Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাস্কাট থেকে দু’শতাধিক ফিরছে আজ ওমানে বাংলাদেশি কর্মীরা চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০২০, ২:১৭ পিএম

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মহাসঙ্কটে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ ওমানে কয়েক লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে পড়েছে। অর্থনৈতিক মন্দার এবং তেলের দাম সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে আসায় অভিবাসী কর্মীদের পরিবর্তে দেশটির নাগরিকদের কর্মক্ষেত্রে নিয়োগের ঘোষণা দেয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির সরকার একটি বিশেষ ফ্লাইট যোগে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাস্কাট থেকে দু’শতাধিক বাংলাদেশি কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। এসব কর্মীদের অনেকেই অবৈধভাবে দেশটিতে অবস্থান করতো বলে জানা গেছে। হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কল্যাণ ডেস্কে কর্মরত এডি ফখরুল আলম এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিমানবন্দরে পৌঁছার পর পরই তাদের হাতে তুলে দেয়া হবে খাবার ও পানীয়। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল থেকে জন প্রতি পাঁচ হাজার করে টাকার আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে।
আজ বৃহস্পতিবার ওমানের রাজধানী মাস্কাটস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সেলর মেজর (অব) সুজাউল হক ও দ্বিতীয় সচিব আনোয়ার হোসেনের সাথে একাধিকভার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা ফোন ধরেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৯ এপ্রিল বিদেশী কর্মীদের সরিয়ে নিজ নাগরিকদের চাকরি দেয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে ওমান সরকার। বিশেষত উচ্চ পদগুলোর ক্ষেত্রে এই নির্দেশ আগে পালন করতে বলা হয়েছে। নাগরিকদের জন্য আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে এই নির্দেশ দেয়া হয়। ওমানের অর্থ মন্ত্রণালয় সরকারি খাতের সংস্থাগুলোকে পরিচালনামূলক পদসহ সব ক্ষেত্রে বিদেশী কর্মীদের পরিবর্তে নাগরিকদের নিয়োগের জন্য ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, বিপুল সংখ্যক প্রবাসী এখনও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর পরিচালক পদ দখল করে আছে। ওমানের জনসংখ্যা ৪৬ লাখ। এর মধ্যে ৪০ শতাংশেরও বেশি বিদেশী এবং তারা বেশ কয়েক দশক ধরে উপসাগরীয় দেশটির উন্নয়নে প্রধান ভূমিকা পালন করছে।
দেশটির নির্মাণ খাত, সেবা সেক্টর, জ্বালানি খাত, মৎস্য খাতসহ বিভিন্ন সেক্টরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা কঠোর পরিশ্রম করে প্রতি বছর প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাতো।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, ১৯৭৬ সনে ১১৩জন কর্মী প্রেরণের মধ্য দিয়ে দেশটিতে জনশক্তি রফতানি শুরু হয়। ২০১৯ সনে ওমানে ১২ হাজার ২২৬ জন মহিলা গৃহকর্মীসহ সর্বমোট ৭২ হাজার ৬৫৪ কর্মী চাকরি লাভ করে। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটিতে ১২ হাজার ৩০৭ জন কর্মী কর্মসংস্থান লাভ করেছে। এ দু’মাসে দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা ১৮৬ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছে।
এছাড়া, বর্তমানে দেশটিতে লক্ষাধিক প্রবাসী বিভিন্ন কারণে দেশটিতে অবৈধের তালিকায় পড়েছেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে সীমাহীন ভোগান্তিতে রয়েছেন তারা। কাজ নেই, খেতেও পারছেন না অনেকে । ত্রাণের জন্য সরকার থেকে বাংলাদেশ দূতাবাস অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলেও তা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়েছেন প্রবাসীরা।
ওমানে অভিবাসী কর্মীর পরিবর্তে স্থানীয় নাগরিকদের নিয়োগের ঘোষণায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বায়রার ইসির অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ আলী আজ বৃহস্পতিবার ইনকিলাবকে বলেন, তেলের দাম শূন্যের কোঠায় নেমে আসায় ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই প্রবাসী কর্মীদের চাকরি নিরাপত্তা নিয়ে ঝুঁকির পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। বায়রা নেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, করোনা মহামারীর সঙ্কটকালে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে যাতে বাংলাদেশি কর্মীদের ছাঁটাই না করা হয় সে ব্যাপারে সরকারকে ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় রেমিট্যান্স খাতে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। তিনি বর্হিবিশ্বে শ্রমবাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এখন থেকেই প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়,পররাষ্ট্র মন্ত্রণলয় ও বায়রার সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে বাস্তবমুখী উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় পরিস্থিতি সামাল দেয়া দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ