Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

করোনায় হুমকিতে অন্তঃসত্ত্বা মা ও নবজাতকের চিকিৎসা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০২০, ৫:৫০ পিএম
  • নয় মাসে ১১ কোটি ৬০ লাখ শিশুর জন্ম হবে
  • বিভিন্ন দেশ ও দাতাদের সেবা অব্যাহত রাখার আহবান ইউনিসেফের

বাংলাদেশে মহামারী করোনার সময়ে আনুমানিক ২৪ লাখ শিশুর জন্ম হবে এবং বৈশ্বিকভাবে ও এর প্রভাবের মধ্যে আনুমানিক ১১ কোটি ৬০ লাখ শিশুর জন্ম হবে। গত ১১ মার্চ কোভিড-১৯ মহামারী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ৪০ সপ্তাহের মধ্যে এই সব শিশুর জন্ম হওয়ার কথা রয়েছে। এই মহামারীর প্রভাবে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য সেবা চাপের মুখে এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ প্রবাহ ব্যবস্থা বিঘিœত হচ্ছে।

বৃহষ্পতিবার (৭ মে) ইউনিসেফ বলছে, প্রসূতি মা ও নবজাতকদের রূঢ় বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হবে। বিশ্বজুড়ে লকডাউন ও কারফিউয়ের মতো নিয়ন্ত্রণমূলক নানা পদক্ষেপ; মহামারী সামলাতে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোর হিমশিম অবস্থা ও সরঞ্জামের ঘাটতি; ধাত্রীসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা রোগীদের সেবাদানে নিয়োজিত হওয়ায় শিশুর জন্মের সময় দক্ষ লোকবলের ঘাটতি থাকবে।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মা মাতৃত্বের স্বাদ নেওয়ার স্বপ্ন বুনছেন। তাদের এখন এমন একটি বিশ্ব বাস্তবতায় একটি নতুন জীবন আনার জন্য প্রস্তুত হতে হবে যেখানে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন, বা লকডাউন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চাপের মুখে থাকায় তারা জরুরি সেবা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। করোনাভাইরাস মহামারী মাতৃত্বের ওপর কতটা প্রভাব ফেলছে তা এখন কল্পনা করাও কঠিন উল্লেখ করেন তিনি।

আগামী ১০ মে মা দিবস। আর এর প্রাক্কালে ইউনিসেফ সতর্ক করছে, কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপসমূহ শিশুর জন্মকালীন সেবার মতো জীবনরক্ষাকারী স্বাস্থ্য সেবা বিঘিœত করতে পারে, যা লাখ লাখ অন্তঃসত্ত্বা মা ও তাদের সন্তানদের বিরাট ঝুঁঁকিতে ফেলবে। বিশ্বের ১২৮টিরও বেশি দেশে এই দিবসটি স্বীকৃত।

মহামারী ঘোষণার পর নয় মাসে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশুর জন্মের আশা করা হচ্ছে সেগুলো হলÑ ভারত (দুই কোটি এক লাখ), চীন (এক কোটি ৩৫ লাখ), নাইজেরিয়া (৬৪ লাখ), পাকিস্তান (৫০ লাখ) ও ইন্দোনেশিয়া (৪০ লাখ)। এগুলোর অধিকাংশ দেশে মহামারীর আগে থেকেই নবজাতকের উচ্চ মৃত্যু হার ছিল এবং কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে এই হার আরও বাড়তে পারে।

এমনকি ধনী দেশগুলোতেও এই সংকটের প্রভাব পড়বে। প্রত্যাশিত শিশুর জন্মের দিক দিয়ে ষষ্ঠ অবস্থানে থাকবে যুক্তরাষ্ট্রে।

২৪ লাখ শিশুর প্রত্যাশিত জন্ম নিয়ে গত ১১ মার্চ মহামারী ঘোষণার পর থেকে পরবর্তী নয় মাসে সর্বাধিক শিশুর জন্মের দিক দিয়ে বিশ্বে নবম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

প্রাতিষ্ঠানিক মাতৃমৃত্যু হার ও নবজাতকের মৃত্যু হারে তেমন কোনো পরিবর্তন না হলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, কোভিড-১৯ সংকট শুরুর পর থেকে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে মাতৃ ও নবজাতকের স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ উল্লেখযোগভাবে কমে গেছে।

উল্লেখ্য, ৬৩টি জেলা হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ৩৩টিতে এখন সব ধরনের জরুরি গর্ভকালীন ও প্রসূতি সেবা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি তোমো হোযুমি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা/হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ সত্ত্বেও অন্তঃসত্ত্বা মা ও নবজাতকের জীবনরক্ষাকারী রুটিন সেবাসমূহ যথাযথ সুরক্ষা ব্যবস্থা মেনে অব্যাহত রাখা দরকার। অনাগত মাসগুলোতে অন্তঃসত্ত্বা মা ও অসুস্থ নবজাতকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে জীবন রক্ষায় সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করছে ইউনিসেফ।

ইউনিসেফ সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্স এবং ধাত্রীদের জন্য নির্দেশিকা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মহামারী চলাকালীন সময়ে মাতৃ, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখতে সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে। এটি ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে সহায়তা করবে এবং স্বাস্থ্যকর্মী এবং রোগীদের সুরক্ষা দেবে। এসবের মধ্যে রয়েছে করোনা আক্রান্ত রোগীদের থেকে আক্রান্ত নন এমন রোগীদের থেকে পৃথক করা, হাত ধোয়া ও অন্যান্য হাইজিন বিষয়গুলি মেনে চলা এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামগুলির যৌক্তিক ব্যবহার করা।

ইউনিসেফ সতর্ক করেছে, বৈশ্বিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের অন্যদের চেয়ে কোভিড-১৯ এ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রমাণ না দিলেও বিভিন্ন দেশে তাদের গর্ভকালীন, সন্তান জন্মকালীন ও সন্তান জন্মের পরের সেবা পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। অসুস্থ নবজাতকের জরুরি সেবা লাগবে যেহেতু তাদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়া শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করার জন্য সহায়তা এবং শিশুকে সুস্থ রাখতে ওষুধ, টিকা ও পুষ্টি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বিশ্বজুড়ে মায়েদের পক্ষে ইউনিসেফ অনাগত মাসগুলোতে জীবন রক্ষায় বিভিন্ন দেশের সরকার ও স্বাস্থ্য সেবাদাতাদের প্রতি আগের মতো সেবা দেওয়া এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার আহবান জানিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ