বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশে সাধারণ ছুটির নামে কার্যত লকডাউন চলছে। সরকারি নির্দেশনা মেনে মানুষ ঘরে অবস্থান করছে। কলকারখানা, অফিস-আদালত সব ধরনের শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। করোনার ছোবলে থমকে গেছে গোটা দেশ, গোটা বিশ্ব। এই পরিস্থিতিতে রাজধানীর উচ্চবিত্তদের দিন আরামে কাটলেও চরম সংকটের মধ্য দিয়ে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের দিন কাটছে।
এ অবস্থায় অনেক ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে অসহায়, অসচ্ছলদের পাশে দাঁড়ালেও মধ্যবিত্তদের পাশে কেউ নেই। তাদের দু চোখে ঘোর অন্ধকার। তারা চরম অসুবিধায় থাকলেও কাউকে কিছু বলতে পারছেন না। লোকলজ্জার ভয়ে তারা নীরবে-নিভৃতে চাপা স্বরে কাঁদছেন। তা দেখার বা বোঝার কেউ নেই। রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী বিভিন্ন পেশার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।
পলন্টনে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের ফুটপাতে শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি বিক্রি করতেন শফিকুল আলম (৪৫)। সবাই তাকে আলম বলে ডাকে। দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীসহ পাচঁজনের সংসার নিয়ে আলম শাহজাহানপুরে বসবাস করছেন। মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে দেড়মাস ধরে বন্ধ তার ফুটপাতের দোকান। লকডাউনের এ সময় আত্মীয় স্বজন থেকে কিছু সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে একমাস সংসার টেনে টুনে চালালেও সামনের দিনগুলোতে অন্ধকার দেখছেন তিনি। অল্প পুঁজিসহ জমানো টাকা যা ছিল তাও শেষ। এ অবস্থায় কী করবেন, কী করা উচিত, ভেবে উঠতে পারছেন না তিনি। সংসার চালাতে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। চক্ষু লজ্জায় কষ্টগুলো প্রকাশও করতে পারছেন না।
আলম অনেকটা কষ্টের সাথে বলেন, করোনার থেকে বড় ভয় হচ্ছে না খেয়ে মরার ভয়। আয় রোজগার নাই। একমাস ধরে ব্যবসা বন্ধ। এখন তো ঘরেই বন্দি। দুইমাসের ঘর ভাড়া বাকি পড়েছে। আত্মীয় স্বজনের কিছু সহযোগিতায় খাবার জুটলেও সামনের দিনগুলো কী করব বুঝতে পারছি না।
মৌচাক মার্কেটের নিচে কসমেটিকসের দোকান শাহিনের (৩০)। এই দোকানই তার একমাত্র আয়ের উৎস। এক মাসের বেশি সময় ধরে দোকান বন্ধ। বাংলা নববর্ষ ও রোজাকে সামনে রেখে হাতের জমানো টাকা দিয়ে দোকানে নতুন মাল উঠিয়েছিলেন তিনি। এটা ছিল তার ব্যবসার সবচেয়ে সেরা মৌসুম। কিন্তু বেচা বিক্রি শুরু হওয়ার আগেই করোনার ছোবলে সব বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় আয় রোজগার তো একেবারেই বন্ধ। এখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
এ দোকানি বলেন, বৈশাখ আর ঈদকে সামনে রেখে হাতে যা ছিল টাকা পয়সা তা দিয়ে মাল কিনে দোকানে তুলেছি। এরপর থেকেই করোনার প্রভাবে বেচা বিক্রি একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। আয় তো নাই, বরং সংসার চালাতে যা ছিল তাও হাতে নাই। ঘরে বউ-বচ্চা ও অসুস্থ মা। এখন কোনো রকম করে চলতেছি। এ অবস্থায় তো কেউ ধার দেনাও দেয় না। না খেয়ে মরে গেলেও কারও কাছে সাহায্য চাইতে পারি না। সরকার যদি আমাদের কোনোভাবে সহযোগিতা করত তাহলে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারতাম।
মালিবাগে ছোট একটি দোকান আসলামের। তাতে তিনি আল্লার দান বিরিয়ানি বিক্রি করতেন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে দোকান বন্ধ রয়েছে। এখন ঘরে বসে আছেন। কোন আয় রোজগার নেই। হাতে যা ছিল তাও প্রায় শেষ। সামনের দিনগুলি কিভাবে কাটবে সে চিন্তা তিনি অস্থির।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, রাজধানীর টুইনটাউয়ার মার্কেটে একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি করেন তিনি। দুই মেয়েও স্ত্রীসহ তিনজনে ভালোই ছিলেন। করোনা মহামারিতে মার্কেট বন্ধ। বেতনও বন্ধ। হাতে কিছু টাকা ছিল তা দিয়ে কিছু বাজার করেছেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে আগামী দিনগুলি কিভাবে চলবেন তা ভেবে চোখেমুখে তিনি অন্ধকার দেখছেন ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।