Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চলের দিনমজুর শ্রমজীবী আর কর্মজীবী মানুষের মত নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারেও দুর্ভোগ নেমে আসছে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০২০, ১২:৩২ পিএম

করোনা ভাইরাসের রেস ধরে দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন বিগত প্রায় দেড়মাস সম্পূর্ণ স্থবির থাকলেও ঘোষিত লকডাউন অঘোষিতভাবে শিথিল হয়ে আসায় ঝুকিও বাড়ছে। তবে এ লক ডাউনে সবচেয়ে বড় ঝুকির কবলে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি। মসাধীককালের এ স্থবিরতা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের জীবনও আর চলছে না। বরিশাল বিভাগের ৬টির মধ্যে ৫টি জেলা লক ডাউনে। দ্বীপজেলা ভোলাও আংশিক লকডাউনে।
২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ছুটির মেয়াদ কয়েক দফায় বৃদ্ধির পরে কবে তার শেষ, তা এখন সবার কাছেই অজ্ঞাত। নি¤œবিত্ত পরিবারে অচলবস্থার পরে মধ্যবিত্তের সংসারেও টান ধরেছে। নি¤œÑমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে নিরব হাহাকার শুরু হয়েছে আরো আগেই। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় আর কোন বিকল্প না থাকায় সব কষ্টকে মেনে নিতে হচ্ছে। এমনকি মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর সংসারের চাকা ক্রমশ স্লথ হয়ে ইতোমধ্যে বন্ধ হতে শুরু করেছে।
আইনÑশৃংখলা বাহিনী সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা সহ করোনা ভাইরাস রোধে স্বাস্থ্য বিধি কঠোরভাবে অনুসরনে দক্ষিণাঞ্চলের রাস্তায় নামলেও নারায়নগঞ্জ থেকে আসা শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষের চোরাই শ্রোত পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে কেভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ১৩৪-এ পৌছেছে। মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠীতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলা-উপজেলার হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা ২৪৫ জনে উন্নীত হলেও ছাড়া পেয়েছেন ১৪৫ জন। হোম এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনে আছেন ১০ হাজার ১২৭ জন। তবে সুস্থভাবে কোয়ারিন্টিন শেষ করেছেন ৭ হাজার ৭৩২জন।
ওষুধ ও মুদি দোকানের বাইরে অন্য ব্যবসা-বানিজ্য প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ। এমনকি কাঁচা বাজারেও ক্রেতার অভাব। পোল্টী শিল্পে ধশ নেমেছে ইতোমধ্যে। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট-এর তত্বাবধানে আইনÑশৃংখলা বাহিনী প্রায়ই সরকারী নির্দেশনা অনুসরনে বাধ্য করছে অবাধ্য মানুষকে। তবে বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ শহরেই যানবাহনের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। মোটরবাইক বন্ধ রাখার কথা বলা হলেও তা শুনছেন না অনেকেই। সরকারী কর্মীদের বেতন মিললেও বেশীরভাগ বেসরকারী প্রতিষ্ঠানেই মার্চের বেতন হয়নি এখনো। এপ্রিলের বেতনের সম্ভবনা নিয়ে এখন আর ভাবছেন না কেউ।
বৈশি^ক এ সংকটে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বাভাবিক জীবন ইতোমধ্যেই সম্পূর্ণ স্থবির করে দিয়েছে। বিশেষকরে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের সমস্যা সব বর্ণনার বাইরে। এরই মধ্যে রোজার শুরু থেকে চাল, ডাল, পেয়াঁজ, আঁদা ও ভোজ্যতেল সহ অনেক নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি দূর্ভোগের মাত্রা আরো বাড়িয়েছে। যদিও প্রশাসন সহ বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সিমিত আকারে ত্রান বিতরন করছে। কিন্তু তা প্রকৃত চাহিদা মেটাতে পারছে না। এমনকি দিন যত গড়াচ্ছে বেসরকারী ত্রান তৎপড়তাও তত স্তিমিত হয়ে পড়ছে। নি¤œবিত্ত পরিবারেই যেখানে হাহাকার, সেখানে নি¤œ-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর কথা ভাবছেনা কেউ। ত্রান নিয়ে দূর্ণীতিও মানুষের ভাগ্য বিড়ম্বনা ঘটাচ্ছে। এ দূর্যোগে বরিশাল মহানগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ রাস্তাঘাট কিছুটা স্তব্ধ জাতীয় মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। তবে এর কোন বিকল্পও জানা নেই কারো।
জীবন বাঁচানোর তাগিদে বর্তমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতিকে সবাই মেনে নিলেও তা আর কতদিন ধরে রাখতে পারবেন সে বিষয়টি বলতে পারছেন না কেউই। তবে চলমান লক ডাউন কঠোরভাবে প্রয়োগ না করলে তা আরো প্রলম্বিত হতে পারে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবাহল মহল। সেক্ষেত্রে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ না করলে চলমান স্থবিরতা থেকে মুক্তি অস্বাভাবিক বিলম্বিত হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকেই। যা হয়ত পুরো সমাজ ব্যবস্থাকেই ভয়াবহ অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিতে পারে বলেও মনে করছেন ওয়াকিবাহল মহল।
আর এ অবস্থায় সমাজের একটি বড় অংশ, দক্ষিণাঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষ খুব কষ্টে আছে। সবাই বর্তমান পরিস্থিতিকে মেনে নিতে বাধ্য হলেও তা থেকে পরিত্রানে মহান আল্লাহর দরবারে পানাহ চাচ্ছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ