Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

স্বপ্ন হাজার কোটি টাকা

আম রফতানিতে বিপুল আয়ের সম্ভাবনা বিশেষজ্ঞদের মতে বিশ্ব বাজার ধরতে সরকারিভাবে আম রফতানির এখনি উদ্যোগ নিতে হবে গার্মেন্টস ও চিংড়ি খাতের পর আম হতে পারে দেশের অন্যতম রফতানি পণ্য

রফিক মুহাম্মদ/রেজাউল করিম রাজু | প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০২০, ১২:০২ এএম

আসছে মধু মাস জ্যৈষ্ঠ। আর কদিন পরই বাজারে আসবে মধু মাসের সেরা ও সুস্বাদু ফল আম। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর পঞ্চাশ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি আম রফতানি সম্ভব। এতে আয় হতে পারে হাজার কোটি টাকারও বেশি।

বিশ্ববাজারে আম রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বেশকিছু সুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশের আম যখন পাকে তখন বিশ্ববাজারে অন্য কোনো দেশের আম আসে না। এ ছাড়া বাংলাদেশের আম বিশ্বের অন্যান্য দেশের থেকে অনেক সুস্বাদু। স্বাদ এবং পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক এগিয়ে থাকলেও শুধু উদ্যোগের অভাবে বাংলাদেশের আম বিশ্ববাজারে জায়গা করে নিতে পারছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন গার্মেন্টস ও চিংড়ি খাতের পর আম হতে পারে দেশের রফতানি আয়ের নতুন খাত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারিভাবে বিশেষ মনিটরিং সেল করে দূতাবাসগুলোকে কাজে লাগিয়ে এ বছরই ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম রফতানি করা যেতে পারে। থাইল্যান্ড সরকারের সরাসরি তত্তাবধানে আম রফতানি হয়। তাদের দেশে এ সংক্রান্ত নীতিমালা রয়েছে। আমাদের দেশেও আম রফতানির বিষয়টি নিয়ে সরকারের এখনি উদ্যোগ নেয়ার সময়।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত¡ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের আমের যে উৎপাদন রয়েছে তা দেশের বাইরে রফতানি করা সম্ভব। আমের স্বাদ ও গুণগতমান ভালো হওয়ার কারণে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের আমের চাহিদা বেশি। বাংলাদেশ সরকারের যে বিভাগ এ রফতানিকরণ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তারা এ বিষয়ে অগ্রনীভূমিকা পালন করলে তা ফলপ্রসু হবে। এক্ষেত্রে আমদানিকারক দেশগুলোর সাথে এখনি যোগাযোগ করে যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে।

বিশিষ্ট আম বিজ্ঞানী ড. শরফ উদ্দীন বলেন, এখনি আম নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। বিশ্ব বাজার ধরতে আমাদের সরকারিভাবে আম রফতানির উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্বের রাশিয়াসহ ইউরোপের ছয়টি দেশে এখানকার আম যায়। ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, পতুর্গাল, ফ্রান্সসহ এসব দেশে বাংলাদেশের আমের চাহিদা রয়েছে। এসব দেশের সঙ্গে সরকারিভাবে এখনই যোগাযোগ করা প্রয়োজন।

দেশের প্রায় সব এলাকায় কমবেশি আম জন্মালেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, রংপুর ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বাণিজ্যিকভাবে উন্নত মানের আম উৎপন্ন হয়। সারা দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই চাঁপাইনবাবগঞ্জে উৎপন্ন হয়। এ জন্য এ জেলাকে ‘আমের রাজধানী’ বলা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থিত আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত¡ গবেষণা কেন্দ্রের হিসেবে, দেশের ২২টি জেলায় এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আমের চাষ হচ্ছে।

রাজশাহী এ্যাগ্রোফুড প্রডিউসার সোসাইটির আহবায়ক আনোয়ারুল বলেন, দেশে এখন বালাই ও বিষমুক্ত আম উৎপাদন হচ্ছে। বিদেশে এ আমের চাহিদা অনেক বেশি। মহামারি করোনার কারণে বিভিন্ন দেশে শাক-সবজিহ ফলের চাহিদা বাড়ছে। এখনি সময় এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল রফতানির সুযোগ নেয়া। বিশেষ করে আম রফতানির ব্যাপারে। এখানকার ল্যাংড়া, খিরসাপাতি, লখনা, আমরুপালি, হিমসাগর, ফজলি হাড়িভাঙ্গা, বারি-৪ আমের চাহিদা বেশি। সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে প্রতিবছর ৫০হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি আম রফতানি সম্ভব।
চলতি মাসের শেষের দিকে রাজশাহী অঞ্চলের গোপাল ভোগ আম পাড়া শুরু হবে। আর সাতক্ষীরা এলাকার গোবিন্দ ভোগ, গোপাল ভোগসহ অন্যান্য আম আগামী সপ্তাহে পাড়া যাবে। তবে আগামী ৩১ মে’র পরে সাতক্ষীরার হিমসাগর, ৭ জুনের পরে ল্যাংড়া এবং ১৪ জুনের পরে আমরুপালি আম পাড়া শুরু হবে। এছাড়া, মে মাসের শেষের দিকে রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম বাজারে আসবে।

রাজশাহী অঞ্চলে আম বাগান রয়েছে ষাট হাজার হেক্টরের বেশি। আম উৎপাদন হয় সাত আট লাখ মেট্রিক টন। প্রতি বছর দেশে বাণিজ্য হয় কয়েক হাজার কোটি টাকা। চাপাইনবাবগঞ্জে ব্যাগিং আমের চাহিদা বিশ্ব বাজারে রয়েছে। এবারো কয়েক কোটি আমে ব্যাগ পড়েছে। এসব আম বিশ্ববাজারে পাঠানোর এখনি সময়।
রাজশাহী কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের মো. শামসুল হক জানান, গতবছর ইউরোপের বাজারে গেছে রাজশাহীর আম। এবার এখনো অনিশ্চিত। প্রশাসনের সঙ্গে বসে আম বাজার ব্যাবস্থাপনা নিয়ে খুব শিগগির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

দেশে আমের বাজারজাতকরণ নিয়ে দুশ্চিন্তা ভর করেছে আম চাষীদের। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট আম বাজার এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় আমের বাজার। প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভিড় জমায়। লেনদেন প্রতিদিন চার-পাঁচ কোটি টাকার। ব্যাস্ত থাকে আমপাড়া শ্রমিক থেকে প্যাকেজিং আর পরিবহন কর্মীরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এটি করতে হলে আম বাজার ব্যবস্থাপনায় এখনি পরিকল্পনা নিতে হবে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দিন বলেন, আমের বাজার নিয়ে আমরাও এবার দুশ্চিন্তায় আছি। করোনা পরিস্থিতি এবার কী হবে তা ভাবনার বিষয়। তবে পুঠিয়ার বানেশ্বরে আমের মোকামে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে আমের বাজার বসানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

আমাদের সাতক্ষীরা সংবাদদাতা আক্তারুজ্জামান বাচ্চু জানান, জেলায় এবার আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। সাতক্ষীরায় ৪,১১০ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষমাত্র ধরা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। যা গত বছরের তুলনায় ৫ হাজার মেট্রিক টন বেশি। এ জেলা থেকে হিমসাগর, আমরুপালি এবং ল্যাংড়া বিদেশে রফতানি হয়। তবে, করোনা মহামারির কারণে এবার সাতক্ষীরার আম বিদেশে যাচ্ছে না। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, করোনার কারণে সাতক্ষীরার আম এবার বিদেশে রফতানি হচ্ছে না।#



 

Show all comments
  • Masud Rana ৭ মে, ২০২০, ১২:৫১ এএম says : 0
    আম চাষি বলে কিছু নেই। আছে বাগান মালিক আর ব্যাবসায়ী। যারা আম বাগানে যত্ন নেয়, সার কীটনাশক দেয় এরা কেউ ধান গম আলু চাষিদের মত জমি বা গাছের মালিক অথবা বর্গাচাষি নয়।এরা স্রেফ কামলা।তাই বলতে হবে আম ব্যাবসায়ী। আম ব্যাবসায়ীরা ২ -৫ বছরের জন্য পাতায় বাগান কিনে।তাই এদের একবার লস হলেও পরেরবার বা তার পরের বার লাভ হয়।ধান চাষিদের মত মাথায় হাত পড়ে না।তাই ধান সবজি চাষিদের নিয়েও লিখুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazirul Islam ৭ মে, ২০২০, ১২:৫২ এএম says : 0
    সকল চিন্তার উৎপাদনকারী মধ্যস্থতা কারী ব্যাবসায়ীর মুলাতে চাষি ভাই ও আমরা জনগন ঝুলা চাষীর ফসল বিক্রি হয় কমদামে আমরা ক্রেতা ক্রয়করি বেশিদামে
    Total Reply(0) Reply
  • Ever Green ৭ মে, ২০২০, ১২:৫২ এএম says : 0
    আগে দেশ,পরে বিদেশ। আমরা পাইনা আমাদের আম, বিদেশি খাবে। ভালোই হলো। বাঙ্গালি এবার আম খাবে সহজেই।
    Total Reply(0) Reply
  • ঈশা খাঁন মাসুম ৭ মে, ২০২০, ১২:৫৩ এএম says : 0
    সমস্যা নেই আমরা খাব ন্যায্যমূল্য দিয়ে
    Total Reply(0) Reply
  • ঈশা খাঁন মাসুম ৭ মে, ২০২০, ১২:৫৩ এএম says : 0
    সমস্যা নেই আমরা খাব ন্যায্যমূল্য দিয়ে
    Total Reply(0) Reply
  • জিয়াউর রহমান জিয়া ৭ মে, ২০২০, ১২:৫৩ এএম says : 0
    কিছু রপ্তানি করলে ভাল হতো। দেশের চাহিদা আনুযায়ী আম রপ্তানি করলে বৈদেশিক মুূনাফা আয় হতো।করোনায় সব শেষ।
    Total Reply(0) Reply
  • তরুন সাকা চৌধুরী ৭ মে, ২০২০, ১২:৫৪ এএম says : 0
    অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় এ বছর সকল আমবাগানে প্রচুর পরিমাণ আম এসেছে। চাষিরা সময় মত সঠিক পরিচর্যা করায় এবং এখন পর্যন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় প্রায় প্রতিটি গাছ আমে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। মৌসুমের শুরু থেকে চাষিরা আমের বাম্পার ফলনের আশা করছিল। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন না হলে এবার আমে ব্যাপক লোকসান হতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • তরুন সাকা চৌধুরী ৭ মে, ২০২০, ১২:৫৫ এএম says : 0
    সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আম ক্রেতা আনেক কম হবে। তাই বিদেশে রপ্তানির দিকে নজর দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ৭ মে, ২০২০, ২:৩০ এএম says : 0
    বাংলাদেশের সব কিচুই উন্নত মানের। ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশের সম্মানিত নাগরিক বিশ্বে অত্যন্ত সম্মানের এবং দক্ষ। ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ৭ মে, ২০২০, ২:৩২ এএম says : 0
    বাংলাদেশের সব কিচুই উন্নত মানের। ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশের সম্মানিত নাগরিক বিশ্বে অত্যন্ত সম্মানের এবং দক্ষ। ইনশাআল্লাহ। লন্ডন হইতে মোহাম্মদ খোয়াজ আলী খাঁন। অত্যন্ত সম্মানের সোনার ব্যবসায়ী। ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আম

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ