পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনার ছোবলে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি। এতে উল্টে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতির সব হিসাবনিকাশও। মহামারীর ধাক্কায় বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো মাসে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্সের চেয়েও পণ্য রপ্তানি আয় কম হয়েছে। শুধু কমই নয়, অর্ধেকে নেমেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত এপ্রিল মাসে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি করে মাত্র ৫২ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই একই মাসে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি যে রপ্তানি আয় রেমিট্যান্সের চেয়ে কম হয়েছে। আর এতে বড় প্রভাব ফেলেছে তৈরি পোশাক। চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে ২ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ শতাংশ কম। তবে করোনার প্রভাবে বর্তমান পরিস্থিতি বেশ খারাপ। গত এপ্রিল মাসে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক, যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে প্রায় ৮৪ শতাংশ কম। এক মাসে এতো কম পোশাক রপ্তানি শেষ কবে হয়েছিল সেটি মনে করতে পারেননি নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক। তিনি বলেন, গত দুই-তিন দশকে এক মাসে এতো কম পোশাক রপ্তানি কখনই হয়নি। তবে করোনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এপ্রিলে পোশাক রপ্তানি কম হবে সেটি অপ্রত্যাশিত ছিল না। মে ও জুন মাসে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ জটিলতা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে পোশাক খাত। গত দু’মাসে স্থগিতের পাশাপাশি বাতিল হয়ে যাওয়া কয়েক’শ কোটি টাকার কার্যাদেশ আবার দিতে শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রেতারা। যত দ্রুত সম্ভব চাহিদা অনুযায়ী পোশাক পাঠাতে পারবে, ততো বেশি কার্যাদেশ দেয়ার শর্ত দিচ্ছে তারা।
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান দুই চালিকাশক্তি হল রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স। দুই সূচকের এমন প্রবণতায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবীদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, করোনা সত্যিই সবকিছু ওলটপালট করে দিচ্ছে। আমি কখনই ভাবিনি, রপ্তানি আয়ের চেয়ে রেমিট্যান্স বেশি আসবে। তবে এই সঙ্কটকালে বহু প্রবাসী চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হওয়ায় সামনে রেমিট্যান্সেও ধাক্কা আসতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আহসান মনসুর। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে রেমিট্যান্সেরও একই হাল হবে। এখানে মনে রাখতে হবে, এখন উপার্জন বা কাজের টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন না প্রবাসীরা। জমানো টাকা যা ছিল, তা থেকে অথবা অন্য কারও কাছ থেকে ধার করে পরিবারের বিপদের দিনে কিছু পাঠাচ্ছেন। সেটা ফুরিয়ে গেলে আর পাঠাতে পারবেন না।
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের বড় অংশ আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। জ্বালানি তেলের দাম একেবারে কমে আসায় তেলনির্ভর অর্থনীতির ওই দেশগুলোতেও দেখা দিয়েছে বড় সঙ্কট। একই সঙ্গে সব মিলিয়ে আগামী দিনগুলোতে রেমিট্যান্সের জন্যও খুব ভালো সময় আসবে বলে মনে হয় না।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, গত এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয় গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ৮২ দশমিক ৮৫ শতাংশ কম। এবারের লক্ষমাত্রার চেয়ে ৮৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ কম রপ্তানি আয় এসেছে। গত এপ্রিলে লক্ষ্য ছিল ৩৫৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার আয়ের। গত বছরের এপ্রিলে রপ্তানি হয়েছিল ৩০৩ কোটি ৪২ লাখ ডলার। এপ্রিলের আগের মাস মার্চেও রপ্তানি কম হয়েছিল। তবে মার্চ মাসে করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব পুরোপুরি বোঝা যায়নি। ফলে ওই মাসে রপ্তানি হ্রাসের হার ১৮ শতাংশের মধ্যে ছিল। মার্চে নতুন রপ্তানি আদেশ প্রায়ই বন্ধ হওয়ায় এপ্রিলে পণ্য জাহাজীকরণ হয়নি বললেই চলে। একারণেই পণ্য রপ্তানি আয় তলানিতে নেমে এসেছে।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ২ হাজার ৯৪৯ কোটি ৩৪ লাখ (২৯ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩ দশমিক ০৯ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে কম ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। জুলাই-এপ্রিল সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৩৭ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্য ছিল ৩১ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের এই ১০ মাসে আয় হয়েছিল ২৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ হিসাবে এই ১০ মাসে লক্ষ্যের চেয়ে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২২ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আয় কমেছে ১৪ দশমিক ০৮ শতাংশ। বাংলাদেশের রপ্তানির বড় বাজার ইউরোপ-আমেরিকাসহ পৃথিবীর সব দেশের অর্থনীতি-বাণিজ্য তছনছ এখন করোনা মহামারীতে।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেনে, করোনায় বিশ্ব বাজার স্থবির। বড় বড় ক্রেতাদের সবকিছু বন্ধ। তাই বিদেশি ক্রেতারা অনেক ক্রয়াদেশ বাতিল করেছেন। পোশাক কারখানাও বন্ধ ছিল বেশ কিছুদিন। ফলে রপ্তানি ব্যাপক হারে কমে গেছে। তবে খুব শিগগিরই আবার পোশাক খাত আবার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বিজিএমইএ পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, ২৬ এপ্রিলের পর থেকে বায়ারদের সাথে আমাদের যোগাযোগ হতে শুরু করেছে। বায়াররা গত দু’মাসে স্থগিতের পাশাপাশি বাতিল হয়ে যাওয়া কয়েক’শ কোটি টাকার কার্যাদেশ আবার দিতে শুরু করেছে। গত দুই মাসে ঢাকা ও চট্টগ্রামের গার্মেন্টসগুলোর অন্তত ৩২০ কোটি ডলারের কার্যাদেশ আটকে যায়। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরুতে গার্মেন্টস কারখানাগুলো খুলতে শুরু করলে যোগাযোগ বাড়াতে থাকে ক্রেতারা। এতে আশার আলো দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
বিজিএমইএ সহ-সভাপতি এ এম চৌধুরী সেলিম বলেন, সময় চাচ্ছেন কখন মাল দেয়া যাবে, মানে পজিটিভভাবেই তারা আসছেন। ইতোমধ্যে কার্যাদেশ অনুযায়ী, মালামালও পাঠাতে শুরু করেছেন অনেক গার্মেন্ট মালিক।
যদিও চলতি বছরের শুরু থেকেই বিপর্যয় শুরু হয় গার্মেন্টস শিল্পে। চীনের উহানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার সাথে সাথে জানুয়ারি মাস থেকে বন্ধ হয়ে যায় গার্মেন্টস পণ্যের জাহাজিকরণ। ফেব্রুয়ারি মাসে দেখা দেয় কাঁচামালের সংকট। আর মার্চ এবং এপ্রিল মাসে আসতে থাকে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কার্যাদেশ স্থগিতের পাশাপাশি বাতিলের নির্দেশ। তবে বর্তমানে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করেছে বলে দাবি বিজিএমইএ নেতাদের।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।