Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাকা নয় পাকানো

অসময়ে বাজারে আম : বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে পাকা আম। নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই আসা এই আমগুলো স্বাভাবিকভাবে পাকা নয়, পাকানো। অথচ কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। চড়া দামে বিক্রি হলেও প্রকৃত পাকা আমের কোনো স্বাদ নেই এগুলোতে। এমনকি বেশিরভাগ আমের আঁটিও শক্ত হয়নি। সে কারণে উপরে পাকা, ভেতরে কাঁচা। কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো এসব আম অতিরিক্ত মুনাফার আশায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাজারজাত করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে আম পাড়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া আছে। সেই অনুযায়ী বাজারে ২০ মে’র আগে আম আসার কথা নয়।

জানা গেছে, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের আমের সঙ্গে দেশীয় অপরিপক্ক কাঁচা আম কার্বাইড দিয়ে পাকিয়ে বিক্রি হচ্ছে। এসব আমের পচন ঠেকাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফরমালিন। ক্রেতার কাছে আকর্ষণীয় করতে মেশানো হচ্ছে কৃত্রিম রঙ। পাকা আমের মতো দেখতে হলেও এতে নেই পাকা আমের স্বাদ। কৃত্রিমভাবে পাকানো এ আম মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ফল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাতক্ষীরা অঞ্চল থেকে এখন বেশিরভাগ আম ঢাকায় আসছে। রাজধানীর পাইকারি ফলের আড়ত বাদামতলীর কিছু ব্যবসায়ীর পাশাপাশি কাওরান বাজার ও যাত্রাবাড়ীর কিছু পাইকারি ব্যবসায়ী এই আম খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। তারা জানান, আগাম আমের ওপর সবারই বাড়তি এক ধরনের আগ্রহ আছে। তাছাড়া রোজার ভেতর বিভিন্ন ফলের চাহিদা বেশি থাকে। নতুন এ পাকা আমের চাহিদাও বেশ। এ কারণে প্রাকৃতিক নিয়মে পাকার আগেই কিছু ব্যবসায়ী রাসায়নিক দিয়ে পাকানো এ আম বাজারে নিয়ে এসেছেন।
গত রোববার দুপুরে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীর বাদামতলী ফলের আড়তে অভিযান পরিচালনা করে কৃত্রিমভাবে পাকানো ২৫ মনের বেশি আম জব্দ করে। এসময় কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকানোর প্রমাণ পাওয়া কয়েকজন ব্যবসায়ীকে আটক করে কারাদন্ড ও জরিমানাও করা হয়।
এ বিষয়ে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, চলমান করোনা দূর্যোগের মাঝেই বাদামতলীর ফলের আড়তে অপরিপক্ক ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আমের সন্ধান পাওয়া গেছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফার জন্য এই আম বিক্রি করছে। যেগুলো উপরে থেকে হলুদ টসটসে কিন্তু ভেতরে একেবারেই অপরিপক্ক। এসব আম ১০ থেকে ১৫ দিন গাছে থাকলেই পরিপক্ক হয়ে যেতো।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাছপাকা আম উঠতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে ক্রেতার চাহিদা থাকায় অপরিপক্ক আম পাকিয়ে বিক্রি করছে অসাধু ফল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। মৌসুমের শুরুতে আকাশচুম্বী দাম পাওয়ার আশায় আম পাকাতে রাসায়নিক মেশাচ্ছে তারা।
রাজধানীর ফুটপাত থেকে শুরু করে কাওরান বাজার, ফার্মগেট, মিরপুর ১০ নম্বর ফলপট্টি, শেওড়াপাড়া ফলবাজার, পুরানা পল্টন, হাতিরপুল, যাত্রাবাড়ীসহ সব বাজারেই এখন কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর সবচেয়ে বড় ফলের আড়ৎ বাদামতলীতে প্রতিদিনই ট্রাক ভর্তি আম আসছে। র‌্যাবের অভিযানে আটক কয়েকজন ব্যবসায়ি দাবি করেছেন, ঢাকায় তারা কার্বাইড মেশাননি। তার মানে ঢাকার বাইরে থেকে কৃত্রিম উপায়ে আম পাকিয়ে ঢাকায় আনা হচ্ছে।
ফল পাকাতে কেমিক্যাল মেশানোর অভিযোগ পুরনো। খাদ্যবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা যায়, বিভিন্ন ফলে পর্যায়ক্রমে মেশানো হয় হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, কার্বাইড ও ফরমালিনের মতো রাসায়নিক। তাই বাজার থেকে ফল কেনার আগে সাবধান হতে বলছেন পুষ্টিবিদরা। তা না হলে ক্যান্সারসহ মারাত্মক সব রোগের ঝুঁকি রয়েছে। ফলের ভরা মৌসুম শুরুর আগে ভেজাল ও কেমিক্যালরোধে কঠোর অভিযান পরিচালনার দাবি ভোক্তাদের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আম

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ