পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্থায়ী নিয়োগ পাওয়া ১৮ বিচারপতিকে গত ৩১ মে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয় দু’বার। প্রথম বার স্ব স্ব অবস্থানে রেখে তাদের ভার্চুয়ালি শপথ পড়ানো হয়। ফের সশরীর শপথ বাক্য পাঠ করানো হয় রাতে। এর ব্যাখ্যায় সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ জানায়,কারিগরি ত্রুটি’র কারণেই দ্বিতীয়বার শপথ করানো হয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা বিচার ব্যবস্থার কেন্দ্র বিন্দুর এই ঘটনা জেলা পর্যায়ের আদালতগুলোর বাস্তব পরিস্থিতিকেই যেন নির্দেশ করছে। তবে ভার্চুয়াল আদালতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত এবং প্রযুক্তিগত বিড়ম্বনা লাঘবে ‘পর্যবেক্ষণ কমিটি’ করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এতে ‘ভালো ফল’ দিচ্ছে বলেও দাবি এ কমিটির।
বিড়ম্বনায় সিনিয়র আইনজীবীরা : ঢাকা বারের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, একটি মামলায় ভার্চুয়াল কোর্ট থেকে জামিনাদেশ পেয়েছি। বিকেলে আমার মোবাইলে এসএমএস এলো-আপনার জামিন আবেদনের শুনানি আগামিকাল। এসএমএস দেখে আমিতো অবাক! নিষ্পত্তি হওয়া আবেদনের শুনানি হয় কি করে ? তিনি বলেন,কোর্ট চলাচলে নেট কানেকশন পাওয়া বড়ই দুষ্কর। অ্যাডভোকেট কানেকশন পেলে কোর্টের স্টাফরা পান না। স্টাফরা পেলে অ্যাডভোকেট পান না। সময় মতো এসএমএস আসে না। এসএমএস’র ভরসায় থাকলে শুনানি করা সম্ভব নয়। বাধ্য হয়ে সশরীরে যেতে হয় কোর্টে। এ আইনজীবী স্বীকার করেন,করোনা বাস্তবতায় ভার্চুয়াল কোর্ট খুবই কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ আইনজীবীই সিস্টেম সম্পর্কে অবহিত নন। নভিজ্ঞ। সিস্টেম ডেভলপ না করে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করায় সৃষ্টি হয়েছে ভোগান্তি।
মুন্সিগঞ্জ বারের অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম বলেন, জোড়াতালির ওপর চলছে ভার্চুয়াল কোর্ট।এ কোর্টে জামিন ও জরুরি বিষয়সমুহের শুনানি হয়।আর জামিন সংক্রান্ত মামলাগুলো আসেই সিনিয়র অ্যাডভোকেটদের হাতে। সিনিয়র অ্যাডভোকেটদের অধিকাংশই টাচ মোবাইল ব্যবহার করতে জানেন না। বাটন মোবাইলে কোনো রকমে কাজ চালান। সিনিয়রদের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে কোনো বিচারক অডিও কলে শুনানি নিচ্ছেন। দুই হাতে দুই মোবাইল নিয়ে বিচারকগণ লাউড স্পিকার অন করে একই সময় আসামি এবং সরকারপক্ষের আইনজীবীর কথা শোনেন। যদিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনায় বলা আছে ভিডিও কলের কথা। কিন্তু কি করা ? উপায়তো নেই ! সিনিয়রদের বিষয়টি মাথায় রেখে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ অডিও কল যুক্ত করে নির্দেশনা দিলে হয়তো বিড়ম্বনা হ্রাস পেতো।
নারায়ণগঞ্জ আদালতের পেশকার নাম প্রকাশ না করে বলেন,আমরা এখন ‘ভার্চুয়াল’ এবং ‘অ্যাকচুয়াল’ ব্যবস্থার মাঝামাঝিতে রয়েছি। বিচারক মহোদয় হয়তো করোনা-নিরাপত্তা নিয়ে আদালতে আসেন। মাস্ক,গ্লাবস,পিপিই পরে খাস কামরায় অবস্থান করে। আইনজীবীও হয়তো ফোনে কাজটা সম্পন্ন করতে পারলেন। আমাদের কিন্তু সশরীরে কোর্টে আসতেই হচ্ছে। স্ট্যানো-টাইপিস্টকেও (কম্পিউটার অপারেটর) ডিউটি করতে হচ্ছে সশরীরেই। অনেক আইনজীবী সশরীরে আমাদের কাছে আসেন। ফলে সংক্রমণ ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।
দুর্বল নেটওয়ার্ক : সংকট সরঞ্জামের
ভার্চুয়াল আদালত নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ার প্রধান কারণ-তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে অজ্ঞতা। অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো.মাইদুল ইসলামের মতে,জেলা জজ পর্যায়ের বিচারকগণ অধিকাংশই তথ্য-প্রযুক্তির বিষয়ে ধারণা নেই। অ্যাপস কি জিনিস বোঝেন না। অনেকে কম্পিউটারই চালাতে জানেন না। পুরোপুরি স্ট্যানো-টাইপিস্ট নির্ভর। অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের প্রায় সব বিচারক তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞান সমৃদ্ধ। তারা অ্যাপসও বোঝেন।ভার্চুয়াল আদালত চালাতে তাদের তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। একই অবস্থা আইনজীবীদেরও।অধিকাংশ সিনিয়র আইনজীবী বাটন মোবাইল নির্ভর। তারা ভার্চুয়াল সিস্টেমকে ঝামেলা মনে করেন। এটি অনস্বীকার্য যে,আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের দিক দিয়ে বিচার বিভাগ পিছিয়ে। সুপ্রিম কোর্টের কার্যতালিকা অনলাইন করার মধ্য দিয়ে জুডিশিয়ারিতে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু। মাত্র বছর দুই হলো।ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর জন্য তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের ট্রেনিং প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু সেই সময়ই বা কোথায়? দীর্ঘদিন আদালত সাধারণ ছুটিতে ছিলো। করোনার ছোবলে আইনজীবীদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। তরুণ আইনজীবীরা দাবি তুললেন,আদালত খুলে দেয়ার। ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখার শর্তে সপ্তায় দু’দিন জরুরি জামিন বিষয়ে আদালত চালুর ঘোষণা দেয়া হয় ২৩ এপ্রিল। আপত্তি তোলেন সিনিয়র আইনজীবীরা। তারা বললেন, সামাজিক দূরত্ব বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এতে সংক্রমণ বাড়বে। তিন দিনের মাথায় প্রত্যাহার করা হয় এ ঘোষণা। ফুলকোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত হয় হাইকোর্ট বিধি সংশোধনের অধ্যাদেশ চাওয়ার। ৯ মে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ,২০২০’ জারি হয়। পরদিন সুপ্রিম কোর্ট ‘বিশেষ প্র্যাক্টিস নির্দেশনা’ জারি করেন। প্রকাশ করেন ‘ভার্চুয়াল কোর্টরুম ব্যবহার ম্যানুয়াল’ও। পরদিন থেকে ভার্চুয়াল ব্যবস্থা চালু হয় জেলা আদালতে। আপদকালিন এই ভার্চুয়াল ব্যবস্থায় নিষ্পত্তি হয় প্রায় ৩৫ হাজার জামিন আবেদনের। কিন্তু ভার্চুয়াল ব্যবস্থায় সুবিধা করতে পারছেন না সিনিয়র আইনজীবীরা। নানাবিধ বিড়ম্বনায় পড়েন তারা। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনীয় ডিভাইস নেই অনেকের। নেই অভিজ্ঞতা। বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ, গতিহীন ইন্টারনেট কাহিনী যুক্ত হয় এর সাথে। ঘরবন্দী মানুষ এখন মোবাইল নির্ভর। মোবাইল নেটওয়ার্কের ওপর চাপ বেড়েছে। ভার্চুয়াল আদালত এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন মোবাইল নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করেন অবসরপ্রাপ্ত এই জেলা জজ।
ভীড় ও বিড়ম্বনা লাঘবে পর্যবেক্ষণ কমিটি
হাইকোর্টে ১১টি ভার্চুয়াল বেঞ্চ চলছে। এসব আদালতে নানামাত্রিক বিড়ম্বনার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন কোনো কোনো আইনজীবী। মঙ্গলবার এ বিষয়ে সতর্ক করেন হাইকোর্ট। বন্ধ হয় সমালোচনা। তবে সামাজিক দূরত্বের শর্ত ভেঙ্গে ভীড় জমানো এবং কারিগরি ত্রুটির বিষয়টি আমলে নেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সংকট নিসরনে গঠন করে ৫ সদস্যের ‘পর্যবেক্ষণ কমিটি’। হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার গোলাম রাব্বানীর নেতৃত্বে গঠিত এ কমিটির সদস্য স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান। গতকাল বুধবার তিনি ‘ইনকিলাব’কে বলেন, শুরুতে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিলো। ক্রমেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠছি। ভার্চুয়াল আদালত এখন ভালো ফল দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই বহু জামিন হয়েছে। কোথায় ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশনায় শুধু অ্যাপসের মাধ্যমে ভিডিও কলে শুনানি গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। অডিও কলে শুনানি নেয়া হলে সেটি অনিয়ম। আমরা একটা সিস্টেম ডেভলপ করার চেষ্টা করছি। এতে সবার সহযোগিতা কাম্য।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।