বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ক্ষুধার জ্বালা যখন আর সইতে পারছেন না তখন নিজের পছন্দের সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের তালিকা করে রিলিফের চাল দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান। এটা সহ্য করতে না পেরে ত্রাণের ২৬ বস্তা চাল লুট করেছেন প্রকৃত দুস্থরা। কুষ্টিয়ার খোকসায় লুট হয়ে ত্রাণের সেই ২৬ বস্তা চাল প্রশাসন এখনও উদ্ধার করতে পারেনি। তবে ত্রাণ বণ্টন নিয়ে গ্রামবাসী ও ইউপি চেয়ারম্যান পরস্পরবিরোধী কথা বলছেন।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে কুষ্টিয়ার খোকসার ওসমানপুর ইউনিয়নের ঘরবন্দি দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি ত্রাণের চাল ভুক্তভোগীদের ঘরে পৌঁছে দেয়ার সময় লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ইউনিয়নে এই প্রথম জিআর প্রকল্পের আওয়তায় ৪৫০ পরিবারের জন্য সাড়ে চার মেট্রিক টন চালসহ খাদ্য সামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়। শনিবার ইউএনওর প্রতিনিধি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মমিনুল হক ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বারের উপস্থিতিতে চেয়ারম্যানের প্রতিনিধিরা ওসমানপুর ইউনিয়নে রিলিফের এ চাল পৌঁছে দেয়ার কার্যক্রম শুরু করেন। কিন্তু বিকেলে ২ নম্বর ওয়ার্ডের খানপুর গ্রামে চাল বিতরণের শেষ দিকে ২৬ বস্তা চাল লুট করে নেন ক্ষুধার্ত গ্রামবাসী।
এ ঘটনার পর খোকসা থানা পুলিশের একটি দল ত্রাণের চাল উদ্ধারে অভিযানে নামে। গ্রামবাসী ত্রাণের দাবিতে পুলিশ সদস্যদের রাত পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখেন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা দুস্থদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তারা গ্রামের বিধবা ও অসহায়দের একটি তালিকা তৈরি করে থানায় ফিরে যান।গ্রামবাসী জানান, চেয়ারম্যান গ্রামের ধনী ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের নামে রিলিফ দিয়েছেন। তাই প্রকৃত দুস্থরা ত্রাণের চাল ছিনিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে।
গ্রামবাসীর সঙ্গে একমত পোষণ করে ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মঞ্জুরুল হক বলেন, চেয়ারম্যান তার দলীয় ও পছন্দের ধনী মানুষের নামে ত্রাণ দিয়েছেন। প্রকৃত দুস্থরা ত্রাণ পাননি। তারাই রিলিফের চাল লুট করেছেন।
চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান জানান, মেম্বার তার লোকদের দিয়ে ত্রাণের ২৬ বস্তা চালসহ খাদ্য সামগ্রী লুট করিয়েছেন। এ সময় এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এ কাজে সহায়তা করেন।
খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান বলেন, প্রকৃত দুস্থ যারা তারা রিলিফ লুট করে নিয়ে গেছেন। সচ্ছল লোকেরাই ত্রাণ পেয়েছে কিন্তু খেটে খাওয়া দুস্থ মানুষের নাম ওই তালিকায় ছিল না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মমিনুল হক এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ত্রাণ নেয়ার সময় ছবি না তোলায় দুস্থদের মারধর করলেন চেয়ারম্যান
(ছবি আছে )
কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রিপোর্টার
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি ত্রাণ বিতরণের সময় ছবি তুলতে না চাওয়ায় অসহায় নারী-পুরুষের সঙ্গে চরম অসদাচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই চেয়ারম্যান ত্রাণ নিতে আসা অসহায় নারী-পুরুষকে মারধর করে ভিডিও ধারণ করতে বাধ্য করেছেন।
এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন বিশ্বাস। ত্রাণ নিতে আসা অসহায় মানুষকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই চেয়ারম্যানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন।স্থানীয় সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের জন্য সরকার কর্তৃক দেশব্যাপী প্রতিটি ইউনিয়নে দুস্থদের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের জন্য সরকারিভাবে ৪৫০ জন দুস্থ নারী-পুরুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণের বরাদ্দ দেয়া হয়।
গতকাল শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সকালে বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে দুস্থ নারী-পুরুষের মাঝে নিজ হাতে সরকারি বরাদ্দের ত্রাণ বিতরণ করেন বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন বিশ্বাস। সরকারি ত্রাণ বিতরণের সংবাদ প্রচারের জন্য তিনি স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীকে আমন্ত্রণ জানান। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে দু’একজন ত্রাণ বিতরণের ভিডিও ধারণ করেন। অনেক দুস্থ ছবি তুলতে না চাওয়ায় তাদের মারধর করেন চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে দুস্থ নারী-পুরুষকে মারধর করে জোরপূর্বক ছবি তুলতে বাধ্য করেছেন তিনি। এ সময় একজন বৃদ্ধকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন চেয়ারম্যান।
ত্রাণ বিতরণে চেয়ারম্যানের এমন আচরণের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। দরিদ্রদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের এমন আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছেন সবাই।
এলাকাবাসী জানায়, চেয়ারম্যান বিশ্বাস খুবই বদমেজাজি। কথায় কথায় তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এ নিয়ে দুবার বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। কিন্তু ত্রাণ বিতরণের সময় ছবি তুলতে মারধর করা ঠিক হয়নি তার। এ ঘটনায় তার শাস্তি হওয়া উচিত।শুধু সাধারণ মানুষ নয়; খোদ দলীয় নেতাকর্মীরা ত্রাণ নিতে আসা সহজ-সরল অসহায় দুস্থ নারী-পুরুষের সঙ্গে চেয়ারম্যানের এমন আচরণের তীব্র সমালোচনা করে শাস্তি দাবি করেছেন।
কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মীর সাইফুল ইসলাম চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন বিশ্বাসের দরিদ্রদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের ছবি পোস্ট করে কঠোর সমালোচনা করেছেন। সেই সঙ্গে চেয়ারম্যানের উপযুক্ত বিচার চেয়েছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, সরকারি ত্রাণ বিতরণের সময় অসহায় মানুষকে ছবি তোলার জন্য নির্যাতন করেছেন চেয়ারম্যান। এদের পৃষ্ঠপোষক কারা জানতে চাই। এদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
ত্রাণ নিতে আসা অসহায় মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণ কি জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এমন আচরণ করেছি আমি।
এ ব্যাপারে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, বিষয়টি জেলা প্রশাসক এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন, সরকারি ত্রাণ বিতরণকালে দুস্থদের সঙ্গে একজন জনপ্রতিনিধির অসদাচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক মৃনাল কান্তি দে বলেন, ইউএনও আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তদন্তপূর্বক এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।