Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চলের স্বাভাবিক জীবন ব্যবস্থা প্রায় অচল

দিনমজুর শ্রমজীবী আর কর্মজীবী মানুষের মত নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারেও দুর্ভোগ নেমে আসছে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০২০, ১:২৩ পিএম

করোনা ভাইরাসের রেস ধরে ঘোষিতÑঅঘোষিত লকডাউনে দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন এখন সম্পূর্ণ স্থবির। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের জীবন আর চলছে না। ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ছুটির মেয়াদ দু দফায় ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি পেলেও তা কত দিনে শেষহবে জানে না কেউ। নি¤œবিত্ত পরিবারের চাকা ইতোমধ্যে অচল হবার পরে মধ্যবিত্তের সংসারেও টান ধরেছে। নি¤œÑমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে নিরব হাহাকার শুরু হয়েছে আরো আগেই। কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনায় আর কোন বিকল্প না থাকায় তা মেনে নিতে হচ্ছে সকলকেই। এমনকি মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর অবস্থ্াও ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। সংসারের চাকা ক্রমশ ¯øথ হয়ে আসছে।
আইনÑশৃংখলা বাহিনী সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা সহ করোনা ভাইরাস রোধে স্বাস্থ্য বিধি কঠোরভাবে অনুসরনে দক্ষিণাঞ্চলের রাস্তায় নামলেও নারায়নগঞ্জ থেকে আসা শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষের চোরাই শ্রোত পরিস্থিতিকে ক্রমশ উদ্বেগজনক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৩০ জন কেভিড-১৯ রোগী সনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে ৩ জনের। আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলা-উপজেলার হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা ৪০ ছুই ছুই। হোম কোয়ারিন্টিনে আছেন প্রায় ৭ হাজার। যদিও ইতোমধ্যে সুস্থবস্থায় আরো প্রায় ৩ হাজার ৩শ কোয়ারিন্টিন শেষ করেছেন।
ওষুধ ও মুদি দোকানের বাইরে অন্য ব্যবসা-বানিজ্য প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ। এমনকি কাঁচা বাজারেও ক্রেতার অভাব। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট-এর তত্বাবধানে আইনÑশৃংখলা বাহিনী প্রায়ই সরকারী নির্দেশনা অনুসরনে বাধ্য করছে অবাধ্য মানুষকে । সরকারী কর্মীদের বেতন মিললেও বেসরকারী অনেক প্রতিষ্ঠানেই মার্চের বেতন হয়নি এখনো। এরই মধ্যে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান, জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরোর সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনফা প্রদান ১৫ দিন বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পরে দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক লাখ নারী ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারীÑআধা সরকারী কর্মকর্তাÑকর্মচারী সহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষও।
তবে বৈশি^ক এ সংকটে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বাভাবিক জীবন ইতোমধ্যেই সম্পূর্ণ স্থবির করে দিয়েছে। বিশেষকরে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের সমস্যা সবচেয়ে বেশী। এরই মধ্যে রোজাকে সামনে রেখে চাল, ডাল, পেয়াঁজ সহ অনেক নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি দূর্ভোগের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও গত কয়েকদিন ধরে প্রশাসন সহ বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সিমিত আকারে ত্রান বিতরন করছে। কিন্তু তা প্রকৃত চাহিদা মেটাতে পারছে না। ত্রান নিয়ে দূর্ণীতিও মানুষের ভাগ্য বিড়ম্বনা ঘটাচ্ছে। এ দূর্যোগে বরিশাল মহানগরী সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ রাস্তাঘাটেই অস্বাভাবিক স্তব্ধতা। মাঝেমধ্যে এ্যাম্বুলেন্স আর আইনÑশৃংখলা বাহিনীর গাড়ীর হুইসাল নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করলেও কোন কিছুই স্বাভাবিক নয়। জাতীয় মহাসড়কে কিছু থ্রী-হুইলার সহ পণ্যবাহী যানবাহন চলছে। তবে সর্বক্ষেত্রেই অচলবস্থা । এর কোন বিকল্পও জানা নেই কারো।
জীবন বাঁচানোর তাগিদে বর্তমান অস্বাভাবিক পরিস্থিতিকে সবাই মেনে নিলেও তা কতদিন ধরে রাখতে পারবেন সেবিষয়টি বলতে পারছেন না কেউই। তবে লক ডাউন কঠোরভাবে প্রয়োগ না করলে তা আরো প্রলম্বিত হতে পারে বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহল মহল। সেক্ষেত্রে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ না করলে চলমান স্থবিরতা থেকে মুক্তি বিলম্বিত হতে পারে। যা হয়ত পুরো সমাজ ব্যবস্থাকেই অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিতে পারে। আর এ অবস্থায় ভাল নেই দক্ষিণাঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষ। যারা সমাজের একটি বড় অংশ। সবাই বর্তমান পরিস্থিতিকে মেনে নিতে বাধ্য হলেও তা থেকে পরিত্রানে মহান আল্লাহর দরবারে পানাহ চাচ্ছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ