Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কার ছোঁয়ায় মরনঘাতি করোনায় নীল হলেন ডা: মঈন

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০২০, ৫:৪০ পিএম

মানুষকে কাঁদিয়ে হেসে হেসে বিদায় নিয়েছেন সিলেটে মানবিক ডাক্তার ডা: মঈন উদ্দিন। করোনার মধ্যে দিয়ে তার মৃত্যুর ঘটনাই আজ দুনিয়া জুড়া এক বেদনাবিদূর আলোচিত অধ্যায়। কীর্তিমানের মৃত্যু নেই, দৈহিক মৃত্যুর পরও আমজনতার কাছে বেঁচে থাকবেন তিনি নানা সুখকর, অনুকরনীয়, অনুসরনীয় স্মৃতির মধ্যে দিয়ে। জন্মের স্বার্থকতা প্রমান হয়ে গেছে তার মৃত্যুর মধ্যে। কিন্তু কার ছোঁয়ায় করোনায় নীল হয়েছেন মানবিক এ ডাক্তার এখন্ও অজানা সেই বাহক। নিশ্চিত হ্ওয়ার কোন পথও খোলেনি। আলোর বদলে ধূম্রজালে, অন্ধকারে। সংক্রমিত কোন না কোন ব্যক্তির মধ্যে দিয়েই ডা: মঈন আক্রান্ত হয়েছিলেন তাই অনস্বীকার্য। কিন্তু সেই ব্যক্তির করোনা সনাক্তের পূর্বে তিনিই আক্রান্ত হলেন সিলেটের প্রথম করোনা রোগী হিসেবে। এখনও হদিস মিলেনি, তার করোনা বাহক সেই গুপ্ত ঘাতকের। এর মধ্যে অজানা শংকা তাড়া করছে সর্বমহলে। সেই বাহকের লাগামহীন যাত্রার শেষ কোথায় ? প্রথমদিকে প্রবাসী স্বজনদের মাধ্যমে ডা. মঈনের করোনা সংক্রমিত হতে পারে বলে ধারণা করেছিলেন স্বাস্থ্য অধিপ্তরের কর্মকর্তারা। তবে এখন তাদের দাবি, ডা. মইনের প্রবাসী কোনো স্বজন দেশে আসার কোনো তথ্য তারা পাননি। কোনো রোগীর মাধ্যমেই মঈন সংক্রমিত হতে পারেন। ডা. মঈন আক্রান্ত হওয়ার পর তার পরিবার ও কর্মসস্থলের ১২ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়। তবে তাদের কারো শরীরেই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। ফলে কার মাধ্যমে সংক্রমিত হলেন এই চিকিৎসক এ প্রশ্ন আরো জোরালো হয়েছে। ডা. মঈন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া দেশের প্রথম চিকিৎসক। তিনি সিলেটের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি। ওসমানী হাসপাতালের পাশপাশি তিনি নগরীর ইবনে সিনা হাসপাতালেও রোগী দেখতেন। সেখানে চেম্বারে তিনি প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করতেন। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, ডা. মঈন আগে থেকেই তার ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ করেছিলেন। তবে ইবনে সিনা হাসপাতালের কেবিনে ৪ থেকে ৫ জন রোগী দেখেছেন তিনি । ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন রোগীও দেখেছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে একজন রোগী দেখেছেন। ওসমানীর আইসিইউতেই মারা যান সেই রোগী । আমাদের সন্দেহ ছিলো এই রোগীর মাধ্যমে মঈন আক্রান্ত হতে পারেন। তাই এই রোগী মারা যাওয়ার আগে তার নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু তার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এছাড়াও ওই চিকিৎসকের সংস্পর্শে আশা সবারই খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে। তার পরিবারের সদস্য, তার সহকারি, তার কাছে চিকিৎসা নেওয়া রোগী, তার ফার্মাসিস্ট সবার খোঁজ খবর নেওয়া সহ ্এদেও কেউই করোনাভাইরাস পজিটিভ হননি। ডা. হিমাংশু বলেন, করোনা আক্রান্ত সব রোগীর শরীরে উপসর্গ দেখা দেয় না। অনেকেরই করোনার উপসর্গ আসে না কিন্তু তিনি ভাইরাস বহন করতে পারেন। তখন ওই ব্যক্তির হাঁচি, কাশির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে ভাইরাস । এরকম কোনো রোগী বা রোগীর স্বজনের সংষ্পর্শে তিনি গিয়েছিলেন কি না তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। আমরা তার সংস্পর্শে আসা অনেকেরই খোঁজখবর নিয়েছি। তাদের মধ্যে কেউই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন। ৫ এপ্রিল ডা. মঈনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়ে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল জানিয়েছিলেন, তিনি প্রবাসী স্বজনদের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে বুধবার প্রেমানন্দ মন্ডল বলেন, কিভাবে তিনি সংক্রমিত হয়েছেন এটা সনাক্ত করা খুব শক্ত। আমরা তার পরিবার ও কর্মস্থলের ১২ জনকে টেস্ট করিয়েছি। কারো পজেটিভ ধরা পড়েনি। এছাড়া এই সময়ে সিলেটে আর কোনো রোগীও সনাক্ত হয়নি। ডা মঈন সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের বাইরেও যাননি, দেশে আসেননি তার কোনো প্রবাসি স্বজনও । জানা যায়, অসুস্থ বোধ করার পর নিজেকে হোম কোয়ারেন্টিন করে রাখেন ডা. মঈন উদ্দিন। চলতি মাসে চেম্বারে বসেন তিনি। আগে প্রতি সকালে নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকায় মর্নিং ওয়াক করলেও তাও বন্ধ রেখেছিলেন। ৫ এপ্রিল যখন তিতি করোনা আক্রান্ত হিসেবে সনাক্ত হন তখন হাউজিং এস্টেটের নিজ বাসায় ছিলেন ডা. মঈন। সেখানে শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে ৭ এপ্রিল রাতে তাকে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি করা হয়। প্রথমে হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হলেও পরে সাড়ে ১১টার দিকে কেবিনে নিয়ে আসা হয়। অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে তার শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখা হয়। তবে পরদিন ৮ এপ্রিল ঢাকায় পাঠানো হয় এই চিকিৎসককে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকাল পৌনে সাতটায় তিনি মারা যান। দু‘সন্তানের জনক ডা. মঈনের স্ত্রী ইশরাত জাহান নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত একজন চিকিৎসক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ