Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

টিসিবি’র পণ্য কিনতে ভোর থেকে লাইন, মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ১২:১২ পিএম

টিসিবির পণ্য কিনতে ট্রাকের সামনে ভোর থেকে শত শত মানুষের লাইন। এ লাইনে মানা হচ্ছে না সামাজিক বা শারিরীক দূরত্বের বিধিনিষেধ। ফজরের নামাজের পর থেকে লাইনে দাড়িয়ে থাকলেও ট্রাক আসে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে। তখন লোকজন হুড়োহুড়ি দৌড়াদৌড়ি করে আবার নতুন করে লাইনে দাঁড়ায়। এতে ঠেলাঠেলি ধাক্কাধাক্কিও হয়। রাজধানীতে টিসিবির পণ্য বিক্রির ট্রাক এখন করোনাভাইরাস বিস্তারের অন্যতম উৎস বলে অনেকে মনে করছেন।
রোববার সকাল ১০ টায় ঢাকার খিলগাঁও রেলগেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায় টিসিবির পণ্যবাহী একটি ট্র্যাক ঘিরে কয়েকশত মানুষের লম্বা লাইন। আলাদা আলাদা লাইনে পুরুষ মহিলারা দাঁড়িয়ে আছেন। লাইনে দাঁড়ানো কেউই কোন সামাজিক বা শারিরীক দুরত্ব মানছে না। উল্টো কার আগে কে কিনবে- এ নিয়ে ধাক্কাধাক্কি, ঠেলাঠেলি এমনকি হাতাহাতির মত ঘটনা ঘটছে। নিম্নশ্রেণির মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ঘরের অনেকেই এসব পণ্য কেনার জন্য লাইনে দাড়িয়েছেন।
হতাশা ব্যক্ত করে অনেকেই জানান, ধীরগতিতে পণ্য বিক্রির জন্য ভিড় লেগে যায়। এছাড়া পণ্য সল্পতা রয়েছে। অনেক সময় দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে অনেকে পণ্য না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। এছাড়া প্রভাবশালী কিছু মানুষ সিরিয়ালের বাইরে এসে পণ্য কিনে নিয়ে যান। এরমধ্য পুলিশ সদস্যও জড়িত বলে অনেকে অভিযোগ করেন।
টিসিবি পণ্যের বিক্রয়কর্মী সালাম বলেন, আমরা চিনি ৫০ টাকা, মশুরের ডাল ৫০ টাকা, সয়াবিন তেল ৮০ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা, খেজুর ১২০ টাকা ও পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। তিনি বলেন, দুরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর জন্য আমরা সব ক্রেতাকেই বলি। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনে না। সবাই গাদাগাদি করে দাঁড়ায়। লাইন ছাড়া পণ্য বিক্রির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সালাম বলেন, কিছু লোক আছে যারা ধমক দেয়। না দিলে খারাপ আচরণ করে। তাই না দিয়ে উপায় থাকে না।

শাহাজাহানপুর রেল কলোনি এলাকার বাসিন্দা মাজেদা বেগম বলেন, চারজনের সংসারে অনেক খরচ লাগে। তাই সপ্তাহে একদিন টিসিবির পণ্য কিনতে আসি। দোকানের চেয়ে ট্র্যাকে অনেক কমদামে পণ্য পাওয়া যায়। কিন্তু এখান থেকে পণ্য কিনতে হলে অনেক ভোগান্তি হয়। সিরিয়ালের আগে থাকার জন্য ফজরের নামাজের পর পরই মানুষ লাইন ধরে। অথচ গাড়ি আসে সকাল ৯-১০ টায়। অনেক সময় লাইন ভেঙ্গে অনেকেই পণ্য কিনে নিয়ে যায়। আমরা কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি আর কিছু মানুষ যখন আসে তখন কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের কোনো সিরিয়াল লাগে না। জোর করে সিরিয়াল না মেনেই নিয়ে যাচ্ছে। ডিলারকে বললে কোনো লাভ হয় না।
শাহজাহানপুরের বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, নি¤œ আয়ের মানুষ আমি। ফুটপাতে কাপড়েরর দোকান ছিল। লকডাউনে বন্ধ। ঘরে বসে থাকি। তাই ভাবলাম টিসিবির গাড়ি থেকে পণ্য কিনি। ট্রাক থেকে কিনলে অনেক সাশ্রয় হয়। দোকানে ১ লিটার তেল ১১০ টাকা আর এখানে মাত্র ৮০ টাকা। দোকানে ডাল ১২০ টাকা কেজি আর টিসিবি ৫০ টাকা বিক্রি করে। পেঁয়াজ বাজারে ৬০ টাকা কিন্তু এখানে ৩৫ টাকা। কিন্তু এখানে এসে দেখি শত শত ক্রেতার ভিড়। সামাজিক দূরত্ব মানার জন্য দাগ দেয়া আছে। কিন্তু কেউ সেটি মানছে না। অনেকের মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাবস নেই। সিরিয়াল নিয়ে অনেককে ধাক্কাধাক্কি করতে দেখলাম। মাঝে-মধ্যে পুলিশ এসে লাইন ঠিক করে দেয়। তারা চলে গেলে আবার একই অবস্থা।
বাসাবোর শহিদ বলেন, টিসিবির পণ্যের এই লাইন থেকে করোনা সংক্রমণের মারাত্বক ঝুঁকি থেকে যায়। এখানে আশেপাশের সব এলাকার মানুষ এসে জড়ো হয়েছে। কার শরীরে সংক্রমণ আছে সেটা আমরা জানি না। শুধু খিলগাঁও রেলগেইট নয়, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল, গোপীবাগ, জাতীয় প্রেসসক্লাবের সামনে, মালিবাগসহ রাজধানীর আরো বেশ কিছু এলাকায় একইভাবে বিক্রি হচ্ছে টিসিবি পণ্য।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ