বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কুয়াকাটা উপকূলীয় এলাকার ম্যানগ্রোভ ও সংরক্ষিত
বনাঞ্চল ক্রমশ: অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্ট বনবিভাগের কর্মকর্তা
কর্মচারীদের উদাসীনতায় একদিকে যেমন উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল অপরদিকে বিলুপ্ত
হচ্ছে বন্যপ্রাণী। এনিয়ে বনবিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে
প্রভাবশালীদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে
মাসোয়ারা নেয়ার অভিযোগ এড়িয়ে ইটভাটায় বনাঞ্চলের গাছ পোড়া নিয়ে বনবিভাগের
বক্তব্য জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া ইটভাটা থেকে গাছ উদ্ধার কিংবা জব্দ
করার ক্ষমতা নেই তাদের। আর বন্য প্রানী শিকার নিয়ে বক্তব্য হাতে নাতে
পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আর এতে উপকূলীয় এলাকার ম্যানগ্রোভ কিংবা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে দেখা মিলছে
এয়ার গান, শর্ট গান, ল্যাজা, চল নিয়ে আদিবাসী তরুন সহ প্রভাবশালীদের
নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যদের। যারা প্রকাশ্য দিবালোকে গাছ
কেটে নেয়া বা বন্য প্রানী শিকার করলেও আইন প্রয়োগ করা হচ্ছেনা এদের
বিরুদ্ধে। অথচ বনের শুকিয়ে যাওয়া লতাপাতা, ডালপালা ও গাছ নিয়ে একাধিক
মামলা রয়েছে হতদরিদ্র শ্রেনীর মানুষের নামে। যারা বছরের পর বছর আদালতে
ঘুরে বনবিভাগের স্বাক্ষী দুর্বলতায় একসময় বেকসুর খালাস পাচ্ছে। কিন্তু
বন্যপ্রানী সংরক্ষন আইনে র্যাব-পুলিশ বাদী হয়ে কলাপাড়া ও মহিপুর থানায়
বেশ ক’টি মামলা করলেও এ আইনে বনবিভাগের কোন মামলা নেই। তবে আদিবাসী
রাখাইন যুবকদের বন্যপ্রানী শিকারের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে
পড়ায় এনিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।
কুয়াকাটা সমুদ্র উপকুল ভাগে অবস্থিত কুয়াকাটা সংরক্ষিত বন, গঙ্গামতির বন,
কাউয়ার চরের বন, লেম্বুর বন, চর কারফা, জাহাজমারার চর ও সুন্দরবনের
পূর্বাংশ ফাতরার বন সহ সমুদ্র উপকুলের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে শুকর, সজারু,
গুঁইসাপ, ঘুঘু, বক, ডাহুক, শালিক, টিয়া সহ বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন
প্রজাতির বন্যপ্রানী দিনে ও রাতে দল বেধেঁ শিকার করছে আদিবাসী যুবক সহ
প্রভাবশালীরা। আর উপকূলীয় এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই গড়ে
ওঠা অর্ধশতাধিক ইটভাটায় কাঠের যোগান দেয়া হচ্ছে বন উজাড় করে। এছাড়া
বনবিভাগের যোসাজশে চলা অর্ধশত স্বমিলেও যাচ্ছে বনাঞ্চলের গাছ। কিছু গাছ
ব্যবহৃত হচ্ছে ঠিকাদারী কাজের পাইলিং ও সেন্টারিং এর কাজে। এসব ভাটা,
স্বমিল ও ঠিকাদারী ফার্ম থেকে বনবিভাগের ক্যাশিয়ার খ্যাত বনকর্মীরা
নিয়মিত মাসোয়ারা নিচ্ছে। ফলে বন আইন কিংবা বন্যপ্রানী সংরক্ষন আইনের
প্রয়োগ হচ্ছেনা তেমন।
সরেজমিনে (গত ২২মে) দেখা যায়, কুয়াকাটা সংলগ্ন গঙ্গামতি সংরক্ষিত বনাঞ্চল
থেকে পাঁচজন আদিবাসী শিকারী বিলুপ্ত প্রজাতির ১টি সজারু ও ১৫টি গুঁই সাপ
শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। এরা দীর্ঘবছর ধরেই এই বনে শিকার করে চলছে। শুধু
আদিবাসী রাখাইন যুবকরাই নয়। সমুদ্র উপকূলীয় জঙ্গলে বন্যপ্রানী শিকারের
মাধ্যমে মাংসের চাহিদা পূরন করছে অনেক প্রভাবশালী সৌখিন শিকারী। যাদের
স্পর্শ করতে পারছেনা আইন।
এদিকে সমুদ্র উপকুলের এসব বনাঞ্চলে শুকর, সজারু, চিতাবাঘ, দাসবাঘ, শিয়াল,
বানর, বেজি, কাঠবিড়ালী, গুঁইসাপ, অজগর, বন মোরগ, ঘুঘু, সাদা বক, চিল,
শালিক, টিয়া, ডাহুক, গড়িয়াল, গাংচিল সহ অসংখ্য বন্যপ্রানী ও পাখির
অভয়াশ্রম ছিল। ঘুর্ণিঝড় ও জ¦লোচ্ছাসের তান্ডবে বন ধ্বংস হয়ে যাবার সাথে
সাথে বেশির ভাগ বন্য প্রানী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তবে ঝড় বন্যার সাথে লড়াই
করে এখনও বানর, শুকর, সজারু, শিয়াল, বেজি, গুঁইসাপ, কাঠবিড়ালী, অজগর সাপ,
চিল, শালিক, ঘুঘু, সাদাবক, ডাহুক সহ কিছু প্রজাতির বন্যপ্রানী টিকে
রয়েছে। এরা সংখ্যায় খুবই কম। আর কিছু সংখ্যক বন্যপ্রানী শিকারীদের ফাঁদে
ধরা পরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
সেচ্ছাসেবী সংগঠন জন্মভূমি কুয়াকাটার সমন্বয়ক ও প্রকৃতি প্রেমী কেএম
বাচ্চু বলেন, ঝড় বন্যার কবলে বন জঙ্গল ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি বন্যপ্রানী
বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্ত প্রায় কিছু সংখ্যক বন্যপ্রানী দেখা গেলেও
শিকারীদের ফাঁদে বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে এসব এখন।
বাচ্চু আরও বলেন, বনবিভাগের চোখের সামনেই প্রতিনিয়ত শিকার চলছে
বন্যপ্রানীর। বনবিভাগ কিংবা প্রশাসন এসব শিকার করার বিষয়টি জানলেও তারা
কিছু বলছে না। তার দাবী পরিবেশ রক্ষায় এখনই বন্যপ্রানী শিকার বন্ধের
পদক্ষেপ গ্রহনের।
উপকূলীয় বন ও পরিবেশ সংরক্ষন কমিটির আহবায়ক মোল্লা লতিফুর রহমান লতিফ
বলেন, বর্তমানে এসব অঞ্চলে বন জঙ্গলের সল্পতার কারণে বন্যপ্রাণী
বিলুপ্তির পথে। যেসব বন্যপ্রানী এখনও নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বেঁেচ
আছে তাদের সংরক্ষণের তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
বন উজাড়, বন্যপ্রানী শিকার ও বনবিভাগের নিয়মিত মাসোয়ারা উত্তোলনের বিষয়ে
বনবিভাগের কলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আ: ছালাম ও মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা
আবুল কালাম আজাদ এর বক্তব্য জানতে তাঁদের মুঠো ফোনে একাধিকবার সংযোগ
স্থাপনের চেষ্টা করেও সংযোগ স্থাপন সম্ভব না হওয়ায় তাঁদের বক্তব্য জানা
যায়নি।
পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, ’বনবিভাগের বন
থেকে বন্যপ্রানী শিকারের বিষয় তিনি কিছুই জানেন না। বন্যপ্রানী শিকার
আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এসব শিকারীদের হাতে নাতে ধরতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।