Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাশ নামাতে বাধা: মোবাইল ফোনের আলোয় দাফন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০২০, ১১:১০ এএম

স্বামীর লাশ নিয়ে একা অ্যাম্বুলেন্সে বসে থাকেন আড়াই ঘণ্টা। অ্যাম্বুলেন্সের দরজা খুলতেও দেয়া হয়নি। সন্তানের লাশ দেখতে আসেনি বাবা-মা কিংবা ভাই বোন। দীর্ঘ সময় পর স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন। কোনো প্রকার আলোর ব্যবস্থা না থাকায় মোবাইল ফোনের আলোয় পরে লাশ দাফন করা হয়।

কুমিল্লার দেবিদ্বারে এই ঘটনা ঘটে। মৃত অহিদুর রহমান (৩৮) দেবিদ্বার কুরুইন গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে।

দাফনের পর এ নিয়ে বুধবার পরিবার ও স্বজনদের অমানবিকতা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু কাউসার অনিক। তা নিয়ে জেলায় আলোচনার সৃষ্টি হয়।


এদিকে মৃতের স্ত্রী নুসরাত জাহান নিপা জানান, তার স্বামী ওষুধ কোম্পানিতে চাকুরি করতেন। তারা থাকেন নগরীর রেইসকোর্স কাঠেরপুল এলাকায়। ছয়-সাত দিন থেকে জ্বর। আইইডিসিআর-এর নম্বরে যোগাযোগ করেন নমুনা নিতে। কিন্তু তারা ফোন ধরে না। ধরলেও বলে কুমিল্লায় যোগাযোগ করতে। সিটি করপোরেশনে যোগাযোগ করতে। সেখানে ফোন দিলে জানায়, যারা পরীক্ষা করতো তাদের একজনও আক্রান্ত।
কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে গিয়েও ব্যর্থ হয়। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে জানায় নমুনার জন্য ভর্তি হতে হবে। এভাবে ঘুরাঘুরি করতে করতে সোমবার রাতে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।

মঙ্গলবার সকালে ৯৯৯ নম্বরে কল দেন অ্যাম্বুলেন্সের জন্য। একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক ৩ কিলোমিটার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ যেতে দাবি করেন ১০ হাজার টাকা। পরে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করেন। সেটির চালক চান পাঁচ হাজার। সাড়ে তিন হাজার টাকায় রাজি করান। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে ছয় তলায় বেডে শোয়ানোর পর তিনি মারা যান। মারা যাওয়ার পর একজন নার্স আসেন। পরে ক্যানোলা দিয়ে ইনজেকশন দেন, কিন্তু তা আর শরীরের ভেতরে যায় না। এরপর ওই অ্যাম্বুলেন্সেই মৃতের বাবার বাড়ি দেবিদ্বারে যান। সেখানে সন্ধ্যায় পৌঁছানোর পর ওই বাড়ির লোকজন বলে অ্যাম্বুলেন্সের দরজা না খুলতে। তিনি স্বামীর লাশ নিয়ে একা অ্যাম্বুলেন্সে বসে থাকেন। অন্যদিকে ভাবতে থাকেন তার বাসায় ছয় ও চার বছরের দুই ছেলে ও এক বছরের মেয়ে রয়েছে।
অ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমে এলেও বসতে কেউ একজন চেয়ার চাইতে গেলে তাও দেওয়া হয়নি। ওই বাড়ির এক ব্যক্তি লাশ এখানে দাফন না করার জন্য বলেন। সন্তানের লাশ দেখতে তার মা-বাবা কেউ আসেননি। জানাযায় কোনও ভাই আসেননি। আড়াই ঘণ্টা পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে দাফনের ব্যবস্থা করেন। তিনি ওই অ্যাম্বুলেন্সে ফিরে আসেন। অ্যাম্বুলেন্স চালক দাবি করেন ১৫ হাজার টাকা। অনুনয় করে তাকে ১২ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, তার স্বামী উপযুক্ত চিকিৎসা পায়নি। শেষ বিদায়ের সময় পায়নি স্বজনদের সম্মান।



 

Show all comments
  • Mohammed Kowaj Ali khan ৪ জুন, ২০২০, ১২:১৭ পিএম says : 0
    জমানা এতই নিস্টুর। কি যে রইলো? মানবতা বলতে কিচুই বাকি রহিলো না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ