Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হিরো ইয়াসির, ট্র্যাজিক হিরো ওকস ২০ বছর পর পাকিস্তানের লর্ডস জয়

প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : জিততে হলে ইংল্যান্ডকে গড়তে হতো নতুন রেকর্ড। তবে স্বাগতিকদের সেই সুযোগ না দিয়ে নিজেরাই গড়লো ইতিহাস। ২ দশক পর লর্ডসে টেস্ট জিতলো পাকিস্তান। ইংল্যান্ডে খেলা নিজের প্রথম টেস্টেই সেঞ্চুরি পেয়েছেন অধিনায়ক মিসবাহ। সেই রেকর্ডটি আরো উজ্জ্বল হলো দুই দশক পর ‘ক্রিকেটের মক্কা’ জয়ের আলোয়। গতকাল সিরিজের প্রথম টেস্টে এক দিন হাতে রেখেই ঐতিহাসিক জয়ের বন্দরে ভেড়ে মিসবাহর ভেলা। পাকিস্তান জেতে ৭৫ রানে।
শুরু থেকেই খেলার পরিস্থিতি, ইতিহাস- সবই ছিলো তাদের পক্ষে। জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের সামনে ২৮৩ রানের লক্ষ্য দিয়েছিলো পাকিস্তান। লর্ডসে এর আগে চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ রানের বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড মাত্র দুটি। ১৯৮৪ সালে গর্ডন গ্রিনিজের অসাধারণ ডাবল সেঞ্চুরিতে ৩৪২ রান তাড়ায় ৯ উইকেটে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর ২০০৪ সালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিলো ইংল্যান্ড। সেবারই প্রথম ইনিংসে ৩০০ করে লর্ডসে শেষ হেরেছিলো কিউইরা। আর ৬৭টি টেস্ট হওয়া ক্রিকেটের মক্কায় তিনশোর্ধ ইনিংস করে হেরেছে মাত্র তিনটি দল। বরং হেরে যাওয়ার রেকর্ডই আছে ছয়বার। ড্র হয়েছে চারটি। আর ইংল্যান্ডে মাত্র নয়টি টেস্ট জিতেছে পাকিস্তান, তিনটি লর্ডসে। এর সর্বশেষটি সেই ১৯৯৬ সালে।
যার খেলার সম্ভাবনাই ছিলো না, তিনিই বনে গেলেন হিরো। ডোপ টেস্টে পজিটিভ হয়ে নিষিদ্ধ ছিলেন ৩ মাস। অ্যাবোটাবাদে দলের বুট ক্যাম্পে বাধালেন চোট। হাঁটুর সেই চোটে ইংল্যান্ড সফরই ছিল শঙ্কায়। সব কিছু পেছনে ফেলে ঠিকই মাঠে ফিরলেন ইয়াসির শাহ। এশিয়ার বাইরে নিজের প্রথম টেস্টেই ছড়ালেন আলো। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে ইয়াসির নাম লেখালেন লর্ডসের বিখ্যাত অনার্স বোর্ডে। ত্রয়োদশ টেস্টেই পেলেন পঞ্চম ৫ উইকেটের স্বাদ। চারটি উইকেটই এলবিডবিøউ। এর দুটিতে রিভিউ নিয়ে রক্ষা হয়নি ব্যাটসম্যানের। প্রথম ইনিংসে লেগ স্পিনারে সবশেষ ৫ উইকেট ছিল সেই ১৯৭৬ সালে! পেয়েছিলেন ভারতীয় কিংবদন্তি ভগবৎ চন্দ্রশেখর। আর লর্ডসে সবশেষ কোনো লেগ স্পিনার ৫ উইকেট পেয়েছিল ১৯৯৬ সালে। ইয়াসিরের পূর্বসূরি মুশতাক আহমেদ। এই মাঠে পাকিস্তানের সেরা বোলিং ফিগারটিও ছিলো ঐ ম্যাচে ওয়াকার ইউনিসের ৮/১৩১। দ্বিতীয় ইনিংসে নিজেকে নিংড়ে দিয়ে সেই রেকর্ডটিও নিজের করে নিলেন ইয়াসির, ১০/১৪১। বিদেশী স্পিনারদের মধ্যে যা দ্বিতীয় সেরা। আগেরটি সেই ১৯৫০ সালে ক্যারিবীয়ান কিংবদন্তি সনি রামাদিনের করা ১১/১৫২।
এতো গেল এক হিরোর গল্প। এই এক ম্যাচে গল্প আছে আরেক নায়কেরও। তবে তার নামটি লেখা থাকবে ইতিহাসের ট্র্যাজিক হিরোদের তালিকায়- ক্রিস ওকস। লর্ডস টেস্টের দ্বিতীয় দিন থেকেই চলছিলো তার গতির ঝড়। যার সামনে তাসের ঘরের মত গুড়িয়ে যাচ্ছিলো পাকিস্তান ব্যাটিং প্রতিরোধ। টিকতে পারেনি প্রথম ঘণ্টাও। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট নিয়ে ওকস থেমেছেন ৬ উইকেটে। আজহারকে যখন ফেরালেন, নামের পাশে তখন লেখা হয়ে গেছে ৪০০তম প্রথম শ্রেণীর উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে আরো উজ্জ্বল তার দ্যুতি। ৩টি উইকেট নিয়ে প্রথমবারের মত এক ম্যাচে ১০ উইকেট নেয়ার কৃতিত্বও গড়ে ফেলেন এই উইকেটকিপার অলরাউন্ডার। শেষ ৫০ বছরে লর্ডসে এই নিয়ে মাত্র ৩ জনের আছে এমন কীর্তি। ১৯৭৮ সালে বোথাম, ২০১২ সালে ব্রডের পর ওকসের নামটি পেলো ক্রিকেট বিশ্ব। পরে ওহাবকে রিয়াজকেও (০) ফেরান ওকস (১১)।
তবে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই ইংল্যান্ডের ৩ উইকেট ফেলে দিয়ে ২০ বছর আগের সেই রেকর্ডটাই যেন মনে করায় পাকিস্তান। গতকাল শুরুতে কিন্তু ইয়াসির শাহ নন; আলো পুরোটাই ছিলো রাহাত আলীর ওপর। মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত ৩ উইকেটে ৯০ করছে ইংল্যান্ড। নিজের সপ্তম ও ইনিংসে ১৪ ওভারের মধ্যেই তিনি সাজঘরে ফিরিয়েছেন কুক (৮ রানে) রুট (৯ রানে) ও হালেসকে (১)। ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর পাল্টা আক্রমণে দলকে পথ দেখাচ্ছিলেন ভিন্স। সেই ভিন্সকেও প্রায় ফিরিয়েই দিয়েছিলেন রাহাত। ইউনুস দ্বিতীয় চেষ্টাতেও নিতে পারেননি ক্যাচ। অথচ ভিন্স তখন ব্যাট করছিলেন ৯ রানে, তাকে ৪২ রানে থামান ওয়াহাব। দলের বিপদশঙ্কুল সময়ে হাল ধরেন গ্যারী ব্যালান্স ও জনি বেয়ারস্টো। তবে তাদের এই বাড়াবাড়ি বুঝি পছন্দ হয়নি আগের ইনিংসের নায়ক ইয়াসিরের। একটু সময় নিলেও এই দু’জনসহ মঈন আলীকে (২) নিজের ঘূর্ণির ফাঁদে ফেলেন এই স্পিনার। ব্যালান্স থামে ৪৩ রানে, আর মাত্র ২ রানের জনব্য ফিফটি বঞ্চিত হন বেয়ারস্টো (৪৮)। পরে তাদের সাথে উইকেট শিকারীর দলে যোগ দেন নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ৫ বছর পর ক্রিকেটে ফেরা মোহাম্মদ আমির। ইংল্যান্ডের কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুঁকে দেন ৩৯ রান দিয়ে ২ উইকেট নেয়া আমিরই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
পাকিস্তান : ৩৩৯ ও ২১৫। ইংল্যান্ড : ২৭২ ও ২০৭ (৭৫.৫ ওভার) হালেস ১৬, ভিন্স ৪২, ব্যালান্স ৪৩, বেয়ারস্টো ৪৮, ওকস ২৩; আমির ২/৩৯, রাহাত ৩/৪৭, ইয়াসির ৪/৬৯। ফল : পাকিস্তান ৭৫ রানে জয়ী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ