Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাক্ষাৎকার গুলেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও দেশটি কোনো সন্ত্রাসীকে রাখতে পারে না

প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : তুরস্কে সামরিক বাহিনীর একাংশের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর প্রেসিডেন্ট

রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান প্রথম যে সাক্ষাৎকারটি দেন সেটি ধারণ করে আমেরিকান স্যাটেলাইট টেলিভিশন সিএনএন। অভ্যুত্থান চলার সময় কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হয়েছে, অভ্যুত্থানের
সাথে জড়িতদের কী ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা করা হতে পারে, গণমাধ্যমের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যর্থ
অভ্যুত্থানের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত ফতেহউল্লাহ গুলেনের প্রত্যর্পণের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের
সাথে আলাপ-আলোচনার অগ্রগতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন।
সিএনএন ইন্টারন্যাশনাল’স ‘কানেক্ট দি ওয়ার্ল্ড’-এর উপস্থাপক বেকি
অ্যান্ডারসন এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন।
(পূর্ব প্রকাশের)
বেকি অ্যান্ডারসন : আর আপনি এমন একটি গ্রুপের দিকে ইঙ্গিত করছেন, যেটি পরিচালিত ও উদ্দীপ্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফতেহউল্লাহ গুলেন নামে এক লোকের মাধ্যমে। তিনি একজন ইসলাম প্রচারক। আপনি একেবারে দ্বিধাহীনভাবে তাকে গ্রেফতার কিংবা যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যর্পণের দাবি করেছেন। এই পর্যায়ে তুরস্ক কি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রত্যর্পণের অনুরোধ করেছে?
এরদোগান : আমি প্রেসিডেন্ট ওবামার সাথে আলোচনার সময় কয়েকবারই সে অনুরোধ করেছি। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও করেছেন। কিন্তু চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লিখিতভাবে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করতে যাচ্ছি। পাশ্চাত্য ও আফ্রিকান কয়েকটি দেশের কাছেও অনুরোধ করতে যাচ্ছি। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এসব অনুরোধ করব।
বেকি অ্যান্ডারসন : আপনার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উদ্ধৃতি দিচ্ছি, ‘কেউ গুলেনের পাশে দাঁড়ালে, সে আর তুরস্কের বন্ধু থাকবে না, সে তুরস্কের সাথে মারাত্মক যুদ্ধরত অবস্থায় থাকবে।’ তিনি স্পষ্টভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র এই পর্যায়ে গুলেনকে গ্রেফতার বা প্রত্যর্পণ না করলে কী হবে?
এরদোগান : খুবই সহজ ব্যাপার। আমি আগেও এব্যাপারে বক্তব্য দিয়েছি। এ কারণে প্রথমে আমাদের আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করতে হবে। আমরা প্রত্যর্পণের অনুরোধ করব। আনুষ্ঠানিক অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া না গেলে- যুক্তরাষ্ট্রের চোখে কেউ অপরাধী বিবেচিত হলে এবং তারা তার প্রত্যর্পণ চাইলে সেটা করা না হলে দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তা কোনোভাবেই মেনে নেব না। কারণ আমাদের পক্ষ থেকে কে অনুরোধ করেছে তা কোনো ব্যাপার নয়, তাদের নিজেদের বিবেচনাতেই সন্ত্রাসী, আমরা সবসময় ওইসব লোককে প্রত্যর্পণ করি। অবশ্য, আমাদের মধ্যে অপরাধীদের পারস্পরিক প্রত্যর্পণের চুক্তি রয়েছে। ফলে এখন প্রত্যর্পণের অনুরোধ করা হচ্ছে, আপনি আমার কৌশলগত অংশীদার, আমি আপনার অনুরোধ রক্ষা করলে, আমি আপনার কথা মেনে নিলে, আপনি কেন একই কাজ করবেন না? এমনকি তিনি (গুলেন) যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও যুক্তরাষ্ট্র কোনো সন্ত্রাসীকে রাখতে পারে না। আর সন্ত্রাসী সংগঠনটি জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে আমাদের সরকারি নথিতে রয়েছে। আমরা কৌশলগত অংশীদার, আমরা মডেল অংশীদার। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে ওই ব্যক্তিকে তুরস্কে হস্তান্তর করতে হবে। আমি আশা করব, যুক্তরাষ্ট্র তা করবে।
বেকি অ্যান্ডারসন : আচ্ছা, আপনাকে এটা জিজ্ঞাসা করছি এ কারণে যে, আপনি ফাঁকা বুলির লোক নন। আর আমি জানতে চাইছি, প্রধানমন্ত্রী বলছেন, যে দেশই গুলেনের পেছনে থাকবে, তাদের সাথেই তুরস্কের মারাত্মক লড়াই হবে। এই পর্যায়ে পরিস্থিতি কতটা গুরুতর হতে পারে?
এরদোগান : প্রধানমন্ত্রী ঠিক কী বলেছেন বা ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন তা জানি না। তবে আমার কথা শুনুন। আমি যেসব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সাথে এ নিয়ে কথা বলেছি, তারা সবাই আমাদের অনুরোধে ইতিবাচক জবাব ও সাড়া দিয়েছেন। তারা সবসময় পারস্পরিক সহযোগিতার পক্ষে রয়েছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একসাথে আইনি কাঠামোর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। তারা এই সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত লোকদের প্রত্যর্পণের সুযোগ সৃষ্টির কথাও বলেছেন।
বেকি অ্যান্ডারসন : যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী তালিকায় ফতেহউল্লাহ গুলেনের নাম নেই। ফলে (এখানকার প্রক্রিয়া থেকে সেখানকার প্রক্রিয়া ভিন্ন হবে) তাকে আপনি কীভাবে সন্ত্রাসী বিবেচনা করবেন?
এরদোগান : দেখুন, আপনি যে দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করছেন, সেটা সত্যি সত্যি আরেকটি বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। কারণ যদি যুক্তরাষ্ট্র কোনো সন্ত্রাসীকে প্রত্যর্পণের জন্য তুরস্কের কাছেও অনুরোধ করে, তবে সেই লোক আমাদের সন্ত্রাসী তালিকায় না-ও থাকতে পারে। তখন আমরা কী বলব, আমাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে? কোনো ব্যক্তি আপনাদের সন্ত্রাসী তালিকায় থাকতেও পারে, না-ও থাকতে পারে। কিন্তু সে যেহেতু আমার তালিকায় আছে, তাই অপরাধীদের প্রত্যর্পণের চুক্তি অনুযায়ী, আমি অনুরোধ করলে আপনার ওই ব্যক্তিকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া উচিত। আর এধরনের অসংখ্য উদাহরণ আছে, তা কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, অনেক দেশেই এধরনের কাজ হয়ে থাকে। একই কথা প্রযোজ্য বিন লাদেনের ক্ষেত্রে। তিনি আফগানিস্তানের বিবেচনায় সন্ত্রাসী ছিলেন না, তাই তো? কী ঘটল? অনুরোধ জানানো হলো, সাড়া দেয়া হলো না। তখন যুক্তরাষ্ট্র তাকে সেখানেই হত্যা করার উদ্যোগ নিল। এই যুক্তিতেই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং প্রত্যর্পণ চুক্তিই প্রাধান্য পাবে, যেকোনো তালিকায় থাকা লোকজনই এই প্রক্রিয়ায় স্থান পাবে। আমরা যা বলছি, তা নিয়ে অনেক ফাইলপত্র তৈরি করেছি, সেগুলো সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠানো হবে। (চলবে )



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাক্ষাৎকার গুলেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও দেশটি কোনো সন্ত্রাসীকে রাখতে পারে না
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ