্কিভীতি ব্যবহার করে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী সব দেশকে এনি, এক্সন মবিলসহ নানান বহুজাতিক কোম্পানির হাতে নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদ তুলে দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তুর্কিদের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক উচ্চবিলাস পশ্চিমাদের তুর্কিভীতি ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছে।
আমিরাতের ড্রোন ভূপাতিত করলো লিবিয়া
সংযুক্ত আরব আমিরাত সমর্থিত খলিফা হাফতারের এলএনএ বাহিনীর একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে লিবিয়ার সেনা সদস্যরা। লিবিয়ার সিরতে অঞ্চলে সামরিক অভিযানের সময় সেটি ভূপাতিত হয়। আনাদুলো এজেন্সির বরাতে জানা যায়, লিবিয়ার সিরতে, জুফরা, ওয়াদি উইসক্ বুইরাত, জারিফ এবং কাসর আবু হাইদ অঞ্চল দখলের জন্য এক সামরিক অপারেশন শুরু করে লিবিয়ার সেনাবাহিনী। বিদ্রোহীরা দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর তারহুনাতে নিয়ন্ত্রণ নেয়ার একদিন পরই এই অপারেশন শুরু করে সেনা সদস্যরা। এই অপারেশনে তারা অঞ্চলগুলোতে থাকা আমিরাতের সমর্থন দেয়া এলএনএ বাহিনীর সদস্যদের হটিয়ে অস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম, গাড়ি জব্দ করে। জানা যায়, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত লিবিয়ার বর্তমান সরকার ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকেই এলএনএ বাহিনীর হামলার শিকার হয়ে আসছিল। এই সময়ে তারা এক হাজার নিরীহ লিবীয় নাগরিককে হত্যা করেছে। রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।