মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
চীন তার সুনাম বাঁচাতে এক ভয়াবহ লড়াইয়ের মধ্যে রয়েছে। করোনা মহামারীতে তাদের কার্যকলাপ এবং হংকংয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিষয়ে তীব্রভাবে নিন্দিত হয়ে দেশটির কর্মকর্তারা সমালোচনার আগুন নেভানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।
তাদের কর্মপদ্ধতির দু’টি অংশ রয়েছে। প্রথমে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রাথমিক ত্রু টিগুলি ধামাচাপা দিয়ে এর সাফল্যকে জোরালোভাবে তুলে ধরে চীনের গল্প বিক্রয় করা। দ্বিতীয়ত, যারা দেশটির ভাবমর্যাদা নষ্ট করতে চায়, তাদের আক্রমণ করা। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই যুদ্ধটি তার অধঃস্তনদের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন। আমেরিকা বিপর্যস্ত হয়ে পড়াতে এবং সমগ্র বিশ্ব সঙ্কটে নিমজ্জিত হওয়াতে, বিশ্বকে শাসন করা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার মতো আরো বড় ধরনের কার্যক্রম রয়েছে তাকে ব্যস্ত রাখার জন্য।
শি’র এই পরিকল্পনাটির একটি যথাযথ নিরীহ এবং অমায়িক শিরোনামও রয়েছে, ‘মানবজাতির জন্য একটি অভিন্ন আগামীর সমাজ।’ ২০১৩ সালে শি প্রথম এই ধারণাটি প্রস্তাব করেন এবং এর দু’বছর পর জাতিসংঘে তা তুলে ধরা হয়। শি’র ধারণাটি পরামর্শ এবং আলোচনার, অন্তর্ভুক্তি এবং ঐক্যমতের, ফায়দাজনক সহযোগিতা এবং সম্মিলিত কল্যাণের গুরুত্বকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। তবে, এক কথায় বলতে গেলে, বিষয়টি পুরোপুরি অস্পষ্ট। এতে নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা এবং সুস্পষ্ট রূপরেখা নেই।
আসল রহস্যটি এখানেই। আমাদের মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত। চীনের বিষয়ে অনুমানের বিপরীতে দেশটি সবসময় বলে এসেছে যে, তারা বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার পতন ঘটাতে চায় না। কেন চীন বিশ্বকে বিশৃঙ্খল করে দিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হবে, যখন তারা সহজেই এর সম্পূর্ণ এবং অক্ষুণ্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারে?
সর্বোপরি চীন বিশ্বায়নের সর্বাধিক সুবিধাভোগী। এটি পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠান যেমন ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশকে তার স্বার্থ এবং প্রভাবকে এগিয়ে নিতে নিয়মিতভাবে ব্যবহার করেছে। যদিও এখনো বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের গরিষ্ঠভাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা লড়াই করছে, তবে জাতিসংঘের চারটি মূল সংস্থা, যেগুলি আন্তর্জাতিক নিয়ম এবং মান নির্ধারণ করে, চীন দৃঢ়তার সাথে সেগুলির নেতৃত্ব আয়ত্ব করে নিয়েছে। চলতি বছর তারা পঞ্চমটিও (ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রাপার্টি ওর্গানাইজেশন) প্রায় আয়ত্বে এনে ফেলেছে। তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, চীন এখন জাতিসংঘের দ্বিতীয় বৃহত্তম আর্থিক অনুদানকারী। তারা বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে ক্রমাগতভাবে তাদের প্রভাব বাড়িয়ে চলেছে।
নতুন রণক্ষেত্র তৈরি করার নয়, বরং চীনের পরিকল্পনা হল পরিচিত ক্ষেত্রটিতেই লড়াই করা। বিশ্বের কাছে তাদের বার্তাটি সহজ: যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী তার মোড়লের দায়িত্ব থেকে পশ্চাদপসরণ করায় চীন নেতৃত্বের সুযোগটি গ্রহণ করতে প্রস্তুত। এই খেলাটির আসল কারণ রয়েছে। করোনা মহামারী চীনের পরিচালনা ব্যবস্থার ত্রু টিগুলি প্রকাশ করলেও, এটি পশ্চিমাদের বহু ঘাটতিও উন্মোচিত করেছে।
আমেরিকা এবং ইউরোপের প্রতিটি দেশই রাজনৈতিক জটিলতা এবং সামাজিক সঙ্কটের বোঝা বয়ে চলেছে এবং এঅবস্থাতেই একটি ভাইরাস প্রতিরোধ করার জন্য লড়াই করছে যেটির জন্য তারা প্রস্তত ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিমারা যে বৈশ্বিক সংস্থাগুলি তৈরি করেছে এবং পেলেছে, সেগুলি এখন দিশাহীন। পৃথিবীর বাকি অংশকে যার যার মতো করে যথাসম্ভব করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ফেলে রাখা হয়েছে। মহামারীটির শুরুতে চীন হোঁচট খেয়েছে, সত্য। তবে পশ্চিমারা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নৈতিক হারাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র তার ঘরোয়া বিশৃঙ্খলতার পটভ‚মিতে স্পষ্ট বর্ণবাদী কার্যকলাপের পর তার পরবর্তী প্রেসিডেন্টকে বেছে নেওয়ার সময়ের মধ্যেই চীন বিশ্বের আস্থা ফিরে পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। চীন জোরালোভাবেই সেই সুবিধাটি কাজে লাগাবে। এ জাতীয় সুযোগের প্রতি নির্লিপ্ত থাকা কঠিন। বিশ্বের একটি ভারসাম্য দরকার। এমুহুর্তে, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোনো দেশের পক্ষে এটি নিশ্চিত করার উপায় নেই। বাস্তব ক্ষেত্রে তার নেতৃত্ব অপরিহার্য। তবে এটি শুধুমাত্র নেতৃত্ব দেয়ার থেকেও বেশি। আমেরিকান নেতৃত্বকে বিশ্বের স্মরণ করিয়ে দেয়া প্রয়োজন যে, গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা এবং মানবিক মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধাই কেবল মানবজাতির জন্য অভিন্ন ভবিষ্যতের সর্বোত্তম পথ প্রদান করে।
একটি বিখ্যাত চাইনিজ প্রবাদ প্রচলিত আছে, ‘ঝড়ো বাতাস এবং ঢেউ সত্তে¡ও মাছ ধরার নৌকায় শক্ত হয়ে বসুন।’ আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, চীনের লক্ষ্য ঝড়টি জয় করা এবং পশ্চিমারা যদি গণতন্ত্রের সার্বজনীন শক্তির উপর তাদের বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করতে না পারে, তাহলে ভারত থেকে ইন্দোনেশিয়া, ঘানা থেকে উরুগুয়ে পর্যন্ত বিশ্ব যে অবস্থায় রয়েছে, সেই অবস্থাতেই চীন তা অধিগ্রহণ করে নিতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।