Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা সংকটে মারাগেছে ৩২০০ মুরগী: রাঙামাটিতে

নি:স্ব খামারীর পরিবারে অমানিশার অন্ধকার

স্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০২০, ১২:১৯ পিএম

করোনা পরিস্থিতির খপ্পরে পড়ে সময়মতো খাবার ও ঔষধ প্রয়োগ করতে না পারায় মাত্র চারদিনের ধ্বংস লীলায় ৩২’শ মুরগীকে মাটি চাপা দিয়ে পথে বসতে চলেছেন রাঙামাটির ক্ষুদ্র পোলট্টি খামারী আব্দুল মজিদ। একে একে চারদিনের ধারাবাহিকভাবে এতোগুলো মুরগী মারা যাওয়ায় সম্পূর্ন নিঃস্ব হয়ে দিশেহারা এই খামারি এখন পাগল প্রায়। ঘটনাটি ঘটেছে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলাধীন বগাছড়ির বুড়িঘাট ইউনিয়নের একনং ওয়ার্ডে।
ক্ষতিগ্রস্থ খামারী আব্দুল মজিদ জানিয়েছেন, অঘোষিত লক ডাউনের কারনে সময়মতো পোলট্টি খাবার এবং ঔষধ সংগ্রহ করতে না পারায় বাজারজাত করার মাত্র কয়েকদিন আগেই তার খামারের ৩২শ মুরগী মরে গেছে। এক কেজি থেকে দেড় কেজি ওজনের এসব মুরগীর পাইকারি মূল্য প্রায় চার লাখ টাকা। অপ্রত্যাশিতভাবে এই ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে অনেকটা অর্ধপাগল হয়ে গেছেন তিনি। তিনসন্তানসহ স্ত্রীকে সাথে নিয়ে তিলে তিলে এই খামারটি গড়ে তুলেছিলেন।
বড় ছেলে অনার্সে, মেঝ ছেলে ইন্টারে এবং ছোট ছেলেটা এসএসসি পরীক্ষার্থী জানিয়ে আব্দুল মজিদ জানান,দীর্ঘ ৪৫টি বছর আমি কাপড়ের বোঝা কাধে নিয়ে ফেরি করে পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি করতাম। কিন্তু সন্তানরা বড় হওয়ায় এবং লেখাপড়ায় থাকায় তাদের সন্মানের কথা চিন্তা করে, পালিত তিনটি ছাগল বিক্রি করে, কৃষি ব্যাংক- গ্রামীন সমিতি, একটি বাড়ি-একটি খামার থেকে ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি স্ত্রী ও কন্যার স্বর্ণ বন্ধকের টাকা দিয়ে বাড়ি সামনেই পোলট্টি খামারটি গড়ে তুলেছিলাম। বেশ ভালো ভাবেই কয়েকটি চালান তুলে সেগুলো বিক্রি করে আরো বেশি করে বাচ্চা তুলে রমজানের শুরুতে বিক্রির উদ্দেশ্য ছিলো। এরই মধ্যে একমাস বয়সী মুরগীগুলোর জন্য খাবার সংকটে পড়ি। রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি যোগাযোগ করেও খাদ্য ও ঔষধ আনতে পারিনি। যার কারনে ২১ তারিখ থেকে খামারের মুরগীগুলো অজ্ঞাতরোগে আক্রান্ত হতে থাকে। এরমধ্যে কিছু ঔষধ এনে খাওয়ালেও সেগুলো কাজ করেনি। ২৩তারিখ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত কয়েক দফায় আমার খামারের ৩২শ মুরগী মারা গেছে।
জীবনের অতিবাহিত দিনগুলোতে কারো কাছে হাত পাতেননি জানিয়ে আব্দুল মজিদ কান্না করতে করতে প্রতিবেদককে বলেন, আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার সন্তানদের পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে যাবে। কিভাবে সামনের দিনগুলো যাবে আমার। কার কাছে সাহায্য চাইবো আমি। আমার খবরতো কেউ নেয়নি।
ক্ষতিগ্রস্থ খামারীর অনার্স পড়–য়া বড় ছেলে মিরাজ জানায়,বিভিন্ন জায়গায় চাকুরির আবেদন করে যখন হতাশ হয়েছি, এমতাবস্থায় এই খামারটি আমাদের পরিবারকে অনেক স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু এই স্বপ্নই যে, কখনো দুঃস্বপ্নে রূপান্তরিত হতে পারে সেটি কখনো ভাবনায়ও আসেনি। এমতাবস্থায় সরকারী সহযোগিতা নাপেলে তিন ভাইয়ের পড়াশোনাও বন্ধ যাবে বলে জানিয়েছে অনার্সের শিক্ষার্থী মিরাজ।
এদিকে, নানিয়ারচরের উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বলেছেন আহসান হাবিব জানিয়েছেন, আমি বিষয়টি শুনেছি, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। তিনি জানান, উক্ত খামারী এক বছর ধরেই পোলট্টি খামার করে আসলেও উপজেলার তালিকাভূক্ত নয়। তারপরও আমি বিষয়টি জানার পর পরই সেখানে দুজন কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে সেখান থেকে চারটি মুরগী এনে পরীক্ষা করেছি। মূলতঃ রানীক্ষেত রোগে আক্রান্ত হয়েই এতোবড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারী। জনাব আহসান হাবিব জানিয়েছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে তার সাথে যোগাযোগ করে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ