বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বিখ্যাত সঙ্গিত শিল্পী নচিকেতার জনপ্রিয় সেই গান ‘ও ডাক্তার’ আজ মনে পড়ছে নিশ্চয় । ‘‘কসাই আর ডাক্তার একতো নয়, কিন্তু দু’টি-ই আজ প্রফেশন। কসাই জবাই করে প্রকাশ্যে দিবালোকে, তোমার আছে ক্লিনিক আর চেম্বার।’’ নৈতিক মূল্যেবোধ দেউলিয়াত্বের প্রতিযোগিতায় সময়ে চরম বাস্তবতা উঠে এসেছে এই গানের মধ্যে দিয়ে। নেপোলিয়ন বলেছিলেন খারাপ মানুষের ভিড়ে এক বীরপুরুষ থাকে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন ‘সোনার বাংলায়, সোনার মানুষ চাই’। করোনার সাথে সমগ্র মানব জাতির যুদ্ধে, অন্যতম ভরসা সেবার প্রত্যয়ধারী ডাক্তার মঈন। কিন্তু যুদ্ধে অনেক কাপুরুষের মতো ময়দান ছেড়ে পালিয়ে গেলেও, যুদ্ধে লড়ছেন যারা তাদের একজন মানবিক ডাক্তার হিসেবে অলংকিত ডা: মঈন উদ্দিন। তিনি নচিকেতার কন্ঠে সুর তোলা সেই ডাক্তার নন, তিনি নেপোলিয়নের খারাপ মানুষের ভীড়ে সত্যিকারের বীরপুরুষ, তিনি বঙ্গবন্ধুর বাংলায় সোনার এক মানুষ। করোনা তাকে কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু গোটা ডাক্তার সমাজের ইমেজ ও অহংকারের বাতিঘর হয়ে ইতিহাসে অম্লান এখন তিনি। অসম্ভব এই মেধাবী মানুষ, অনেকের নিকট বিশ^াসী বা আল আমীন হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সুনামগঞ্জ ছাতকের দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের নাদামপুর গ্রামে হয়েছিল তার জন্ম। স্থানীয় ধারণ নতুন বাজার হাইস্কুল থেকে এসএসসি, সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করেন তিনি। পরবর্তীতে বিসিএস পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ছাতক হাসপাতালে যোগদান করেন। পরে প্রমোশন পেয়ে যোগদান করেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এছাড়া তিনি মেডিসিন বিষয়ে এফসিপিএস, কার্ডিওলজি বিষয়ে এমডি ডিগ্রী অর্জন করেন। তার বাবা মরহুম মুনসী আহমদ উদ্দিন এক পল্লী চিকিৎসক ছিলেন। ৩ বোনের একমাত্র ভাই ডা: মঈন। তার স্ত্রী ইশরাত জাহান্ও একজন ডাক্তার। ব্যস্তমধ্যে প্রতি শুক্রবার নিজ গ্রামের সাধারন মানুষেদেও ফ্রি চিকিৎসা দিতেন তিনি। নগরীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে চেম্বার করলেও এলাকার লোকজনের প্রতি ছিলেন খুবই উদার। একজন প্রকৃত ধার্মিক হিসেবে তার খ্যতি ছিল। তার পেশাগত অসাধারন মানবিক আচরনে সর্বমহলে গরীবের ডাক্তার হিসেবে প্রশংসিত হন তিনি। দুই পূত্র সন্তানের জন ডা: মঈন পেশাগতভাবে উচ্চতায় পৌছে গেলেও শেকড়ের প্রতি মায়া ও কর্তব্যহীন হয়ে স্বার্থপরতার নির্মমতা তাকে গ্রাস করেনি। সেকারনে তার পল্লী চিকিৎসক পিতার শেষ অনুরোধ অসহায় রোগীদের নিয়মিত সেবা প্রদান শিরধার্য ছিল তার জীবনে। প্রতি শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে সিলেট থেকে ছুটে যেতেনে অদূরে গ্রামের বাড়ি। বিনামূল্যে গরিব অসহায়দের দিতেন ব্যবস্থাপত্র সহ প্রয়েজনীয় সহযোগীতা। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পও করেছেন তিনি। এমন মানবিক মানুষ মানুষের সেবা করতে গিয়েই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অবশেষ মৃত্যুর কাছে হার মানলেন মানিবক এই ডাক্তার। তার মৃত্যু সংবাদে এলাকার হিন্দু মুসলিম সবাই অঝোরে কেঁদেছেন। এলাকার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক আছকির মিয়া জানান, বিনা ফ্রিতে দেখা দরিদ্র রোগীদের কেম্পানী প্রদত্ত ঔষধ বিলিয়ে দিতেন তিনি।’ এলাকার মুরুব্বী সোহেল আহমদ বলেন, ‘ডা. মঈনুদ্দিন শুধু গরিবের ডাক্তার ছিলেন না। এলাকার কোন রোগী তার সিলেট চেম্বারে গেলেও তিনি তাদের ফ্রি দেখতেন। মানুষের সঙ্গে এমন ভালো ব্যবহার করতেন যাতে রোগীর রোগ অর্ধেক কমে যেতো। নাদানপুর গ্রামের বাসিন্দা গিরিধর দাস বলেন, ‘ডা. মঈন উদ্দিন ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ। সামাজিক মাধ্যমে আমেরিকার ফ্লোরিডা প্রবাসী সাংবাদিক গোলাম সাদাত জুয়েল ‘একজন ডাঃ মইন @ আকাশ পুর্ন ভালবাসায় যার বিচরন’ শিরোনামে লেখার চম্বুক অংশ তোলে ধরলাম ‘২০০২ সাল থেকে পিতৃহীন মেধাবী ডা মইন উদ্দিন ও উনার পরিবারের গার্জিয়ান আমার শশুর আব্দুল নুর । ‘‘মেধাবী’’ শব্দটা ডিকশনারি তে লেখা হয়েছে মইন উদ্দিন এর জন্য। আর" আল আমিন" নামে আরবিতে যে শব্দটা সেটাও মইন ভাইয়ের জন্য। সারা জীবন নাকি পড়াশোনার মাঝে ডুবে ছিলেন, বাহিরের জগত থেকে ছিলেন বিচ্ছিন্ন। অসম্ভব মেধাবী, আরেকটা জিনিস খুব কম রোগী দেখতেন একজন রোগী উনার চেম্বার থেকে বের হত হাসিমুখে, কোয়ালিটি প্রাকটিস করতেন, রাতে যখন ইবনে সিনার রোগী দের ভিজিট করতেন উনার জন্য রোগীরা উদগ্রীব থাকতো, উনার ব্যবহারে রোগী অর্ধেক ভাল হত । গ্রামের বাড়িতে নিয়মিত রোগী দেখতেন ফ্রি। তারপরও তিনি বৈষয়িক ভাবে ডাক্তারী করেই স্বচ্ছল । এটা উল্লেখ করলাম, যারা রাত দিন রোগী দেখে ৩/৪ মিনিটে ৬০০/৭০০ টাকা নেন, ১৮ ঘন্টা ডাক্তারি করে তাদের কত টাকা হতে পারে। এই যে শহরের সবাই উনার প্রশংসা করছেন, তা উনার ব্যবহার ও কোয়ালিটি প্র্যাকটিসের জন্য্। তিনি বিনা ফিতে রোগী দেখতেন তার চেম্বারেও। মেডিকেল রিপ্রজেনটিভদের কে সম্মান করতেন, তাদেরও একটা কঠিন জীবন তিনি বুজতেন।’
কানাডা থেকে এম সি কলেজের উনার রুম মেট এমাদ চৌধুরী জানিয়েছেন, মাত্র দু বছরের সিনিয়র ছিলেন তিনি, কিন্তু তার সামনে চেয়ারে বসতে নাকি অস্বস্তি করতেন এই এফসিপিএস ডাক্তার মইন ।
সিলেটের অন্যতম প্রতিষ্টান লতিফ ট্রাভেলসের স্বত্তাধিকারী শিরু আহমদ জানান,উনার কাছ থেকে টিকেট কিনতেন। সেই সুবাধে যাওযা আসা ছিল ট্রাভেলস এ। পুরো ট্রাভেলস এর কারো ভিজিট নিতেন না।
যুক্তরাজ্য আ্ওয়ামীলীগের ত্রান ও সমাজকল্যান বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, সিলেট এমসি কলেজে এক সাথে পড়েছিলেন, কখনো কোন রোগি ডা: মঈনকে তার পরিচয় দিলে বিনা ফ্রিতে ব্যবস্থাপত্র দিতেন। সম্পর্কের প্রতি সম্মান জানানোর এমন উদাহরন এই সময়ে বিরল। যা বাস্তবে পালন করে দেখিয়েছেন ডা: মঈন উদ্দিন।
ডা: মঈন উদ্দিনের স্মৃতি নিয়ে লিখেছেন তার এক ছাত্র ডা. জোবায়ের। সেখানে উল্লেখ করেছেন, বেদনা ও আফসোসের কথামালা। ‘এতটা কষ্ট ও বুকফাটা আর্তনাদে আমার হৃদয় বিগলিত হবে ভাবিনি। তবে আমি কেমন যেন প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু আজই এমন খবরে আমার চোখ ভিজে যাবে ভাবিনি। অনেক কষ্ট হচ্ছে। চিৎকার করে কান্না আসছে। একজন সাদামনের সাদাসিধে পরোপকারী, লোকসেবী, মানবিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে হারালো জাতি আজ। আফসোস ! স্যার যখন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে সিলেট থেকে ঢাকা যেতে চাইলেন, এই রাষ্ট্র উনাকে একটা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিলো না। উনি কিভাবে অ্যাম্বুলেন্স ম্যানেজ করেছেন, তা আমাদের জানা।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।