মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ায় সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভ্যাকসিন অথবা প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো। মানবদেহে কয়েকটি ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষা সফল হলেও চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে এখনও পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শতাধিক ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। তবে এসব ভ্যাকসিনের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে চীনের ক্যানসিনোর ভ্যাকসিন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাকসিন, মডার্নার এমআরএনএ ভ্যাকসিন এবং নোভাভ্যাক্সের ভ্যাকসিন।
স¤প্রতি ভারতের পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (এনআইভি) ৩০টি নারী বানরের দেহে করোনাভাইরাসের একটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমতি পেয়েছে। মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি গিলিয়াডের তৈরি রেমডেসিভিরই প্রথম ওষুধ; যা করোনা রোগীদের চিকিৎসায় চমৎকার ফল দেয়। গত মে মাসে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় জরুরি মুহ‚র্তে রেমডেসিভিরের ব্যবহারের অনুমতি দেয়। জাপানের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাও দেশটিতে এই ওষুধটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।
করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের বিজ্ঞানীরা পাঁচটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন; ইতোমধ্যে এসব ভ্যাকসিন মানবদেহেও পরীক্ষা চালানো হয়েছে। সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা ইলি লিলি বলছে, তারাই বিশ্বে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য অ্যান্টিবডি চিকিৎসার ট্রায়াল শুরু করেছে। প্রথম বেশ কয়েকজন রোগীর শরীরে তারা প্রাথমিক পর্যায়ের ডোজ প্রয়োগ করেছে। ইলি লিলি বিশ্বে প্রথম সংস্থা হিসেবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি চিকিৎসা শুরু করেছে। অন্যদিকে, মার্কিন আরেক ওষুধ কোম্পানি ফাইজার তাদের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বিএনটি১৬২ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে ট্রায়াল চালিয়েছে। রাশিয়াও করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য একটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে।
ফের হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ট্রায়ালের অনুমতি ডবিøউএইচও’র
যে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনকে বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই অ্যান্টি-ম্যালেরিয়া ড্রাগই করোনার দাওয়াই হিসেবে ফের ব্যবহার করার অনুমতি দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডবিøউএইচও। গত বুধবার করোনাভাইরাস চিকিৎসার জন্য এই ওষুধটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে ডবিøউএইচও। ফের হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ মে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ট্রায়াল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যান্স-এ একটি গবেষণার রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, কোভিড-১৯ রোগীদের ওপর এই ওষুধ প্রয়োগ করা হলে মৃত্যুর শঙ্কা বাড়বে। ডবিøউএইচও প্রধান টেডেরস আধানম ঘেব্রেইসাস ভার্চুয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ট্রায়াল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হবে।
সাধারণত আর্থ্রাইটিসের রোগীদের চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ দেয়া হয়। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশাপাশি অন্যান্য রাষ্ট্রনেতারা করোনার চিকিৎসায় এই ওষুধের পক্ষাবলম্বন করলে ভারত আরও বেশি পরিমাণে এই ওষুধ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। দেশে সঙ্কটের মধ্যেও বিশ্ববাসীর পাশে দাঁড়াতে বিভিন্ন দেশে এই ওষুধ রফতানি করে ভারত।
প্লাজমা পরীক্ষায় ৭৬ শতাংশ রোগীর উন্নতি যুক্তরাষ্ট্রে
যুক্তরাষ্ট্রের হোস্টন মেথোডিস্ট হসপিটালের গবেষকরা বলছেন- করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ ব্যক্তিদের শরীর থেকে প্লাজমা নিয়ে আক্রান্তদের দেওয়া একেবারে নিরাপদ এবং যারা উপসর্গহীন আক্রান্ত, তাদের জন্যও এটি কাজের। ২৫ জন রোগীর শরীরে প্লাজমা দেওয়ার পর ১৯ জনের অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। এর মধ্যে ১১ জনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এটিই যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো করোনা রোগীর শরীরে প্লাজমা দিয়ে চালানো পরীক্ষা। প্লাজমা দেওয়ার ফলে কোনো রোগীর শরীরেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। গবেষক ডা. জেমস এম. মুস্সার বলেছেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসার কোনো ওষুধ কিংবা টিকা ছাড়াই অন্য পদ্ধতি অবলম্বন করে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সময় এখন। তিনি আরো বলেন, ১০১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু যখন ছড়িয়ে পড়েছিল, তখনো এভাবে প্লাজমা চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। সা¤প্রতিককালের ২০০৩ সালে সার্স মহামারির সময়ও এভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
চ্যাবনপ্রাশে করোনামুক্তির সূত্র সন্ধান
ছিল অনন্ত যৌবন ধরে রাখার ওষুধ। হল অনন্ত মরণ রোখার হাতিয়ার! ভরসা এতটাই যে, এ দেশে করোনাভাইরাসের থাবা পড়তেই নিয়মিত সেই আয়ুর্বেদিক মিশ্রণ সেবনের নিদান দিয়েছিল ভারতের আয়ুশ মন্ত্রণালয়। আর করোনা প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক হিসাবে ব্যবহার্য ওষুধের ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’-এ আর সব নামী-দামী ওষুধের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জায়গা করে নেয় শতাব্দী প্রাচীন সেই আয়ুর্বেদিক মিশ্রণ। এতদিন সাধারণ জ্বর সর্দি কাশি ও মওশুমি রোগ ঠেকাতে ইমিউনিটি বুস্টার হিসাবে যুগ যুগ ধরে ভরসার পাত্র ছিল যে চ্যাবনপ্রাশ সেই আয়ুর্বেদিক ফর্মূলাতেই কি লুকিয়ে রয়েছে করোনা রোখার কার্যকরি হদিস?
এপ্রিলের গোড়ার দিকে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ খোঁজ শুরু করেছিল করোনা ঠেকানোর নয়া দাওয়াইয়ের। জারি হয় ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের’ রেজিস্ট্রেশনের জন্য বিজ্ঞপ্তি। সেখানে একাধিক স্টাডি রিপোর্ট জমা পড়ে। ছাড়পত্র পাওয়ার পর আপাতত ৬৩টি আবেদন বা স্টাডি রিপোর্ট ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে রয়েছে। জানা গেছে, সেখানে অ্যান্টি ভাইরাল রেমডিসিভির ও অ্যান্টি এইচআইভি লোপিনাভির, রিটোনাভিরের মতো ওষুধের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে চ্যাবনপ্রাশও। চিনি, মধু, আমলকী ও একাধিক সুপ্রাচীন দুষ্প্রাপ্য ভারতীয় ভেষজ দিয়ে চ্যাবন মুনির তৈরি যৌবন ধরে রাখার সেই ফর্মুলা এখন শরীরে করোনা রোধে কতটা কার্যকরি, তা নিয়েই এখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে বলে খবর।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চ্যাবনপ্রাশের ব্যবহার নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তবে এখন সেই ইমিউনিটির হাত ধরে এগিয়ে এ দিয়ে করোনার আক্রমণ রুখে দেয়া যায় কি না, তা-ই খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ নিয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাচ্ছে রাজস্থানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ আয়ুর্বেদ, জয়পুর। ভারতের একটি বৃহৎ চ্যাবনপ্রাশ নির্মাতা কোম্পানির সহায়তায় শুরু হয়েছে ট্রায়াল। সেখানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন ৬০০ জনকে দু’টি দলে ভাগ করা হয়েছে। একটি দলকে ৪৫ দিন ধরে নিয়মিত চ্যাবনপ্রাশ খাইয়ে শরীরে রোগ প্রতিরোধের উন্নতির মাপজোক করা হচ্ছে। অন্য দলটিকে সাধারণ ডায়েটে রেখে শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা যাচাই করা হচ্ছে। ট্রায়ালের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ডা. পবনকুমার গুপ্তার দাবি, ‘চ্যাবনপ্রাশের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলে শরীরে করোনার প্রবেশ রুখে দেয়াই এই স্টাডির মূল লক্ষ্য’।
সেন্ট্রাল আয়ুর্বেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর ড্রাগ ডেভলপমেন্ট-এর বঙ্গীয় শাখার চিকিৎসক ডা. অচিন্ত্য মিত্রর কথায়, ‘চ্যাবনপ্রাশ বহু পুরনো ওষুধ। মানুষের মধ্যে এর গ্রহণযোগ্যতা এতটাই যে এটি কিনতে প্রেসক্রিপশনেরও প্রয়োজন হয় না। ৫০টিরও বেশি ভেষজ ঔষধি দিয়ে চ্যাবনপ্রাশ তৈরি হয়। যার মধ্যে বেশ কিছু ঔষধি এখন বিরল ও দুষ্প্রাপ্য। তাই এখন বিকল্প দিয়ে কাজ চালাতে হয়। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ভাইরাসের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য চ্যাবনপ্রাশ একটি কার্যকরী ও সহজলভ্য ওষুধ’। সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়, স্টাডি ফাইন্ডস ও সংবাদ প্রতিদিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।