Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দৈনিক ইনকিলাবে বৃদ্ধা সালমা বেগমের নিউজ প্রকাশ রাজশাহীর ডিসির নির্দেশে অর্থ ও খাদ্য সহায়তা নিয়ে ছুটে গেলেন ইউএনও

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০২০, ১:১৭ পিএম

লকডাউন উপেক্ষা করে খাবার ও ওষুধ কেনার জন্য বাড়ী বাড়ী ঘুরছে সালমা বেগম, কোন সরকারী ত্রাণ পাননি শিরোনামে দৈনিক ইনকিলাবসসহ কয়েকটি পত্রিকায় ছবিসহ ৬৮ বছর বয়সী সালমা বেগমের নিউজ প্রকাশিত হওয়ার পর নিউজটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। গত ১৫ এপ্রিল বিকাল ৪টা ৩৮ মিনিটের সময় রাজশাহী জেলার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক মোঃ হামিদুল হক নিউজের প্রতিবেদক মোঃ হায়দার আলীর সাথে মোবাইলে কথা বলেন ওই বৃদ্ধা মহিলার পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা নেন এবং তিনি গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজমুল ইসলাম সরকারকে ওই মহিলাকে খাদ্য সহায়তা ওষুধ কেনার জন্য অর্থ দেয়ার নির্দেশ দেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার সময় মহিলার মাদারপুরের বাড়ীতে গিয়ে নগদ তিন হাজার টাকা, চাউল, সোয়াবিন তেল, আলু, মসুরের ডাল, লবন, পেঁয়াজ, সাবান প্রভূতি দিয়ে আসেন। এসময় ইউএনওর সাথে ছিলেন সেনাবাহনীর ওরেন্ট অফিসার মাইনুল ইসলাম, ইউএনওর স্টাফ মোঃ আব্দুল হালিম।

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজমুল ইসলাম সরকার এ প্রতিবেদককে জানান, ডিসি স্যারের নির্দেশে অর্থ খাদ্য সহায়তা দিতে এসেছি, স্যার উনার ব্যক্তিগত অর্থ দিয়েছেন, সালমা বেগম পাওয়ার যোগ্য। আমাকেও ভাল লাগছে উনার কিছুটা উপকারে আসবে। আমি অফিসে ডেকে এ সহায়তা করতে পারতাম কিন্তু বয়স্ক, লাঠি নিয়ে চলাফেরা করেন, কষ্টের কথা বিবেচনা করে উনার বাড়ী এসেছি।

প্রকাশিত নিউজটি পাঠকদের উদ্দেশ্য তুলে ধরা হলো।
কলিং বেল বেঁজে উঠল। দরজা খুলতে দেখি ৬৮ বয়সী এক এক মহিলা, আমি বললাম কি হয়েছে আপনার, উনি বললেন আমার বাড়ীতে খাবার নেই, অসুস্থ্য ঔষধ কেনার টাকা নেই, তাই গ্রামে গ্রামে চাইতে এসেছি, আমি তাকে কিছু আর্থিক সাহায্য করে বললাম মা আপনি জানেন না ঘর থেকে বের হওয়া বারণ আছে করোনা ভাইরাসের জন্য। বের না হলে খাব কি? না খেয়ে মারা যাব, আমি প্রশ্ন করলাম আপনি সরকারের ১০ কেজি চাউল পাননি, তিনি উচ্চু স্বরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলেন না পাই নি, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা কিছুই পাই না। মিথ্যা বলবো না বাবা। আমাকে ৭ দিন আগে কে যেন ৫ চাউল, ৫ কেজি আলু দিয়ে গেছেন। ওই মহিলার নাম সালমা বেগম, স্বামী আমির বহিরা মারা গেছেন অনেক আগে। পিতার নাম এমরান আলী, বাড়ী গোদাগাড়ী পৌরসভার মাদারপুর মহল্লায় মৃত্য, আশরাফ মসলার বাড়ীর পার্শ্বে। তাকে আমি প্রতি শুক্রবার দোকানে ও বাড়ীতে ভিক্ষা করতে দেখি, উনার মত ভিক্ষকের যদি এঅবস্থা হয় তবে ত্রাণ পাচ্ছে কারা। জনপ্রতিনিধি কিংবা যারা খাবার বিতরণ করছেন তাদের প্রতি অনুরোধ করবো সালেমা বেগমের মত আর কোন ভিক্ষুক যেন সরকারী ত্রাণ থেকে ছাড়া না পড়েন, সে দিকে একটু আন্তরিকতার সাথে নজর দিবেন। আমাদের এমপি মহোদয়ের হট লাইনে যোগাযোগ করলে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন বাড়ীতে বাড়ীতে আপনি কি এব্যপারে কিছু জানেন। না বাবা জানি না, তিনি বললেন কি করলে আমি খাবার, ঔষধের টাকা পাব বলেন, আমি বললাম আপনি এ মোবাইল নম্বর দুটির মধ্যে যে কোন একটিতে কল করে বলবেন আপনার সমস্যার কথা, এমপি মহোদয় আপনার খাবার ও ওষুধের ব্যবস্থা করে দিবেন উনার লোক দিয়ে। মহিলা মোবাইল নম্বর লিখা কাগজটি খুশিতে আট খানা হয়ে আর অন্য বাড়ীতে না গিয়ে সরাসরি নিজের বাড়ীর দিকে চলে গেলেন।
পার্শ্বে ছিলেন একজন নির্মান শ্রমিক তিনি বললেন, ভাই আমরা পাব না। হাঁ পাবেন, প্রধান মন্ত্রী, মানবতার মাতা এসময় গরীব, দিনমজুরের খাবারের ব্যবস্থা করছেন। জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটো কপি নিয়ে মেয়র, উপজেলার চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর, ওয়ার্ড সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করবেন। আমাদের
এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী মহোদরের হট লাইনে যোগাযোগ করবেন, ব্যবস্থা হয়ে যাবে। গোদাগাড়ী বন্ধু ফার্মেসীর মালিকের পক্ষ থেকে তার ছেলে সাগর নিউজ প্রকাশের পর ওই মহিলাকে সাহায্য করার জন্য এ প্রতিবেদকের সাথে যোগাযোগ করেছেন।

ওষুধ কেনার ৩০০০ টাকা ও খাদ্য সহায়তা পাবার পর সালমা বেগম তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি কোন দিন ভাবতে পরিনি যে এত এত বড় বড় অফিসার দামী গাড়ী নিয়ে এসে আমাকে টাকা ও খাদ্য দিয়ে যাবেন। আমি দারুণ খুশি বলে কাঁদতে শুরু করেন। খাদ্য ও টাকার জন্য আমি অনেক বড় বড় লোকদের বাড়ীতে যাই কেউ কেউ সামান্য সাহায্য করেন, আবার কেউ দরজা না খুলেই চলে যেতে বলেন, তখন খুব কষ্ট লাগে, কান্না করি। কোন দিন আমি এত দামী সাহায্য পায়নি, তাই আমি মহা খুশি, প্রতিদিন নামাজে আল্লাহর নিকট দোয়া করবো ডিসি স্যার, ইউএনও স্যার, সাংবাদিক স্যারের জন্য। আল্লাহ তাদের দীর্ঘ জীবন দান করেন এবং আরও বড় অফিসার বানিয়ে দেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের সুস্থ্য রাখেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ