Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুপার সাইক্লোন আম্পান আতংকে উপকূলের কোটি মানুষ

আঘাত হানতে পারে সন্ধ্যার ভরা জোয়ারে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০২০, ১২:৪৮ পিএম

সুপার সাইক্লোন আম্পান-এর ভয়াবহতা নিয়ে দক্ষিণ উপকূলের কোটি মানুষ একটি নির্ঘুম রাত অতিবাহিত করেছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০ লাখ নারী-শিশু ও বয়োবৃদ্ধ উপকূলের ৩ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে পৌঁছেছে। কিন্তু এত বিপুল সংখ্যক মানুষ কেন্দ্রগুলোর এক ছাদের নিচে আশ্রয় নিতে গিয়ে করেনা ভাইরাসের আতংক ও সংক্রমণের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব সঠিকভাবে বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দুপুর ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বরগুনা, ভোলা ও পটুয়াখালীর সাগর পাড়ে ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে বাতাসের সাথে বৃষ্টি হচ্ছিল। আতংকিত উপকূলবাশী অনেকেই গবাদীপশু ও ঘরবাড়ী ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাননি। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বরগুনার ৫৮১ টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ২ লাখ, পটুয়াখালীর সহশ্রাধীক আশ্রয় কেন্দ্রে ২ লাখ ১০ হাজার এবং ভোলার ১ হাজার ১০৪টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ লাখ ২০ হাজারের মত নারী-শিশু ও বয়োবৃদ্ধকে আশ্রয় দিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট-এর ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর সেচ্ছা সেবকগন।

তবে বেলা যত বাড়ছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান এগিয়ে আসার দুঃশ্চিন্তায় উপক’লবাশী। সন্ধার ভরা জোয়ারে অম্পান ভারত-বাংলাদেশের সুন্দরবন উপক’ল অতিক্রম করার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। তবে এ ঝড় দিনে ভাটির সময় আঘাত করলে ক্ষতির পরিমান অনেকটাই হৃাস পেত। ‘প্রকৃতির ভারসাম্যের রক্ষা কবজ-সুন্দরবন’ আরো একবার এ রুদ্ররোশ থেকে দেশের উপক’লভাগের জানমালকে রক্ষা করবে বলে আশাবাদী পরিবেশবীদ সহ আবহাওয়াবীদগনও। এছাড়া উপক’লভাগে সৃজিত আরো সোয়া দুইলাখ হেক্টর উপক’লীয় বন অতীতের মত এবারো ঘূর্ণিঝড় আম্পান’কে প্রতিহত করতে পারে।

তবে এখনো দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে প্রায় ১ লাখ হেক্টর বোরা ধানকাটা বাকি। উপরন্তু গত এক সপ্তাহে যে আরো ১ লাখ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে, তার বেশীরভাগই মাড়াই সম্ভব না হওয়ায় অনেকটাই খোলা আকাশের নিচে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে হাজার হাজার জেলে তাদের নৌকা ও ট্রলার নিয়ে উপক’লের গলাচিপা, রাংগাবালী, পাড়েরহাট, পাথরঘাটা, আলীপুর ও মহিপুর, চরমোন্তাজ, চর কুকরি-মুকরি, ঢালচর, সোনারচর, পাতারচর এলাকার নিরাপদ আশ্রয়ে চলে এসেছে। দুদিন আগে থেকে সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় বেশীরভাগ ট্রলারই এখন নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরেছে।

আবহাওয়া বিভাগের মতে, দ্বিতীয় পক্ষের চাঁদের সময়ের শেষ দিনের জোয়ারে ভর করে আম্পান-এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বরিশাল,পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, লক্ষ্ণীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট ও নোয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০-১৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। ফলে ঝড়-বৃষ্টির সাথে ’৭০-এর ঘূর্ণিঝড় হেরিকেন ও সিডরের মত উচ্চতার জলোচ্ছাসের আশংকা রয়েছে ভারত-বাংলাদেশের সুন্দরবন থেকে হিরন পয়েন্ট, বলেশ^র, বিষখালী, তেতুলিয়া ও মেঘনায় বঙ্গোপসাগর মোহনা ও সন্নিহিত বিশাল জনপদে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রকৃতির রুদ্র রোশের শিকার বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে বিগত দুশবছরে ঝড়, জলোচ্ছাস সহ নানা দূর্যোগে অন্তত ১৫ লাখ মানুষের প্রাণহানী ঘটেছে। আশ্রয়হীন হয়েছে আরো অন্তত কোটি মানুষ। বিনষ্ট হয়েছে কয়েক লাখ কোটি টাকার ফসল ও সম্পদ। বার বার লন্ডভন্ড হয়ে গেছে বাংলাদেশ ও তৎসংলগ্ন উপক’লীয় এলাকা। ফলে প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা বাংলাদেশের উপক’লীয় এলাকা ও এখানে বসবাসরত মানুষের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নতি বার বারই থমকে গেছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রকৃতির সাথে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হলেও এটিই যেন তাদের নিয়তি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড় আম্ফান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ