পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘ক্ষুধা’ মানুষের কোনো ধর্ম, জাত, বর্ণ, রাজনৈতিক পরিচিতি চেনে না বোঝে না। করোনার কারণে ঘরে বসে থাকা সব মত পথ ও ধর্মের নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ রয়েছেন নিদারুণ কষ্টে। কাজ করতে না পারায় সবার ঘরে ঘরে খাদ্য সঙ্কট। সরকার সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে ঘরে বসে থাকা অসহায় মানুষগুলোর ত্রাণ দেয়ার ঘোষণা দিয়ে তালিকা তৈরি করছে। কিন্তু নিরপেক্ষ তালিকা তৈরিই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ ত্রাণ চুরি, দলবাজি এবং স্বজনপ্রীতি করায় অনেক জনপ্রতিনিধি বরখাস্ত ও গ্রেফতার হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী দলমত নির্বিশেষে বিপণœ সব মানুষের তালিকা করে খাদ্য ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশনা দিলেও ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা দলীয় লোকদের তালিকা প্রণয়নে কাজে লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবি বলেছে, এ ধরণের উদ্যোগে দলগত তালিকা তৈরির শঙ্কা থাকে। এতে অন্য মতের লোকজনের নাম তালিকায় না উঠার আশঙ্কা রয়েছে।
জানতে চাইলে খাদ্য সচিব ড. মোসাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, সারাদেশে তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, মসজিদের ইমামসহ সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের তালিকা তৈরির কমিটিতে রাখা হয়েছে। সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান ইনকিলাবকে বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য ভালো। কিন্তু তালিকাটি করবেন তৃণমূল পর্যায়ের মেম্বার-চেয়ারম্যানরা। এতে তালিকায় অনেক বিরোধী মতের রাজনৈতিক দলের লোকজন বাদ পড়তে পারে। সে জন্য ডিসি-ইউএনওদের দিয়ে নিরপেক্ষভাবে তালিকা করা হলে ভালো হতো। সরকারের উচিত নিরপেক্ষ কোনো প্রফেশনাল বডিকে দিয়ে তালিকাটি করা হলে অনেকই উপকার পেত।
দেশে ৫০ লাখ মানুষকে কার্ডের মাধ্যমে রেশন দেয়া হচ্ছে। করোনার কারণে আরো ৫০ লাখ লোককে রেশন কার্ড প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এক কোটি পরিবার খাদ্য সহায়তা পাবে। এই এক কোটি পরিবারে পাঁচজন করে সদস্য হলে ৫ কোটি লোক খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবে। প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মর্কতারা মনে করছেন, ত্রাণের জন্য তালিকা করার সময় ডিসি-ইউএনওরা এখনো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রাধান্য দিচ্ছেন। ডিসি-ইউএনওরা দলমত নির্বিশেষে নিরপেক্ষভাবে গরিবদের তালিকা তৈরি করতে পারলেই এই কর্মসূচি সফল হবে। অবশ্য সরকারি দলের লোকজন দিয়ে তালিকা বাতিল করে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
সরকারিভাবে মাঠপর্যায়ে ত্রাণ বিতরণের সময় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। পুরনো ধাঁচে ত্রাণ বিতরণ প্রক্রিয়ার কারণে এমনটি হচ্ছে। তা ছাড়া যাদের এখন ত্রাণ খুব প্রয়োজন, তাদের নাম সঠিক জায়গায় যাচ্ছে না। বিবিএস যদি ওই তালিকাটি করতে পারত, তাহলে ত্রাণ নিয়ে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হতো না বলে জানিয়েছেন একাধিক জেলা প্রশাসক।
গত শনিবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনা পরিস্থিতিতে মোকাবেলায় দেশের পাঁচ কোটি লোক খাদ্য সহায়তার আওতায় আসবে। করোনাভাইরাসের কারণে দেশে যাতে খাদ্য ঘাটতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। বর্তমানে ৫০ লাখ মানুষকে রেশন কার্ড দেয়া হচ্ছে। আরো ৫০ লাখ লোককে রেশন কার্ড প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অনেক সময় আমি নিজেও এসএমএস পাই, এসএমএস করে- ‘আপা আমার ঘরে খাবার নাই’। সাথে সাথে আমরা উদ্যোগ নিই। শুধু তাকে নয়, আশপাশে কোথাও কেউ কষ্টে আছে কি না, যারা হাত পাততে পারবে না। ঘরে খাবার নেই, চাইতে পারছে না। তাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার সেই ব্যবস্থাটাও করছি। মানুষের খাদ্যের অভাব যাতে না হয়, সে ব্যবস্থা সরকার করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা প্রশাসক হারুণ অর রশিদ বলেন, স্থানীয় সরকারের অধীনে ত্রাণ দেয়ার জন্য তালিকা করা হচ্ছে। আমরা সমাজসেবা অফিসার, কৃষি কর্মকর্তাসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নিচ্ছি। সরকারের নির্দেশনা অনুসারে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও তার সদস্যরা এক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন। কারণ সরকারি কর্মকর্তারা এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা নয়। নিরপেক্ষ তালিকা করতে প্রয়োজন সবার সহযোগিতা আশা করছি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ইনকিলাবকে বলেন, ত্রাণ বিতরণে আওয়ামী লীগের লোকজন তালিকা করে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দিচ্ছে। এরপর সরকারি ত্রাণ বিতরণ করা হবে। আসলে এধরনের কাজ হলে শুধু আওয়ামী লীগের লোকজনই ত্রাণ পাবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সরকার যদি ত্রাণ দেয় তাহলে তালিকা কিসের জন্য? যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের নামে কার্ড করতে পারে। অতীতে দেখা গেছে যারা সরকারি দলের নেতাকর্মী তাদেরই এ তালিকায় নাম। নতুন তালিকায়ও এ ধরনের নাম যেন না থাকে। অবশ্যই নিরপেক্ষভাবে তালিকা করা দরকার।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুসারে দেশে সার্বিক দরিদ্র্যের হার এখন ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। আর অতি দারিদ্র্যের হার নেমেছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশে। এর মানে ৪ কোটিরও বেশি মানুষ দরিদ্র, এর মধ্যে অর্ধেকের অবস্থা আরও খারাপ।
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর জেলার জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে বের হয়ে করোনায় কর্মহীন মানুষের তালিকা করতে বলা হয়েছে। সচ্ছতার জন্য কমিটিতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও মসজিদের ইমামকে যুক্ত করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।