Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহিপুরে ১১ অসহায়ের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজির চাল আত্মসাৎ করলো গ্রামপুলিশ

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০২০, ৮:৪৬ পিএম

করোনাভাইরাসের মহামারীতে দেশের মানুষ যখন মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছেন ঠিক তখনই মহিপুর থানাধীন ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের গ্রামপুলিশ আবু সালেহ'র বিরুদ্ধে ১১ অসহায় পরিবারের ফেয়ার কার্ডের চাল দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে আত্মসাৎ করে খাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের গ্রামপুলিশ আবু সালেহ চৌকিদার দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে ১১ অসহায়ের চাল পৃথকভাবে কার্ডের উপরে অন্য ব্যাক্তিদের ছবি বসিয়ে আত্মসাৎ করে আসছেন। ৮ নং ওয়ার্ড বরকোতিয়ার মেম্বার মেজবা খান ডিলারের কাছ থেকে চৌকিদারের প্রদত্ত কার্ড উদ্ধার করে। সেখানে দেখা যায় ১১ টি কার্ডে কারো কারো কার্ড থেকে ১০ মাস, কারো থেকে ১৭ মাস ধরে গ্রাম চৌকিদার নিজে এবং পরিবারের লোকজন দিয়ে চাল উত্তলন করে আসছে। একটি কার্ডের নামে দেখাযায় মোঃ হান্নান সরদার কিন্তু ছবিতে দেখা যায় চৌকিদারের বাবার ছবি লাগানো এবং সে নিজে স্বাক্ষর দিয়ে চাল উত্তোলন করেছেন। ১১ টি ফেয়ার কার্ডের ভিতরে রয়েছে কেউ ভিখারি, কেউ স্বামী পরিত্যাক্তা, কেউ প্রতিবন্ধী এবং কেউ জেলে কাজ করে যাদের চাল তিনি আত্মসাৎ করেছেন।

ভুক্তভোগী স্বামী পরিত্যাক্তা সালেহা জানান প্রথম পর্যায়ে তিনি ৩ বার ফেয়ার কার্ডের চাল উত্তোলন করেছেন পরবর্তীতে চৌকিদার তার কাছ থেকে কার্ড অফিসে প্রয়োজন বলে নিয়ে গেলে তার কার্ড আর ফেরত দেননি চৌকিদার। যখনি চৌকিদারকে বলা হতো কার্ডের কথা চৌকিদার বলতো আসনি আসলে পেয়ে যাবেন। পরবর্তীতে মেম্বারের কাছে বলার পরে মেম্বার কার্ড উদ্ধার করে দিলে সেখানে দেখি ১৭ বার উত্তলন করা হয়েছে।

আরেক ভুক্তভোগী জেলে আমির হোসেন জানায়, তার কার্ড থেকে তিনি ১ বার চাল উত্তোলন করার পরে চৌকিদার একই কথা বলে কার্ড নিয়ে পার্শবর্তী খবিরের কাছে বিক্রি করে দেয়।

খবির জানায়, তাকে কার্ড দেওয়ার কথা বলে চৌকিদার ৫০০ টাকা নেয় এবং সেই কার্ডের উপরে তার ছবি বসিয়ে দেয় এবং তার থেকে সে ১ বার চাল উত্তলন করে একই ভাবে আবার চৌকিদার কার্ড নিয়ে যায়।

আরো এক ভুক্তভোগী নুরভানু জানান একই কথা বলে চৌকিদার তার কার্ডও নিয়ে গেছে।

এছাডাও প্রায় শতাধিক গ্রামবাসী সাংবাদিকদের কাছে ঐ চৌকিদারের বিরুদ্ধে অঅরো বিস্তর অভিযোগ জানায়। জানা গেছে এছাড়াও তিনি নানা ধরনের অপকর্মের সাথে ও মাদকের সাথে জড়িত এবং বিভিন্ন সময়ে গ্রামবাসীদের উপরে অনেক ধরনের অত্যাচার চালায়।

৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিজবা খান জানায়, আমার কাছে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে আমি চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করি এবং চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে ডিলারের কাছ থেকে কার্ড নিয়ে আসতে বললে কর্ড এনে দেখি এই অবস্থা।


চালের ডিলার মাওলানা ওমর ফারুক বলেন, আমি কার্ড পেয়ে চাল দেই। এগুলো আমার দেখার দায়িত্ব নয় এগুলো দেখে ছবি সনাক্ত করবেন চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা। এ ব্যাপারে চৌকিদারের কাছ থেকে ক্রেতা আব্দুস সালাম চাল ক্রয়ের সত্যতা স্বীকার করেন।

তদারকি কর্মকর্তা লিটন চন্দ্র রায় বলেন, আমার কাছে কখনো কোন অভিযোগ আসেনি অভিযোগ আসলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতো।

ডালবুগঞ্জ ইউনিযন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম সিকদার সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অভিযুক্ত চৌকিদার এমনিতেই বেপরোয়া এবং সে একজন মাদকসেবি। আমি এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে অভিযোগকারীর ব্যাপারে ব্যাবস্থা গ্রহন করবো।

কলাপারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঅবু হাসনাত মো: শহিদুল হক বলেন, প্রাথমিক ভাবে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনা সত্য বলে মনে হচ্ছে এবং ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত চৌকিদারের বিরুদ্ধে অতিদ্রুত মামলা দায়ের হবে এবং অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ